বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংক, বিমা, বস্ত্রের সম্মিলিত উত্থানে ফিরল স্বস্তি

  •    
  • ২৪ জুন, ২০২১ ১৪:৪৩

ব্যাংক খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টি, বিমা খাতের ৫০টির মধ্যে ৪৭টি, বস্ত্র খাতের ৫৮টির মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে। আগের দিন বিমা খাতের ৪৭টি, ব্যাংক খাতের ২৪টি আর বস্ত্র খাতের ৪২টি কোম্পানি দর হারিয়েছিল।

টানা কয়েক দিন পর ব্যাংক ও বিমা খাত আর এক দিনের বিরতি শেষে বস্ত্র খাতের শেয়ার দর বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে সূচক বাড়ল ৫০ পয়েন্টেরও বেশি। সেই সঙ্গে কাটল শঙ্কা, আগের দিনের বড় পতনের কারণে বিনিয়োগকারীদের মনে যে ভয় ধরেছিল, সেটিও কাটল খানিকটা।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সাধারণ সূচক বাড়ল ৫৬ পয়েন্ট। ফলে আগের দিন হারানো ৬৯ পয়েন্টের বেশিরভাগই ফিরে পেল পুঁজিবাজার।

এদিন ব্যাংক খাতে ৩১টি কোম্পানির মধ্যে ২৮টি, বিমা খাতের ৫০টির মধ্যে ৪৭টি, বস্ত্র খাতের ৫৮টির মধ্যে ৩৮টির দাম বেড়েছে।

আগের দিন বিমা খাতের ৪৭টি, ব্যাংক খাতের ২৪টি আর বস্ত্র খাতের ৪২টি কোম্পানি দর হারিয়েছিল।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই উত্থানটা পুঁজিবাজারে আস্থার জন্য জরুরি ছিল। বাজারে লেনদেন বেড়ে চলা, গত ৩০ মে সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাধারণ সূচক ছয় হাজার পয়েন্টে পৌঁছার পর বাজারে যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, সেটি কাম্য ছিল না।

৬ হাজার ৩০০ পয়েন্ট পর্যন্ত পুঁজিবাজারে একটি শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিক বাধা আছে বলে ধারণা করা হয়। ২০১৭ সালেও পুঁজিবাজার এই বাধা অতিক্রম করতে পারেনি। তবে এবার প্রায় এক মাস ধরে পুঁজিবাজার ছয় হাজার পয়েন্টে স্থির থাকা নিয়ে সেই বাধা অতিক্রম করতে পারে কি না, সেটি পর্যবেক্ষণও করছেন বিনিয়োগকারীরা।

আরেকটি ভালো দিক হচ্ছে, সূচক উঠানামাতেও লেনদেন খুব একটা কমছে না। দুই হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হচ্ছে হাতে গোনা দুই এক দিন। যদি উত্থানের দিন বৃহস্পতিবার লেনদেন ৪০৫ কোটি টাকারও বেশি কমেছে।

টানা দুই দিন দরপতনের পর শঙ্কা নিয়েই শুরু হয় দিনের লেনদেন। ৩৬ মিনিটের মধ্যে সূচব ৩৪ পয়েন্ট কমে যাওয়ায় তৈরি হয় ভীতি। তবে সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। শেষ পর্যন্ত সূচকের অবস্থান দাঁড়ায় ৬ হাজার ৯২ পয়েন্ট।

সূচক বাড়ার দিন বিনিয়োগকারীরা বাড়তি দামেও শেয়ার বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না বহু বিনিয়োগকারী। দাম আরও বাড়বে ভেবে ধরে রেখেছেন তারা। এ কারণে লেনদেন গেছে কমে। দিন শেষে হাতবদল হয়েছে এক হাজার ৫৯৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

আগের দিন সূচক পতনের দিন হাতবদল হয়েছিল দুই হাজার কোটি ৩০ কোটি ৩ লাখ টাকা। এই হিসেবে লেনদেন কমেছে ৪০৫ কোটি টাকা।

ব্যাংক খাত

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে প্রত্যাহার চেয়ে বেশি লভ্যাংশ, মহামারির বছরে আশাতীত আয়, চলতি বছর আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা-কোনো কিছুই এই খাত নিয়ে এক দশকের হতাশা দূর করতে পারছে না।

তবে মাঝেমধ্যে উত্থান হয় না, এমন না। কিন্তু দুই দিন বেড়ে তিন দিনের পতনে আগের অবস্থানে ফেরার চক্র থেকে বের হতে পারছে না ব্যাংক খাত।

দিনের শুরুটাও হয়েছিল পতন দিয়েই। তবে পরে ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পেয়েছে এমন ১০টি কোম্পানির মধ্যে ব্যাংক খাতের ডাচ বাংলা এবং ২০টি কোম্পানির মধ্যে আরও আছে রূপালী ব্যাং ও এবি ব্যাংক।

এর মধ্যে দিনে দামের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে ডাচ বাংলা ও রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর। আর এবি ব্যাংকের দাম বাড়ে ৭.৯৭ শতাংশ।

এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে তলানিতে পড়ে থাকা এনবিএলের লভ্যাংশ ঘোষণার তারিখ ঘোষণার পর দিন দাম বেড়েছে ৬.৪৯ শতাংশ। এর বাইরে প্রাইম ব্যাংকের দর ৪.৫৪, এনসিসি ব্যাংকের ৩.৫৭, যমুনা ব্যাংকের দর ৩.৪৪, আইএফআইসির দর বেড়েছে ৩.২২ শতাংশ।

দর বৃদ্ধির এই খাতে হতাশ কমেছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, যার দাম কমেছে ১০ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংক এশিয়া ও উত্তরা ব্যাংকের দাম ছিল অপরিবর্তিত।

বাজারে লেনদেন কমলেও ব্যাংক খাতে বেড়েছে। আগের দিন এই খাতে লেনদেন ১১৭ কোটি টাকা থাকলেও সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে তা বেড়ে হয় ১৯৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

পতন থামল বিমায়

টানা প্রায় এক সপ্তাহের টালমাটাল অবস্থায় এই খাতের শেয়ারধারীদের পকেট ফাঁকা করে দিয়েছিল। পতন থামার পাশাপাশি দামে উত্থানে তারা আস্থা বিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। হারানো টাকাও কিছুটা ফিরে এসেছে।

সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ১০ কোম্পানির দুটি ও ২০ কোম্পানির ছয়টি ছিল বিমা খাতের। এর মধ্যে শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রিলায়েন্স ও গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের দর। গত কয়েক দিনে ৩০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি দর হারিয়ে ফেলা কোম্পানি দুটিই প্রায় ১০ শতাংশ দর ফিরে পেয়েছে।

রিলায়েন্সের দর ৮৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯২ টাকা ৭০ পয়সা, অন্যদিকে গ্রিনডেল্টার দাম ১০৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা।

অন্যান্য কোম্পানির মধ্যে এক দিনে দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায় উঠে সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্সের দাম। এছাড়া ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের ৯.৩৬, প্রগতির ৮.২২, পূরবী জেনারেলের ৭.৭৯, বিআইএনসিএলের ৭.১৭, এশিয়ানের ৬.৮৯, ক্রিস্টালের ৫.৪৬, সন্ধানীর ৫.৩, এক্সপ্রেসের ৫.১৮, প্রাইমের ৫.১২, ইসলামীর ৪.৯৯, ফিনিক্সের ৪.৯৮, রূপালীর ৪.৯৬, মার্কেন্টাইলের ৪.৮৮ শতাংশ দাম বেড়েছে।

বুধবার পতনের দিন রেকর্ড ডেটের কারণে রক্ষা পাওয়া নর্দার্ন ইন্স্যুরেন্স ২ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৬৬ এবং সেদিন দাম বৃদ্ধি পাওয়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স দর হারিয়েছে ২ টাকা বা ১ শতাংশ।

আর রিপাবলিকের লেনদেন বন্ধ ছিল রেকর্ড ডেটের কারণে।

দাম বৃদ্ধির দিন লেনদেন কমেছে এই খাতে। হাতবদল হয়েছে মোট ১৮৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকার শেয়ার। আগের দিন দরপতনের দিন লেনদেন হয়েছিল ২১০ কোটি টাকা।

সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বস্ত্র খাতেই

গোটা সপ্তাহেই লেনদেনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে এই খাত।

জুন ক্লোজিংয়ের কারণে এরই মধ্যে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের জায়গা তৈরি করেছে কোম্পানিগুলো। বৃহস্পতিবার এ খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি স্থান করে নিয়েছে দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির তালিকায়। শীর্ষ দশের পাঁচটিই ছিল বস্ত্র খাতের।

লেনদেনে বস্ত্র খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে কাট্টালি টেক্সটাইলের ৯.৯৭ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ার দর ৩০ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৩ টাকা ১০ পয়সা।

ওটিসি মার্কেট থেকে মূল মার্কেটে ফেরা মুন্নু ফেব্রিক্সের শেয়ার দর বেড়েই চলেছে। আবারও দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণে দাম বেড়ে শেয়ার দর ২৩ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা ৬০ পয়সা। দাম বৃদ্ধি হার ৯.৮৭ শতাংশ।

এ ছাড়া সোনারগাঁও টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮২ শতাংশ। মালেক স্পিনিংয়ের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৮১ শতাংশ। এসকোয়য়ার টিট কম্পোজিটের দামও বেড়েছে ৯.৭৮ শতাংশ।

এই খাতে সবচেয়ে বেশি কমেছে হাওয়েল টেক্সটাইলের দাম। ৩.০২ শতাংশ বা ১ টাকা ৩০ পয়সা হারিয়েছে কোম্পানিটি। এ ছাড়া কোনো কোম্পানিই ২ শতাংশের বেশি দাম হারায়নি।

লেনদেনের শীর্ষে থাকা খাতটিতে মোট হাতবদল হয়েছে বস্ত্র খাত ৪৩৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে সামান্য কম, যদিও শতকরা হারে বেশি।

বুধবার হাতবদল হয়েছিল ৪৭৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা ছিলে দিনের ২৩ শতাংশ। তবে আজ লেনদেনের ২৭.৪৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।

আগ্রহ ধরে রাখতে পারল না মিউচ্যুয়াল ফান্ড

বুধবার বড় পতনেও শক্তিশালী অবস্থানে ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড। একটিও সেদিন দর হারায়নি, সর্বাধিক দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির মধ্যে ছিল একটি।

৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ৩০টির অর্থবছর শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ জুন। তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাপক মুনাফা ও চতুর্থ প্রান্তিকে ৭৫০ পয়েন্টের বেশি সূচক বাড়ার কারণে আরও বেশি আয়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে এই খাতে। এ কারণে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়ছে। যদিও অন্যান্য খাতের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে না দাম।

বুধবার বাড়ার পর বৃহস্পতিবারই দেখা গেছে উল্টো চিত্র।

এদিন সবচেয়ে বেশে যে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে সেটি হচ্ছে আইএফআইএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান, যার ইউনিটি প্রতি দর বেড়েছে মাত্র ১.৪৭ শতাংশ।

এছাড়া আইসিবি এএমসিএল থার্ড এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ১.৪৫ শতাংশ। ইবিএল এনআরবি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ১.৪৩ শতাংশ।ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ১.২৩ শতাংশ।

বেশিরভাগ ফান্ড দর হারালেও শতকরা হারের দিক থেকে খুব বেশি অবশ্য কমেনি। ফিনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের সবচেয়ে বেশি দর পতন হয়েছে ২.৬৫ শতাংশ। এলআর গ্লোবাল বাংলাদেশ মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ান এর দর পতন হয়েছে ২.৫৩ শতাংশ।

প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর পতন হয়েছে ২.৪৪ শতাংশ। সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামী মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর হারিয়েছে ২.২৪ শতাংশ।

লেনদেনও কমেছে। আগের দিন ৯০ কোটি টাকা হাতবদল হওয়া এই খাতে আজ লেনদেন হয়েছে ৩১ কোটি টাকা।

অন্য দুটি প্রধান খাতের মধ্যে লেনদেন কমেছে প্রকৌশল এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতে।

প্রকৌশল খাতে হাতবদল হয়েছে ১২১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার, যা আগের দিন ছিল ২১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে ওষুধ ও রসায়ন খাতে হাতবদল হয়েছে ১১৭ কোটি ১২ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল ২০৬ কোটি টাকা।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের ‍তুলনায় ৫৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৯২ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৪ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০১ পয়েন্টে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ ‍সূচক ১০ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৯৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯১টি, দর কমেছে ১৫২টির। পাল্টায়নি ২৯টির।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৮৬ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৬৫৭ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৮৮ কোটি টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৫টির, কমেছে ১৪০টি। দর পাল্টায়নি ২৮টির।

এ বিভাগের আরো খবর