ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ সেবা আরও সম্প্রসারণ করেছে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপ।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান এ কে এস (আবুল খায়ের স্টিল) প্লান্ট থেকে ২৬০ টন উৎপাদনক্ষমতার অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে প্রতিদিন বিনা মূল্যে ৬০০ অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে হাসপাতালগুলোতে। কোনো পরিবহন খরচও নিচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটি। জরুরি প্রয়োজনে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে একটি হটলাইন সেবাও চালু করা হয়েছে।
যখন যে হাসপাতালের অক্সিজেন প্রয়োজন, হটলাইন নম্বরে ফোন দিলেই সেখানে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মেডিক্যাল অক্সিজেনের চাহিদা। আবুল খায়ের গ্রুপ আগেই এই কার্যক্রম চালু করলেও বর্তমানে করোনা মহামারি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় অক্সিজেনসহায়তা আরও বাড়িয়েছে। আগে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ টন অক্সিজেন সরবরাহ করলেও এখন তা ৩০ টনে উন্নীত করা হয়েছে বলে এ কে এস প্লান্টের সিনিয়র ম্যানেজার ইমরুল কাদের ভূঁইয়া জানিয়েছেন।
নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের এই সেবাকে ‘মানবতার সেবার’ অংশ হিসেবে নিয়েছি। যখন-যেখানে-যার অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে, সেখানেই পৌঁছে দিচ্ছি কোনো টাকা ছাড়া। ‘
‘সিভিল সার্জন বা জেলা প্রশাসকের চাহিদাপত্র অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনা মূল্যে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এ জন্য কোনো পরিবহন খরচও নেয়া হচ্ছে না।’
দেশে মেডিক্যাল অক্সিজেনের প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান তিনটি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেন। আর ইসলাম অক্সিজেন শুধু বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বেলেন, ‘লিন্ডে বাংলাদেশ ও স্পেকট্রা অক্সিজেনকে আমরা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ টন তরল অক্সিজেন দিচ্ছি। এই তরল অক্সিজেন প্রক্রিয়াজাত করে সিলিন্ডারে ভরে তারা হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করছে ‘
‘এ জন্য অবশ্য আমরা টাকা নিচ্ছি। এই টাকা আমরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিচ্ছি।’
গত বছরের মার্চে দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে বিভিন্ন হাসপাতালে বিনা মূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতাল ও জনসাধারণের জন্য বিনা মূল্যে অক্সিজেনের সরবরাহও বাড়িয়েছে আবুল খায়ের গ্রুপ।
দেশের বৃহত্তম এই অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে এ পর্যন্ত বিনা মূল্যে রিফিল করে দেয়া হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি সিলিন্ডার।
‘যে কেউ সিলিন্ডার নিয়ে আসলে আমরা কোনো পয়সা ছাড়া রিফিল করে দিচ্ছি’ বলেন ইমরুল কাদের।
‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়াও রাজশাহী, নাটোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।’
আবুল খায়ের গ্রুপের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাড়তি চাহিদা মেটাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা। আগে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ৭ টন তরল অক্সিজেন দেয়ার সক্ষমতা প্রতিষ্ঠানটির থাকলেও, এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ টন।
আবুল খায়ের গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মজুত অক্সিজেন দিয়ে সারা দেশে এক মাসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। করোনাক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। যখন যে হাসপাতালের প্রয়োজন হবে, ফোন করলেই আমরা নিজেদের উদ্যোগে পৌঁছে দেব।’
আবুল খায়ের অক্সিজেন প্ল্যান্টের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় অক্সিজেন সংকট নিরসনে নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা উন্মুক্ত করে দেয়ার যে প্রতিশ্রুতি আবুল খায়ের গ্রুপ দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করে চলেছি আমরা। যতদিন দেশে করোনা থাকবে, অক্সিজেনের প্রয়োজন হবে, ততদিন আমরা হাসপাতালগুলোকে অক্সিজেন সরবরাহ করে যাব।’
আবুল খায়ের অক্সিজেন প্ল্যান্টের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামসুদ্দোহা বলেন, ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত আমরা বিভিন্ন হাসপাতাল ও ব্যক্তি পর্যায়ে ২০ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার বিনা মূল্যে রিফিল করে দিয়েছি। প্রতিটি ১০-২২ হাজার টাকা দামের ৫ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার গ্যাসসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও করোনা আইসোলেশন সেন্টারকে অনুদান দিয়েছি।’
বিনা মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ ও রিফিলের পাশাপাশি আবুল খায়ের গ্রুপ এ পর্যন্ত সারা দেশে ২০টি হাসপাতালে নিজস্ব খরচে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও তৈরি করে দিয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।