মেরুল বা্ড্ডার কাঁচাবাজারে রোববার সন্ধ্যায় ১০-১৫ জনের মতো ক্রেতা। মুদি বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর লকডাউন ঘোষণার পর যেমন কাড়াকাড়ি পড়ছিল, এবার তা একেবারেই নাই। বাজারে মানুষের চাপও আগের মতো নাই। দুই দিন একটু ছিল, এখন তাও নাই।’
সরকার সর্বাত্মক লকডাউন তিন দিন পিছিয়ে সোমবারের বদলে বৃহস্পতিবার করায় বাজারে ক্রেতার চাপ কমে গেছে।
মুদি পণ্যের মধ্যে চালের দাম বেড়েছে উল্লেখ করে মেরুল বাড্ডা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা নাসির উদ্দিন বলেন, ‘চালের দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়েছে। খুচরায় কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে। আগে মিনিকেট বিক্রি করছি ৫৮ টাকায় এখন ৬০ টাকা। বিআর-২৮ চাল ছিল ৪৮ টাকা, এখন ৫০ টাকা। তেল তো আগে থেকেই ১৫৩ থেকে ১৫৫ টাকা লিটার।’
মুরগি বিক্রেতার মো. আনোয়ার বলেন, ‘গতবার মুরগির দাম যেমন বাড়ছিল এবার বাড়ে নাই। ব্রয়লার এখনও ১৩৫ টাকা, পাকিস্তানি কক ২২০ টাকা। দুই দিন ধইরা কম কাস্টমারই দুইটার বেশি মুরগি কিনছে।’
এ বাজারের ক্রেতা বেসরকারি চাকরিজীবী মাহিন হায়দার বলেন, ‘শুধু শুধু বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ে লাভের চেয়ে বরং ক্ষতিই বেশি। আমি তো সারা মাস ধরে শুধু মুরগিই খাব না। ১০-১২টা মুরগি কিনে ফ্রিজে ভরে কী লাভ? মুরুগির বিকল্প ডিম-মাছ আছে। বাজারে মুরগি না থাকলে দুই-চার বেলা মাছ-ডিম খাব, সবজি খাব।’
সবজির দাম বাড়ায় বিক্রি অনেক কমেছে বলে জানান এ বাজারের সবজি বিক্রেতা আক্তার হোসেন।
মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট জামে মসজিদের সামনের মাঠের অস্থায়ী বাজারে ক্রেতা ছিলেন হাতেগোনা। সবজির দাম বাড়তি, কিন্তু ক্রেতা কম থাকায় আগের চেয়ে কম লাভে পণ্য বিক্রি করছেন বলে জানান বিক্রেতারা।
এ বাজারে সবজি বিক্রেতা মো. সবুজ হোসেন জানান, ‘শুক্র ও শনিবার কাস্টমার একটু বেশি ছিল। আইজ (রোববার) তাও নাই। তবে সবজির দাম বাড়ছে দেখইখাও কাস্টমারে সবজি কম কিনতাছে। যাগো খুব দরকার পড়তাছে, তারাই বাজারে আসতাছে।’
তিনি প্রতিকেজি কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, চিচিংগা ৫০ টাকা, উচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, বেগুন ৬০ টাকা, সাধারণ মানের টমেটো ৫০ টাকা, আমদানি করা বড় টমেটো ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন বলে জানান।
দাম বাড়া-কমা নিয়ে তিনি বলেন, ‘সবজির বাজার এক সপ্তাহ বাড়ব-বাড়ব করছিল, দুই দিন ধরে বেশি বাড়ছে। সকালে কারওয়ান বাজারে প্রথমে মরিচের পাল্লা (৫ কেজি) চাইল ১০০ টাকা। দাম বেশি বইলা কিনি নাই। অন্য কয়টি সবজি কিইন্যা আবার মরিচ কিনতে গেলাম, চাইল ১৪০ টাকা। দাম কমবো চিন্তা কইরা এবারও কিনি নাই। দাম কমে না দেইখা শেষে ১৭০ টাকায় পাল্লা কিনতে হইল। পরে মরিচই নাই বাজরে। দুই দিন আগেও মরিচের পাল্লা ছিল ৮০ টাকা।’
অন্য সবজির দাম বেড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দিন আগে ঢেঁড়সের পাল্লা কিনছি ১১০ টাকায়। আইজ কিনলাম ১৭০ টাকায়। কিন্তু বেচছি কেজি ৪০ টাকা, লাভ কম। ঝিঙ্গা বাজারে নাই, ধুন্দল বাজারে নাই। যে কয়টা আসছে, আড়তদারা যে দাম চায়, কেউ দাম করার পারে না। প্রায় সব সবজিতেই কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়ছে।’
একই বাজারের অপর বিক্রেতা মো. রিপন বলেন, ‘গত কালের চেয়ে কাস্টমার কম। তবে আগের চাইতে একটু বেশি। লকডাউনের খবরে আগে থেইকা দাম একটু বাড়ছে। তবে পেঁয়াজের বাজার ভাল না। গত সপ্তাহের শুরুতে ৫৫ টাকাও উঠছে, পরে আবার কমছে। এখন প্রতিকেজি ৫০ টাকায় বিক্রি, কেজিতে ২-৩ টাকা লাভ করি। ২২ টাকার আলুও ২৫ টাকা হইছে। বড় রসুন ১৩০ টাকা, দেশি ছোট রসুন ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। আদার দাম একটু কমছে ১৫০ টাকা। তয়, দাম আবার বাড়ব, বাজারে আদাই পাই নাই।’
বাজারের পাশের রুবেল স্টোরের মালিক মো. ফারুক বলেন, ‘এবার বাজারে বেশি মানুষ ঝাপায়া পড়ে নাই। যা একটু ছিল পাইকারি বাজারে। সকালে দেখলাম পাইকারি বাজারে অনেক কাস্টমার। তারা আমাগো মতো ব্যবসায়ী না। এমনেই কাস্টমার। পেঁয়াজ-আলু এক-দুই পাল্লা করে কিনছে। পেঁয়াজ-আলু একটু দাম বাড়ছে। বস্তায় আলুর দাম বাড়ছে ৮০ টাকা, তাই কিনি নাই। দোকানে এক বস্তা আছে তা দিয়া চালাচ্ছি।’