বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আতঙ্ক কাটিয়ে পুঁজিবাজারে স্বস্তি

  •    
  • ২০ জুন, ২০২১ ১৫:০৯

ধারণা করা হয়েছিল, কোনো কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস না থাকায় কিছুটা ধাক্কা লাগবে পুঁজিবাজারে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থার পরিচয় দিলেন। পতন নয়, বরং উত্থানে স্বাভাবিক ছিল পুঁজিবাজার। বেড়েছে সূচক।

এক বছরের বেশি সময় ধরে চলমান শেয়ার দরের প্রান্তসীমা তথা ফ্লোর প্রাইস থেকে বের হয়ে রোববার প্রথম লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। করোনার মহামারিতে পুঁজিবাজারে দরপতন ঠেকাতে ২০২০ সালের মার্চে বেঁধে দেয়া হয় প্রতিটি কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস।

গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তৃতীয় পর্যায়ে পুঁজিবাজারের সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করে। ফলে রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ফ্লোর প্রাইসহীন লেনদেন হয়েছে।

ধারণা করা হয়েছিল, কোনো কোম্পানিতে ফ্লোর প্রাইস না থাকায় কিছুটা ধাক্কা লাগবে পুঁজিবাজারে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা আবারও আস্থার পরিচয় দিলেন। পতন নয়, বরং উত্থানে স্বাভাবিক ছিল পুঁজিবাজার। বেড়েছে সূচক।

চলতি বছরের করোনা পরিস্থিতি যখন উদ্বেগ আকার ধারণ করে, তখন সরকারের লকডাউন কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় করে পুঁজিবাজারেও লেনদেন সময় কমিয়ে আনা হয়।

৫ এপ্রিল লকডাউনের আগে সংক্রামক পতনে ছিল পুঁজিবাজার। লকডাউনেও সেই পতন আরও ত্বরান্বিত হবে, এমন গুজব ছিল পুঁজিবাজারে। তবে ভরসা হিসেবে দেখা হচ্ছিল ফ্লোর প্রাইসকে।

লকডাউনের মধ্যে যখন পুঁজিবাজারের লেনদেন ও সূচকের আস্থার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছিল, তখন ৭ এপ্রিল বাতিল করা হয় ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। তার পরদিন যে লেনদেন হয়েছিল, তখন ঢালাওভাবে কোম্পানির শেয়ার দর পতনের কমেছিল সূচক।

বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস নিয়ে ভরসা ছিল, কোম্পানির শেয়ার যতই পতন হোক ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামবে না। হঠাৎ ফ্লোর প্রাইস বাতিল করার আতঙ্কে ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দর আরও কমবে, এমন ভাবনায় বেড়ে যায় শেয়ার বিক্রি।

যদিও এ আতঙ্ক বেশি দিন টেকেনি। পরবর্তী সময়ে দেখা গেছে ফ্লোর প্রাইসে থাকা কোম্পানিরগুলোর শেয়ার আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি লেনদেন হচ্ছে।

বিনিয়োগকারীদের এমন আস্থার ৬৬ কোম্পানির বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর উঠে আসে ফ্লোর প্রাইসের ওপরে।

৩ জুন দ্বিতীয় দফায় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি আরও ৩০ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বাতিল করে। তবে এবার ফ্লোর প্রত্যাহারের ফলে ঢালাও শেয়ার বিক্রি দেখা যায়নি। কিছু কোম্পানির শেয়ার দর কমলেও পরবর্তী কয়েক দিনেই এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের পাশাপাশি দরও বেড়েছে।

সবশেষ গত বৃহস্পতিবার বাতিল করা হয় পুঁজিবাজারের সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস। বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ধারণা ছিল, পরবর্তী প্রথম কার্যদিবস রোববার ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের ফলে বড় ধরনের পতন হবে পুঁজিবাজারে।

কিন্তু রোববার লেনদেনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি। বরং আগের কার্যদিবসের মতো স্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে পুঁজিবাজারে। সূচকও বেড়েছে।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের তারল্য এতদিন আটকে ছিল। এখন সেগুলো মুক্ত হয়েছে। যেসব কোম্পানির অনেক বেশি ফ্লোর প্রাইস ধরা হয়েছিল, সেগুলোর কোনো লেনদেন হতো না, এখন হবে।

তিনি বলেন, যারা বেশি দামে শেয়ার কিনেছিল, তাদের জন্য ফ্লোর প্রাইস ভালো ছিল। কিন্তু যারা পুঁজিবাজারে নিয়মিত শেয়ার কেনাবেচা করেন, তারা লেনদেন হওয়া কোম্পানিতেই বিনিয়োগ করেন। ফলে এখন আর কারো তারল্য আটকে থাকবে না। লেনদেনের মাধ্যমে যৌক্তিক দামে শেয়ার কেনাবেচা করা যাবে।

রোববার লেনদেনে ভালো অবস্থানে ছিল তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানিগুলো। লেনদেনে ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে ২০টির। কমেছে ৭টির। দর পাল্টায়নি চারটির।

দর কমেছে বিমা খাতের। এদিন লেনদেনে ৫০টি বিমা কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪২টির। দর কমেছে ৭টির এবং একটির দর পাল্টায়নি।

বস্ত্র খাতের কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৪টির। কমেছে ৩২টির।

ব্যাংকের শেয়ার দরে উত্থান

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের উত্থান দেখা গেছে। এদিন এ খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১০৩ কোটি টাকা। ব্যাংকের পাশাপাশি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও শেয়ার দরে উত্থান দেখা গেছে। এদিন নন ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৬৮ কোটি টাকা।

রোববার লেনদেনে ব্যাংক খাতের সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এনআরবিসি ব্যাংকের ৭.১৭ শতাংশ। শেয়ার দর ৩৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা ৩০ পয়সা।

ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৪.৫১ শতাংশ। প্রতিটি শেয়ার ৭৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা। স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩.১৩ শতাংশ।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২.৯৮ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ১৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা।

রূপালী ব্যাংকের শেয়ার দর ২.৬৯ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিটি শেয়ার ৩৭ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ১০ পয়সা।

ফার্স্টসিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২ শতাংশ। এবি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১.৫২ শতাংশ। স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১.১৩ শতাংশ। যমুনা ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ১ শতাংশের কিছু বেশি।

এক্সিম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, আইএফআইসি, পূবালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে এক শতাংশের কম।

দর কমলেও লেনদেনে এগিয়ে বিমা

রোববার তালিকাভুক্ত বিমা কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ঢালাওভাবে কমলেও লেনদেনে এগিয়ে ছিল। রোববার বিমা খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ৪২২ কোটি টাকা।

এদিন বিমা খাতের সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানি ছিল প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩.৩৩ শতাংশ। তারপর আছে সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে দশমিক ৯০ শতাংশ।

দর বাড়ার চেয়ে কমার তালিকায় বেশি ছিল বিমার শেয়ার। এদিন সবচেয়ে বেশি দর কমেছে সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের ৯.০৭ শতাংশ। শেয়ার দর ৬৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৬২ টাকা ১০ পয়সা।

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬.৬০ শতাংশ। পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.৭৭ শতাংশ। তাক্বাফুল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.১৬ শতাংশ। স্ট্যন্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৪.৩৫ শতাংশ।

প্রাইম ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.৫৩ শতাংশ। ঢাকা ইন্সুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৩.০৩ শতাংশ।

এ ছাড়া ইসলামী ইন্স্যুরেন্স, ফেডারেল ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর তিন শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

আগ্রহ ছিল বস্ত্র খাতেও

রোববার লেননদেনে বস্ত্র খাতের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের ছিল বাড়তি আগ্রহ। এদিন লেনদেন তালিকাভুক্ত ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে তিনটি কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে দিনে যতটা বাড়া সম্ভব।

এদিন সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মুন্নু ফেব্রিক্সের ১০ শতাংশ। এ ছাড়া তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ। সম্প্রতি কোম্পানিটিকে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেট (ওটিসি) থেকে মূল মার্কেটে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর শেয়ার দর ১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা। নিউলাইন ক্লোথিং লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.১১ শতাংশ।

রোববার বস্ত্র খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ১৪৮ কোটি টাকা।

সূচক ও লেনদেন

প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬৯ পয়েন্টে।

শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ৬৬ পয়ন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৬ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১০ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৭ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৫৬টির, দর কমেছে ১৭৯টির। দর পাল্টায়নি ৩৮টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১২ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৮৩ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ১৫৩ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর