বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে ‘৬ হাজারের লড়াইয়ে’ ব্যাংকের হাত ধরে ‘জয়’

  •    
  • ২১ জুন, ২০২১ ১৪:৫৬

গত ৩০ মে ৩৯ মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরপর কখনও ছয় হাজারের নিচে, আবার ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু ছয় হাজার পয়েন্টে টিকে থাকার মনস্তাত্ত্বিক যে লড়াই ছিল সেটার অবসান হচ্ছিল না। ফলে সূচক এখানে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

সোয়া তিন বছর পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট ছোঁয়ার পর সেখানে টিকে থাকা নিয়ে তিন সপ্তাহ ধরে যে লড়াই চলছিল, তাতে আপাতত জয় হলো।

ব্যাংক খাতে ৫টি ছাড়া সব কয়েকটি কোম্পানির দাম বৃদ্ধিতে ৫৬ পয়েন্ট সূচক বেড়ে ৬ হাজার ১০০ পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়।

গত ৩০ মে ৩৯ মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রথমবারের মতো ছয় হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরপর কখনও ছয় হাজারের নিচে, আবার ছয় হাজার ছাড়িয়েছে। কিন্তু ছয় হাজার পয়েন্টে টিকে থাকার মনস্তাত্ত্বিক যে লড়াই ছিল সেটার অবসান হচ্ছিল না। ফলে সূচক এখানে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য তথা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির আদেশের পর আতঙ্ক তৈরি হয় কি না, এ নিয়েও তৈরি হয় আলোচনা। প্রথম কার্যদিবস রোববার লেনদেন শুরু হতেই বড় দরপতনের আভাস পাওয়া গেছে আশঙ্কা আরও জোরদার হয়। তবে এরপর সূচক ঘুরে দাঁড়িয়ে শেস পর্যন্ত আগের দিনের চেয় ১৭ পয়েন্ট বেশি হয়।

সোমবার লেনদেনের শুরুতেই সূচক দেয় লাফ। এক পর্যায়ে ৯০ শতাংশের মতো কোম্পানির দাম বেড়ে যায়। আর বেলা ১ টাকা ১৩ মিনিটে ৭২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে এরপর কিছুটা কমলেও শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৫৬ পয়েন্ট যোগ হয়ে সূচক দাঁড়ায় ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্ট যা ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ অবস্থান।

প্রায় সাড়ে তিন বছর আগের ওই দিনটিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক উঠেছিল ৬ হাজার ১২৭ পয়েন্টে।

ব্যাংকে উত্থানের দিন বেড়েছে বস্ত্র, ওষুধ ও রসায়ন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারদরও। বেশিরভাগ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দামও বেড়েছে সামান্য।

অন্যদিকে প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বাজে দিনে গেছে বিমা, প্রকৌশল, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও বিবিধ খাতে। মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সূচক ৬ হাজার পয়েন্টে উঠার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়, যে বাজার আরও ভালো হবে। কিন্তু সেখানে টিকে থাকতে পারছিল না। আর এখান থেকে বেড়ে নতুন যে অবস্থানে পৌঁছল, তাতে পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে ধারণা তৈরি হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘খাতওয়ারি লেনদেনে একটি দুটি কোম্পানির আধিপত্য দেখা গেলেও এখন সব খাতেই শেয়ারের দর বাড়ছে। বিমা খাতে টানা কয়েকদিন দর পতন হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা অন্য খাতের বিনিয়োগ করছে।’

তবে কেবল সূচক দিয়ে পুঁজিবারের সার্বিক অবস্থাও পরিমাপ করতে চান না তিনি। বলেন, ‘লেনদেনও দেখা উচিত। লেনদেন মাঝে কয়েকদিন দুই হাজারের নিচে নেমেছে। কিন্তু আবার তা উঠে এসেছে। এটিও পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক দিক।’

ব্যাংক খাত

মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এই খাত অপ্রত্যাশিতভাবে সংশোধনে গেলেও রোববাই ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেখা দেয়। সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসের লেনেদেন এই খাত নিয়ে হতাশা দূর হওয়ার প্রত্যাশা আরেকটু বাড়ল।

তবে সর্বাধিক বৃদ্ধির তালিকায় এই খাতের কোনো কোম্পানি না থাকলেও ৪ থেকে ৬ শতাংশ দাম বেড়েছে অনেকগুলো ব্যাংকের।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আইএফআইসি ব্যাংকের ৬.৭২ শতাংশ। এবি ব্যাংকের ৬ শতাংশ, সাউথ ইস্টের ৪.১৪ শতাংশ ও সিটি ব্যাংকের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ।

এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ৩.৬২, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৩.৩৭, ইবিএলের ৩.২৭, ওয়ান ব্যাংকের ৩.১৭, ইউসিবির ৩.০৩ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে ২১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা যা আগের দিনের প্রায় দ্বিগুণ।

সোমবার মোট লেনদেনের ১০.৩৭ শতাংশ ছিল ব্যাংক খাতে। আগের দিন যা ছিল ৬.৫ শতাংশ বা ১১৯ কোটি টাকা।

ভালো দিনেও এই খাতে সবচেয়ে বেশি কমেছে লভ্যাংশ ঘোষণার অপেক্ষায় থাকা রূপালী ব্যাংক। ২ টাকা ২০ পয়সা বা ৫.৫৩ শতাংশ দর হারিয়ে সবচেয়ে বেশি দর হারানো সপ্তম কোম্পানি ছিল এটি।

এ ছাড়া গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বাড়া এনআরবিসি ১ টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৫৮ শতাংশ ও ডাচ বাংলা ব্যাংক ৩০ পয়সা বা ০.৩৬ শতাংশ দাম কমেছে।

আর অপরিবর্তিত ছিল ব্যাংক এশিয়া ও পূবালী ব্যাংকের দাম।

সবচেয়ে বেশি উত্থান বস্ত্র খাতে

এই খাতের সব কটি কোম্পানির অর্থবছর জুলাই থেকে জুন। আর অর্থবছর শেষ হতে চলায় এই খাতের কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছেন বিনিয়োগকারীরা। আর এক মাসেরও বেশি সময় ধরে থেকে থেকে শেয়ারের দামে চলছে উল্লম্ফন।

সোমবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতে। মোট ৩৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে, যা মোট লেনদেনের ১৮.৩৫ শতাংশ। আগের দিন সবচেয়ে বেশি লেনদেনর ছয়টি খাতের মধ্যেও ছিল না এই খাত।

সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানির সিংহভাগই এই খাতের। প্রথম ১০টি কোম্পানির ৫টি, আর ২০টি কোম্পানির ১২টি বস্ত্র খাতের।

এর মধ্যে ৮টি কোম্পানির দাম বেড়েছে একদিনে যত বাড়া সম্ভব, ততই। ১০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর বিক্রেতা শূন্য হয়ে যায় এর অনেকগুলো।

সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলস, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ, প্রাইম টেক্সটাইল, ম্যাকসন্স স্পিনিং, মুন্নু স্পিনিং, মেট্রো স্পিনিং, মালেক স্পিনিং, তুংহাই ও রিং সাইনের দর।

এই খাতে উত্থানের দিনে দর হারিয়েছে ৫ বছর পর লভ্যাংশ ঘোষণা করা ঢাকা ডায়িং। কোম্পানিটি ২০২০ সালের জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

এর আগে ২০১৫ সালে শেষবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করেছিল কোম্পানিটি। আর ২০১৬ সালে শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৩০ পয়সা ও ২০১৭ সালে ৩ টাকা ৯৬ পয়সা লোকসান দেয়া কোম্পানিটি এরপরে আইনি জটিলতায় আর লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা করতে পারেনি।

উচ্চ আদালতের আদেশ পেয়ে রোববার পরিচালনা পর্ষদ তিন বছরের লভ্যাংশ ঘোষণা সংক্রান্ত সভা করে। এতে ২০১৮ সালে শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৯৬ পয়সা ও ২০১৯ সালে ৪ টাকা ২০ পয়সা লোকসান দেখানো হয়।

চলতি বছর প্রথম তিন প্রান্তিকে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ২ টাকা ৫১ পয়সা লোকসান দিলেও মাঝে ২০২০ সালে ১৩ পয়সা মুনাফা দেখিয়েছে।

এই লভ্যাংশ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গত ১১ এপ্রিল থেকে শেয়ারটি নিয়ে ‘খেলা’ চলার অভিযোগ আছে। সেদিন দুর্বল এই কোম্পানিটির দাম ছিল ৭ টাকা ৪০ পয়সা। সেখান থেকে আড়াই গুণ বেড়ে ২০ জুন দাম দাঁড়ায় ১৭ টাকা ৪০ পয়সা।

বিমার শেয়ারধানীরা হতাশ

গত ৫ এপ্রিল সারাদেশে লকডাউন শুরুর দিন থেকে এই খাতের শেয়ারদর বেড়েছে ক্রমাগত। এর মধ্যে একটি কোম্পানির শেয়ারদর ১০০ টাকার বেশিও বেড়েছে।

নানা গুঞ্জনে বাড়তে থাকা খাতটি সম্প্রতি আবার দর সংশোধনের দিকে ঝুঁকছে।

সবচেয়ে বেশি দর হারানোর ১০টি কোম্পানির তালিকায় এই খাতের কেবল একটি ছিল। সেটি হলো ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটি ৫.৭৪ শতাংশ দর হারিয়েছে।

এছাড়া গ্রিনডেল্টা ৪.৬৮, প্যারামাউন্ট ৪.৪৬, রিপাবলিক ৪.৩৬, প্রভাতী ৪.০৯, ইস্টার্ন ৩.৯৩, রিলায়েন্স ৩.৭৩, সোনারবাংলা ইন্স্যুরেন্স ৩.২১ শতাংশ দাম হারিয়েছে।

বলার মতো দাম বেড়েছে কেবল দুটি কোম্পানির। এর মধ্যে ডেল্টা লাইফ ৬ টাকা ৮০ পয়সা বা ৬.২৬ আর প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ৩ টাকা ৪০ পয়সা বা ২.৯৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।

এ ছাড়া দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ৪০ পয়সা, এশিয়া ৩০ পয়সা এবং ইস্টল্যান্ড ও পদ্মা লাইফের দাম বেড়েছে ২০ পয়সা করে।

এই খাতে লেনদেন হয়েছে ২৬৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বা ১৩.১৭ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া খাতের মধ্যে দ্বিতীয় হলেও এটি সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে কম।

আগের দিনও এই খাতে হাতবদল হয়েছিল মোট লেনদেনের ২৭ শতাংশ বা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। এক দিনেই লেনদেন কমে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেল।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ১২৫ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৮.৯৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩০৫ পয়েন্টে।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২০ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২২৪টির, দর কমেছে ১১৯টির। দর পাল্টায়নি ২৯টির। লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৭৮.৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৭৯ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর