নানা অনিয়মে ডুবতে থাকা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পিপলস লিজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের (পিএলএফএসএল) নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনার একদিন পর মঙ্গলবার অনেকটাই চাঙ্গা এ খাতের লোকশানি কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন ব্যাংক আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে কেবল পিপলস লিজিংয়ের ক্ষেত্রেই বার বার সময় নিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে লেনদেন। পিকে হালদার কাণ্ডে কোম্পানিটি প্রায় ডুবতে বসেছিল। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড পুর্নগঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত বলেছে, এই বোর্ডের চেয়ারম্যান হবেন অবসর নেয়া কোনো বিচারপতি বা সিনিয়র আইনজীবী। আর বোর্ডের সদস্য থাকবেন একজন আইনজীবী, আমানতকারীদের মধ্যে একজন, সরকারি উচ্চ পদস্থ কোনো কর্মকর্তা এবং চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেড।
২০১৯ সালের ১৪ জুলাই থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের শেয়ার লেনদেন বন্ধের ঘোষণা করে ডিএসই। এরপর ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৮ দফায় প্রতিষ্ঠানটির লেনদেন স্থগিত করা হয়।
একইভাবে পুঁজিবাজারে লোকসানি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফার্স্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসেস লিমিটেড সময় মতো লভ্যাংশ না দিলেও দর বৃদ্ধির জোয়ারে ভাসছে।
সোমবার আদালতের এমন সিদ্ধান্তে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো নন ব্যাংক আর্থিকখাতে। লেনদেন তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটির দরও কমেনি। ৫টির দর ছিল অপরিবর্তীত। আর বাকি ১৮টি প্রতিষ্ঠানের দর বেড়েছে।
এ খাতের নানা অনিয়মের খবরে অনেক আগেই এ খাত থেকে বিনিয়োগ আগ্রহ হারিয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
২৩ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠান লোকসানি। বাকি ১৮টি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ সময়মতো লভ্যাংশ ঘোষণা না করলেও শেয়ার প্রতি আয় ইতিবাচক।
গত তিন মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২২টির দর বেড়েছে। কেবল ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে।
বিনিয়োগকারীদের ধারনা, লোকসানি এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও সজাগ হবে সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে কম দামি শেয়ার কিনে আগামীতে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে যেসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান আছে, সেগুলোর শেয়ারের দরও বাড়ে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছর শেষে লভ্যাংশ নয় বরং ডে ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে মুনাফা পাবে এমন প্রত্যাশা থেকেই বিনিয়োগ হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বেশির ভাগ বিনিয়োগকারীই লোকসান করে থাকে। তবে এসব শেয়ার নিয়ে যারা কারসাজিতে যুক্ত কেবল তারাই মুনাফা নিয়ে খারাপ শেয়ার থেকে বের হয়ে যায়।
শেয়ার প্রতি লোকসান বেশি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে
কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ১১ টাকা ৩৮ পয়সা লোকসানে থাকা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্স সার্ভিসেস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৫ টাকা ৮০ পয়সায়। ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর ছিল ৪ টাকা ২০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৩৮.০৯ শতাংশ।
শেয়ার প্রতি ৮ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসানে থাকা ফার্স্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৬ টাকা ১০ পয়সা। গত ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর ছিল ৪ টাকা ৩০ পয়সা। এই সময়ে এর শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা বা ৪১.৮৬ শতাংশ।
শেয়ার প্রতি ৪ টাকা ৭৯ পয়সা লোকসানে থাকা বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স লিমিটেডের গত ১৫ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩ টাকা ৮০ পয়সা। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫ টাকায়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ১ টাকা ২০ পয়সা বা ৩১ দমমিক ৫৭ শতাংশ।
ফার্স্ট ফিন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার প্রতি ২ টাকা ৩০ পয়সা লোকসানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৬ টাকা ৭০ পয়সা। ২৮ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ৬ টাকা ১০ পয়সা। এ সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৬০ পয়সা বা ০৯.৮৩ শতাংশ।
শেয়ার প্রতি ১ টাকা ৭০ পয়সা লোকসানে থাকা ফারইস্ট ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ২৯ এপ্রিল দর ছিল ছিল ৩ টাকা ৩০ পয়সা। মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ৯.০৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ টাকা ৮০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে দেড় টাকা বা ৪৫.৪৫ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ন্যাশনাল হাইজিংয়ের
এ সময়ে নন ব্যাংক আর্থিক খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে ন্যাশনাল হাউজিং লিমিটেডের। মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৪৫ টাকা ৫০ পয়সা। ৪ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ২৮ টাকা ২০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১৭ টাকা ৩০ পয়সা বা ৬১.৩৪ শতাংশ।
জিএসপি ফিন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২১ টাকা ২০ পয়সা। ৪ এপ্রিল যা ছিল ১৩ টাকা ৬০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ৫৫.৮৮ শতাংশ।
প্রিমিয়ার লিজিংঅ্যান্ড ফিন্যান্স লিমিটেডের মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৮ টাকা ৪০ পয়সা। ৪ এপ্রিলে শেয়ার প্রতি দর ছিল ৫ টাকা ৪০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ টাকা বা ৫৫.৫৫ শতাংশ।
ইসলামী ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা ২০ পয়সা। ৪ এপ্রিল যা ছিল ১৪ টাকা ৬০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৭ টাকা ৬০ পয়সা বা ৫২.০৫ শতাংশ।
ফিনিক্স ফিন্যান্সের শেয়ার শেয়ার লেনদনে হচ্ছে ৩২ টাকা ২০ পয়সায়। ৮ এপ্রিল ছিল ২১ টাকা ৮০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা বা ৪৭.৭০ শতাংশ।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ১০ পয়সা। ৫ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ২৪ টাকা ৯০ পয়সা। এ সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ১০ টাকা ২০ পয়সা বা ৪০.৯৬ শতাংশ।
প্রাইম ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১২ টাকা ১০ পয়সা। গত ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ছিল ৮ টাকা ৬০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে সাড়ে তিন টাকা বা ৪০.৬৯ শতাংশ।
ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ এর শেয়ার লেনদনে হয়েছে ১১৩ টাকা ৭০ পয়সা। ৪ এপ্রিল যা ছিল ৮০ টাকা ৯০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩২ টাকা ৮০ পয়সা বা ৪০.৫৪ শতাংশ।
বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৬ টাকা ১০ পয়সা। গত ৪ এপ্রিল শেয়ার দর ছিল ১৮ টাকা ৬০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৭ টাকা ৫০ পয়সা বা ৪০.৩২ শতাংশ।
ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭ টাকা ৪০ পয়সা। ৪ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ৫ টাকা ৬০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা বা ৩২.১৪ শতাংশ।
মাইডাস ফিন্যান্সের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা। ৪ এপ্রিল শেয়ার দর ছিল ১৪ টাকা ৮০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৪ টাকা ৪০ পয়সা বা ২৯.৭২ শতাংশ।
আইপিডিসি ফিন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা। ১২ এপ্রিল যা ছিল ২২ টাকা ২০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা ৩০ পয়সা বা ২৩.৮৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮ টাকা ৯০ পয়সা। ৪ এপ্রিল শেয়ার প্রতি দর ছিল ২৮ টাকা ১০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ২০ টাকা ৮০ পয়সা বা ৭৪.০২ শতাংশ।
আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮ টাকা ৩০ পয়সায়। ৪ এপ্রিল যা ছিল ৪৮ টাকা ৫০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ টাকা ৮০ পয়সা বা ২০.২০ শতাংশ।
ইউনাইটেড ফিন্যাস লিমিটেডের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ১৬ টাকা ৫০ পয়সা। ৪ এপ্রিল যার দর ছিল ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা বা ১৮.৭০ শতাংশ।
উত্তরা ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। ১৯ এপ্রিল দর ছিল ৩৫ টাকা ৩০ পয়সা। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩০ পয়সা বা দশমিক ৮৪ শতাংশ।
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিংয়ের শেয়ার মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে ৭৪ টাকা ১০ পয়সা। ২০ জুন শেয়ার দর ছিল ৭৫ টাকা ১০ পয়সা। এই সময়ে শেয়ার দর কমেছে ১ টাকা।