করোনা মহামারি উপেক্ষা করে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকার সোবহানবাগে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে ভিড় করছেন পাওনাদাররা। তবে লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়।
প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাহক ও পাওনাদার এই অফিসের সামনে ভিড় করছেন। ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে না পেয়ে এটির কাস্টমার কেয়ারে (০৯৬৩৮১১১৬৬৬) ফোন করছেন তারা। তবে কোনো ধরনের সাড়া না পেয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন তারা।
কোরবানির ঈদ উপলক্ষে শাটডাউন শিথিল বৃহস্পতিবার থেকে। আর এদিন থেকেই গ্রাহকের ভিড় শুরু হয়েছে ওই কার্যালয়ের সামনে। তারা ইভ্যালিকে টাকা দিয়ে পণ্য পাননি বলে অভিযোগ করছেন।
রাজধানীর ধানমন্ডির সোবহানবাগ এলাকায় ইভ্যালির কার্যালয় শুক্রবার বিকেলেও বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এদিন আগের দিনের মতো ভিড় ছিল না।
কার্যালয় ভবনে ঢুকলেই চোখে পড়ে নোটিশ, যাতে লেখা: ‘সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, কোভিড-১৯-এর বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের জন্য ইভ্যালি হোম অফিস চলমান রয়েছে। সহযোগিতার জন্য সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ- ইভ্যালি কর্তৃপক্ষ।’
নোটিশে কারও স্বাক্ষর ও তারিখ নেই। এমন নোটিশ কার্যালয়ের ছয় স্থানে ঝোলানো হয়েছে।
একই ধরনের একটি নোটিশ শুক্রবার দুপুরে ইভ্যালির ফেসবুক পেজেও দেখা যায়।
ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ বলেন, ‘সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করলেও ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তা অফিসে আসেননি। কার্যালয় বন্ধ এবং সেখানে ইভ্যালির কোনো কর্মকর্তা না থাকায় বৃহস্পতিবার গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেন।
‘ওই দিন প্রায় ৮০০ থেকে ১ হাজার গ্রাহক এই অফিসে জমা হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গ্রাহকদের বুঝিয়ে বাড়িতে পাঠায়। এ সময় কয়েকজন লোক আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন। আমরা তাদের জানাই, এখানে আমরা গার্ডের চাকরি করি। আমাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে লাভ কী।’
নিরাপত্তাকর্মী মাসুদ জানান, সর্বশেষ লকডাউন শুরু হওয়ার পর ২৭ জুন থেকেই কার্যালয় বন্ধ। এর আগে পর্যন্ত কার্যালয় খোলা ছিল। কর্মকর্তারা অফিসে আসতেন। কর্মকর্তারা তাদের ল্যাপটপ নিয়ে চলে গেছেন।
ওই নিরাপত্তাকর্মী আরও জানান, বৃহস্পতিবার ইভ্যালি অফিস না খুললেও ওই ভবনে অবস্থিত অন্য দুটি অফিস খোলা ছিল।
ইভ্যালির বন্ধ কার্যালয়ের সামনে নিরাপত্তাকর্মী অলস সময় কাটাচ্ছেন। ছবি: নিউজবাংলা
অনলাইনে অর্ডার করে পণ্য না পেয়ে বৃহস্পতিবার ইভ্যালির কার্যালয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। তিনি নিউজবাংলাকে ফোনে জানান, তিনি মোটরসাইকেল, বৈদ্যুতিক পাখাসহ প্রায় ৩ লাখ টাকার পণ্যের অর্ডার দিয়েছেন। পণ্য সরবরাহের সময় অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও একটি পণ্যও পাননি তিনি।
এই কর্মকর্তার বাড়ি ফরিদপুর। এর আগে চারবার ইভ্যালির প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন তিনি। তার অভিযোগ, ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে কাস্টমার প্রতিনিধি বলেন, অফিস খোলা আছে। তবে অফিসে এসে কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায় না। এমন অভিযোগের কথা মিডিয়াকে বলেও কোনো লাভ হয়নি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন আসাদুজ্জামান।
এ ব্যাপারে জানতে ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শুক্রবার বিকেলে নিউজবাংলা কথা বলেছে ইভ্যালির হেড অফ পিআর, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন শবনম ফারিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কার্যালয় বন্ধ নেই। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী সব কর্মী হোম অফিস করছেন। এ ছাড়া কল সেন্টার খোলা সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। পণ্য সরবরাহব্যবস্থাও চালু আছে।’
কল সেন্টারে ফোন করে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ হয়তো একটা নির্দিষ্ট সময়ে কাউকে পাননি। আর এটাকেই সাধারণ বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।’
তবে গ্রাহকদের অভিযোগ ভিত্তিতে ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ারে (০৯৬৩৮১১১৬৬৬) নিউজবাংলা একাধিকবার ফোন করলেও কেউ রিসিভ করেননি।
সরকার লকডাউন শিথিল করেছে এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে, তবু বৃহস্পতিবার ইভ্যালি অফিস খোলা হয়নি কেন এবং আগামী রোববার ইভ্যালির অফিস খোলার সম্ভাবনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে শবনম ফারিয়া বলেন, ‘আমাদের এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যে পরিস্থিতি, তাতে আমার মনে হয় না অফিসে গিয়ে কাজ করতে পারব।’
ঈদের আগে ইভ্যালির অফিস খোলার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে এখনও কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। অফিস যদি নির্দেশনা দেয়, সেটা ভিন্ন কথা।’
ইভ্যালির কার্যালয়ে যে নোটিশ দেয়া হয়েছে, তাতে কারো স্বাক্ষর ও তারিখ নেই কেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়টা আমার জানা নেই। যেহেতু আমি এই বিষয়টা জানি না, তাই এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না।’
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির সঙ্গে একে একে সম্পর্ক ছিন্ন করছে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। গত দুই দিনে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহকদের খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে, ইভ্যালির দেয়া ভাউচারে তারা আর পণ্য সরবরাহ করবে না। কারণ, তারা ইভ্যালির কাছ থেকে পণ্যের দাম পাচ্ছে না।
‘রঙ বাংলাদেশ’-এর পর পোশাকের ব্র্যান্ড জেন্টল পার্ক, ট্রেন্ডস, আর্টিসানসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ভাউচারে পণ্য সরবরাহ না করার কথা তাদের গ্রাহকদের জানিয়েছে।
এদিকে পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বকেয়া টাকার জন্য ইভ্যালির কার্যালয়ে ভিড় করছে।
এর মধ্যেই ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক একটি তদন্ত চালিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটি এক টাকা আয় করতে সাড়ে তিন টাকার বেশি ব্যয় করে। তাদের সম্পদের তুলনায় দেনা ছয় গুণ। ফলে তারা এই টাকা আদৌ পরিশোধ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
এদিকে ইভ্যালিসহ ১৪টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে সিআইডি। এর মধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকার ব্যাংক হিসাব জব্দের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।