৫ এপ্রিল থেকে চলমান লকডাউনে যে নীতিতে চলেছে পুঁজিবাজার, সোমবার থেকে শাটডাউনেও তার ব্যতিক্রম হবে না। অর্থাৎ ব্যাংক চালু থাকলে পুঁজিবাজারের লেনদেনও চলবে।
তবে লেনদেন চালু থাকলে বিনিয়োগকারীদেরকে ব্রোকারেজ হাউজে যেতে দেয়া হবে না। লকডাউনের শুরুতে যেভাবে অনলাইনে বা ফোনে অর্ডার দিয়ে লেনদেন চলেছে, সেভাবেই চলবে।
শাটডাউনে ব্যাংক চললে সেটি স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম সময় চালু থাকবে বলেই ধারণা করছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সে ক্ষেত্রে পুঁজিবাজারে লেনদেনের সময়ও কমতে পারে বলে ধারণা করছে তারা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টা মানি মার্কেটের সঙ্গে রিলেটেড। যদি ব্যাংক খোলা থাকে তাহলে আমরা খোলা রাখব, আর ব্যাংক বন্ধ করে দিলে আমরা বন্ধ রাখব।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু এখনও কিছু জানায়নি, তাই আমাদের মধ্যেও আলোচনা হয়নি। তবে আমাদের তো আগেই ঘোষণা করা আছে যে, ব্যাংক চালু থাকলে পুঁজিবাজার চালু থাকবে। এবারও অন্যথা হওয়ার কারণ নেই।’
সরকার এরই মধ্যে জানিয়েছে, সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ থাকবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। বন্ধ থাকবে অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সব কিছু।
- আরও পড়ুন: শাটডাউনেও ব্যাংক খোলা রাখার ইঙ্গিত
কী কী বিধিনিষেধ সেটি শনিবার প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করা হবে। তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, ‘বাজেট পাসের জন্য জাতীয় রাজস্ববোর্ডসহ প্রয়োজনীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সীমিত সময়ের জন্য খোলা থাকবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য এবারও ব্যাংক খোলা রাখার ইঙ্গিত মিলেছে।
ব্যাংককে জরুরি সেবা হিসেবেই দেখা হয়। আর সাধারণ ছুটির দিনগুলো ছাড়া এই সেবা কখনও বন্ধ ছিল, এমন উদাহারণ পাওয়া যায় না।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর দিন থেকেই ব্যাংক চালু ছিল। ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন শুরুর পর প্রথমে নির্দেশ আসে ব্যাংকও বন্ধ থাকবে। কিন্তু পরে সে নির্দেশনা পাল্টে উল্টো লেনদেনের সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়।
শাটডাউনের ঘোষণা দেয়ার আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সারা দেশে যদি শাটডাউন হয়, তাহলে ব্যাংকিং কার্যক্রমের বিষয়ে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হবে। তবে করোনার পর এখন পর্যন্ত ব্যাংকিং কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সীমিত করা হয়েছে। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে তার সঙ্গে সমন্বয় করেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
‘জরুরি সেবার আওতায় ব্যাংক খোলা থাকলে সেটা কি চলতি নির্দেশনা অনুযায়ী চলবে, নাকি আবার নতুন করে নির্দেশনা জারি হবে সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
২০২০ সালের ২৬ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার।
গত ৫ এপ্রিল লকডাউন শুরুর আগে আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলে বিশেষ করে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে লেনদেন করেছেন, তারা বিপাকে পড়তে পারতেন। এ কারণে তারা কম দামে শেয়ার বিক্রি করে দেয়ায় পুঁজিবাজার নিয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসার আগের দিন পৌনে দুইশ পয়েন্টের বেশি সূচকের পতন হয়।
- আরও পড়ুন: সোমবার থেকে শাটডাউন
তবে লকডাউন চলাকালে পুঁজিবাজার দেখায় ভেলকি। পুঁজিবাজার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। আর তিন মাসেরও কম সময়ে সূচক বাড়ে প্রায় ৮০০ পয়েন্ট। লেনদেন চার থেকে পাঁচ গুণ হয়ে যায়।
এ কারণেই গত বৃহস্পতিবার সরকার আবার কঠোর বিধিনিষেধ আসতে পারে বলে জানানোর পর পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট ফেসবুক গ্রুপগুলোতে আলোচনা কম। আর আতঙ্ক যে কমেছে, সেটি নানা জনের পোস্ট দেখেই স্পষ্ট।