বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিল আল হাসান পুঁজিবাজারের সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসেবে যুক্ত হলেন এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংকের অষ্টম বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম)।
শনিবার অনলাইন প্ল্যাটফর্মে হয় ব্যাংকটি এজিএম। এতে ২০২০ সালের জন্য ঘোষিত লভ্যাংশ চূড়ান্ত করা হয়।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমালের সভাপতিত্বে সভায় পরিচালক, উদ্যোক্তা, শেয়ারহোল্ডার এবং ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম আউলিয়াসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।
সভায় বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সাকিব। যুক্তরাষ্ট্রে ছুটি কাটানো বাংলাদেশ ক্রিকেটের উজ্জ্বলতম এই তারকা যুক্ত হন সেখান থেকেই।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি ব্যাংকটি আরও ভালো করবে, বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন। সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে, এই প্রত্যাশা করছি।’
সম্প্রতি পুঁজিবাজারে ব্রোকারেজ হাউসের (অনুমোদিত শেয়ার কেনাবেচার হাউস) ব্যবসা শুরু করেছেন ক্রিকেটের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তার মালিকানায় রয়েছে মোনার্ক হোল্ডিং। এ ছাড়া তিনি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির শুভেচ্ছাদূত। তবে তিনি আগে থেকেই শেয়ার কেনাবেচা করেন। সাধারণ বিনিয়োগকারী হিসেবে কোনো কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় এর আগে দেখা যায়নি।
সাকিব বলেন, ‘এনআরবিসি ব্যাংকে বিনিয়োগ করে আমরা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হয়েছি। এই ব্যাংকের পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন দক্ষ ও সফল প্রবাসী উদ্যোক্তারা। সঠিকভাবে পরিচালনার কারণে খেলাপি ঋণ অনেক কম।’
এনআরবিসির এজিএমে যারা অংশ নিয়েছেন
সাকিবের এই বক্তব্যের বিষয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সাকিব বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। কিন্তু খেলা আর পুঁজিবাজারের ব্যবসা এক জিনিস নয়। একটি কোম্পানির প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অনেক জিজ্ঞাসা থাকে, যা বার্ষিক সাধারণ সভায় বলার সুযোগ হয়।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকটি পুঁজিবাজারে নতুন। এর শেয়ারপ্রতি দর নিয়েও প্রশ্ন আছে। এখন সাকিবের কথার মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যে জিজ্ঞাসা সেটি যেন ঢাকা পড়ে না যায়।’
এজিএমে ২০২০ সালের জন্য সাড়ে ১২ শতাংশ লভ্যাংশ অনুমোদন করেন শেয়ারহোল্ডাররা। এর মধ্যে নগদ লভ্যাংশ সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার।
সভায় জানানো হয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে এনআরবিসি ব্যাংক আর্থিক সূচকগুলোতে অগ্রগতি হয়েছে। ব্যাংকের আমানত ৭ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা থেকে সাড়ে ২৫ শতাংশ বেড়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ১৭ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির ঋণদান বেড়েছে ২০.৬৭ শতাংশ। গত বছর শেষ ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা; আগের বছর যা ছিল ৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। নিট মুনাফা ১১৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩৪ কোটি টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩১ পয়সা।
ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার মাত্র ২.৯৩ শতাংশ। ১২.৫২ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করে আর্থিক শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে ব্যাংকটি।
এজিএমে ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, ‘এনআরবিসি ব্যাংক শুধু একটি লাভজনক নয়, এটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও। সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ব্যাংকটি কাজ করছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প চালু করেছে, যার উদ্দেশ্য প্রান্তিক পর্যায়ের অন্তত এক লাখ মানুষকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা।
এনআরবিসি ব্যাংক চলতি বছরের ২২ মার্চ লেনদেন শুরু করে। শুরুতে শেয়ারদর নিয়ে বিনিয়োগকারীরা হতাশ ছিলেন। একপর্যয়ে শেয়ার দর ১১ টাকা ৬০ পয়সাতে নেমে আসে। অথচ নতুন শেয়ার তালিকাভুক্ত হলে তিন বা তার চেয়ে বেশি গুণ দাম হয়ে যাওয়া কোনো ঘটনাই না।
তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে চমক দেখায় এনআরবিসি। ১১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে একপর্যায়ে ৪০ টাকাতেও দাম উঠে যায়।
বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন হয়েছে ৩৩ টাকা ৯০ পয়সায়।