বরিশালে গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর চামড়া নামমাত্র দামে কিনছেন ব্যবসায়ীরা। দুই লাখ টাকার গরুর চামড়া কেনা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়। ছাগলের চামড়ার কোনো দামই দেয়া হচ্ছে না।
চামড়া ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা কয়েক বছর ধরে বকেয়া পরিশোধ না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে চামড়া ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। ৫৩ জন থেকে কমতে কমতে এবার বরিশালে মাত্র তিনজন ব্যবসায়ী চামড়া কিনছেন।
তবে গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম বেশি দেয়া হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর পদ্মাবতীর চামড়াপট্টি ঘুরে দেখা যায়, গরুর চামড়ার দাম মিললেও ছাগলেরটা বিনা মূল্যে দিয়ে যাচ্ছেন চামড়া সংগ্রাহকরা। গত বছর ছাগলের চামড়ার বিপরীতে চা, সিগারেট, পান খেতে কিছু টাকা দেয়া হলেও এবার কানাকড়িও মিলছে না।
পাইকারি বাজারে দুই লাখ টাকার বেশি দামের গরুর চামড়া কেনাবেচা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায়। দুই লাখ টাকার নিচের গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা, ৭০ হাজার থেকে লাখ টাকার গরুর চামড়া দেড় থেকে আড়াই শ টাকা এবং এর নিচের দামে কেনা গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ২০০ টাকায়।
পাইকাররা ছাগলের চামড়ার কোনো দাম দিতে না চাওয়ায় বিনা মূল্যেই তা দিয়ে গেছেন চামড়া সংগ্রহকারীরা।
বিক্রেতারা বলছেন, অন্য বছর কোরবানির পশু জবাই করার পরপরই সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়া কিনতেন। চামড়ার দাম দিতেন ৫০০ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। ছাগলের চামড়া বিক্রি হতো ২০০ থেকে ৭০০ টাকায়।
তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বর্তমানে লাখ টাকার গরুর চামড়ায় আগের বছরগুলোর ছাগলের চামড়ার দামও পাওয়া যায় না। আর গত কয়েক বছর ধরেই ছাগলের চামড়ার দাম না দেয়ায় বিনা মূল্যে পাইকারদের দেয়া হচ্ছে। না হলে ফেলে দিতে হয়।
নগরীর সাগরদী দারুসুন্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানার হাফেজ মাওলানা নুরুল আমিন জানান, দান করা ও কেনা মিলিয়ে ৪৪টি গরুর ও আটটি ছাগলের চামড়া সংগ্রহ করেন তারা। পাইকারি বাজারে নিয়ে যাওয়ার পর গরুর চামড়া জন্য ১৪ হাজার টাকা পেলেও ছাগলের চামড়ার কোনো দাম দেয়া হয়নি।
ফেরত নিয়ে গেলে পুঁতে ফেলতে হবে, তাই ছাগলের চামড়াগুলো পাইকারদের বিনা মূল্যে দিয়ে এসেছেন বলে জানান তিনি।
বরিশালের চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহসম্পাদক জিল্লুর রহমান মাসুম দাবি করেন, গত বছরের চেয়ে এবার চামড়ার দাম কিছুটা বেড়েছে। কয়েক বছর ধরে ঢাকায় ট্যানারি মালিকরা ছাগলের চামড়ায় ২০০ টাকার বেশি দিতে চান না। কিন্তু ছাগলের একটি চামড়া কিনে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকায় পাঠাতে কমপক্ষে ৩৫০ টাকা খরচ হয়। তাই ব্যবসায়ীরা ছাগলের চামড়া কিনছেন না।
তিনি জানান, স্থানীয়ভাবে চামড়ার দাম ও সংগ্রহের ওপর প্রভাব ফেলেছে পুঁজির অভাব। গত বছরের চেয়ে এ বছরের স্থানীয় বাজার থেকে ৫০ ভাগ চামড়া সংগ্রহ কম হতে পারে। গত বছর এখান থেকে সংগ্রহ ছিল আট হাজার চামড়া।