বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মহাধসের পর সর্বোচ্চ লেনদেনেও পুঁজিবাজারে ‘অস্বস্তি’

  •    
  • ৬ জুন, ২০২১ ১৪:৫৩

পুঁজিবাজারে দরপতনে লেনদেন বৃদ্ধির ইঙ্গিত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুখকর হয় না। ধারণা করা হয়, বড় অঙ্কের বিক্রয় চাপে এটা ঘটে থাকে।

২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে এক দিনে লেনদেনের রেকর্ড। তবু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস নেই। কারণ, ব্যাংক, বিমায় বড় দরপতন। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র ছাড়া উত্থান দেখা যায়নি সেভাবে।

রোববার লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা, যা প্রায় সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ লেনদেন।

২০১০ সালে মহাধসের আগে ৫ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।

তবে লেনদেন সর্বকালের সর্বোচ্চ উচ্চতা প্রায় ছুঁয়ে ফেলার দিনটিতে বিক্রয় চাপে সূচকের পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা খুব একটা স্বস্তিতে নেই।

পুঁজিবাজারে দরপতনে লেনদেন বৃদ্ধির ইঙ্গিত বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সুখকর হয় না। ধারণা করা হয়, বড় অঙ্কের বিক্রয় চাপে এটা ঘটে থাকে।

গত সপ্তাহে পুঁজিবাজার ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক ছাড়ানোর পর সেখানে টিকে থাকতে বেশ কষ্ট হয়েছে। ওঠানামার মধ্যে ব্যাংকের দরপতনের পরও বিমা খাতে অবিশ্বাস্য উত্থানে সপ্তাহের শেষ দুটি কর্মদিবসে সূচক ছয় হাজার পয়েন্টের ওপরেই থাকে।

এর মধ্যে পুঁজিবাজারে অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে ২১ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল চূড়ান্ত হওয়ার খবর আসে গণমাধ্যমে। তবে রোববার লেনদেনের শুরু থেকেই ওঠানামার মধ্যে থাকে সূচক। দিন শেষে আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন।

এদিন দর বেড়েছে ১৪৫টি শেয়ারের, দর হারিয়েছে ২০১টি। আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টির দর।

৩ জুন ঘোষণা করা হয় আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট। যেখানে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আড়াই শতাংশ কমানো হয় করপোরেট কর। তবে এখনও অস্পষ্টতা আগামী অর্থবছরে কালোটাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে। এ কারণে বাজারে বিনিয়োগ বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক ইপিএলের সাবেক গবেষণাপ্রধান দেবব্রত কুমার সরকার।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেন বাড়লেও এখনও পুঁজিবাজার ফান্ডামেন্টালের দিকে ধাবিত হয়নি। বরং প্রতিদিন কোনো না কোনো খাতের ওপর ভর করে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন বাড়ছে। যা যৌক্তিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘ফান্ডামেন্টাল বা ভালো কোম্পানির প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ না বাড়লে সে পুঁজিবাজারকে বেশি দূর টেনে নেয়া সম্ভব নয়।’

অস্বস্তির কারণ ব্যাংকে ধস, বিমায় বড় পতন

৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে পুঁজিবাজার বেড়েছে মূলত ব্যাংক-বিমায় ভর করে। এর মধ্যে গত সপ্তাহে ব্যাংক কিছুটা সংশোধনে গেলেও বিমার অবিশ্বাস্য উত্থান চলতে থাকে।

বিমা খাত এই সপ্তাহে সংশোধনে যাবে কি না, এ নিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ফেসবুক পেজে দুই দিন ধরে বিতর্ক চলছিল। সেই সঙ্গে ব্যাংক খাত সংশোধন শেষে ঘুরে দাঁড়াবে বলেও আশার কথা বলছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস এই দুই খাতের শেয়ারধারীদের ভীষণভাবে হতাশ করল।

সবচেয়ে বেশি দরপতন হওয়া কোম্পানির তালিকায় বেশির ভাগই ছিল ব্যাংক ও বিমা।

সবচেয়ে বেশি দর হারানো ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৭টিই এই দুই খাতের। এর মধ্যে ব্যাংকের শেয়ার ৭টি, আর বিমার ১০টি।

এর মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে সবেচেয়ে বেশি ১৬ দশমিক ১১ শতাংশ। এক দিনে ১০ শতাংশের বেশি কমার সুযোগ না থাকলেও এটি এত কমেছে লভ্যাংশ সমন্বয়ের কারণে। চলতি বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৭৫ পয়সা নগদ আর সাড়ে ৭ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।

বৃহস্পতিবার রেকর্ড ডেটে শেয়ার দাম ছিল ১৮ টাকা। লভ্যাংশ সমন্বয় করলে দাম দাঁড়ায় ১৬ টাকা ৭০ পয়সা। কিন্তু দিন শেষে দর দাঁড়িয়েছে ১৫ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ নগদ লভ্যাংশের ৭৫ পয়সা হিসাবে ধরলেও বিনিয়োগকারীদের লোকসান ৮৫ পয়সা।

এক দিনে সব ব্যাংকের শেয়ারের দরপতনের বিরল দৃশ্য দেখল পুঁজিবাজার

শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ লভ্যাংশ দেয়া সাউথইস্ট ব্যাংক রেকর্ড ডেট শেষে দর হারিয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা বা ৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ৩১ শতাংশ বা ৭ টাকা ২০ পয়সা।

প্রাইম ব্যাংকের শেয়ার দর ২৪ টাকা থেকে ৭ দশমিক ৯১ শতাংশ কমে লেনদেন হয়েছে ২২ টাকা ১০ পয়সায়।

এবি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। লেনদেনে ১৬ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।

যমুনা ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ। ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ১৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

ক্রমাগত দর বাড়তে থাকা এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর রোববার কমেছে ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ব্র্যাক ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের শেয়ার দর কমেছে যথাক্রমে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও ২ দশমিক ৬১ শতাংশ।

তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে এদিন রেকর্ড ডেটের কারণে তিনটির লেনদেন স্থগিত ছিল। কমেছে বাড়ি ২৮টির দামই।

এই খাতে মোট লেনদেন ছিল ২৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।

শতকরা হিসেবে বিমার পতন হয়েছে আরও বেশি।

এই খাতের ৫০টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১০টির। পাল্টায়নি একটির। আর বাকি ৩৯টির দর কমেছে।

লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ারপ্রতি দর ৭৪ টাকা ৬০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৬৭ টাকা ৩০ পয়সা।

লকডাউনের শুরু থেকে বাড়তে থাকা বিমার শেয়ারে এমন পতন প্রত্যাশিত ছিল না

রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার ৮৬ টাকা ৪০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৭৮ টাকা।

এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি দর ৭৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৬৮ টাকা ৭০ পয়সা।

জনতা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। নর্দান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ৬৫ শতাশং। ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্যারামাউন্ড ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ।

গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৭৩ টাকা থেকে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে হয়েছে ৬৭ টাকা ৯০ পয়সা। প্রগতি ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৬ শতাংশের বেশি।

লেনদেন সবচেয়ে বেশি হয়েছে এই খাতে। হাতবদল হয়েছে মোট ৭৩০ কোটি ৪৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা।

উত্থানে বস্ত্র ও প্রকৌশল খাত

এদিন উত্থান হয়েছে মূলত বস্ত্র খাতের। এই খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৪০টি। কমেছে ১২টির দর। বাকি চারটির দর ছিল অপরিবর্তিত।

এই খাতে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আলিফের দাম। শতকরা ৯.৫৭ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৩০ পয়সায়।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেড়েছে সাফকো স্পিনিংয়ের দর। শতকরা ৯.৩৭ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ১৪ টাকা।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সবচেয়ে বেশি বাড়ল বস্ত্র খাতের দর

ইভেন্স টেক্সটাইলের দর ৯.১৯ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ৫০ পয়সা। আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের দাম ৯.১৩ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকা ৩০ পয়সা। শেফার্ডের দাম ৮.৬৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৩ টাকা ৮০ পয়সা।

দীর্ঘদিন পর চাঙাভাব দেখা দিয়েছে প্রকৌশল খাতে। এই খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ২৮টির। দর কমেছে ১৪টির।

বস্ত্র খাতে মোট লেনদেন ২৯৭ কোটি ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা।

এর মধ্যে লোকসানে থাকা আরএসআরএম স্টিলের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯.৯৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১ টাকা। দাম বাড়ায় শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে চারটি ছিল এ খাতের।

রানার অটোমোবাইল কোম্পানির শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ। শেয়ার দর ৫৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা ৯০ পয়সা।

প্রকৌশল খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়টি দেখা গেল দীর্ঘদিন পর

কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিস লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯.৭৫ শতাংশ। ওয়াইমেক্স ইলেক্টোড লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯.৭০ শতাংশ।

এই খাতে হাতবদল হয়েছে ২৭১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার টাকার শেয়ার।

সবচেয়ে বেশি বাড়ল সমতা লেদারের দর

দর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল চামড়া খাতের ফরচুন সুজ, যার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। ২৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮ টাকা ৬০ পয়সা।

টানা কয়েক মাস এক জায়গায় ঘুরপাক খাওয়া বেক্সিমকো লিমিটেড ছিল দর বৃদ্ধির চতুর্থ অবস্থানে। ৯.৭৮ শতাংশ বেড়ে ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে হয়েছে ৯৬ টাকা ৫০ পয়সা।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই কোম্পানির শেয়ার। একটি কোম্পানিরই হাতবদল হয়েছে ২৯৪ কোটি ২৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা।

একই গ্রুপের সিরামিক খাতের সাইনপুকুর সিরামিক ২৬ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৯ টাকা ২০ পয়সা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে ৯.৭৭ শতাংশ।

সূচক ও লেনদেন

রোববার লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৫ দশমিক ১৩ পয়েন্টে কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৮ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৯৯ পয়েন্টে।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২২ পয়েন্টে। আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৪৮৭ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের কার্যদিবসের তুলনায় ৩৬ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫০৭ পয়েন্টে। লেনদেন হয় ১৫৯ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর