বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিঅ্যান্ডএ, ফ্যামিলিটেক্স: আশা কম, মামলার চিন্তা

  •    
  • ৫ জুন, ২০২১ ২০:৩০

বোর্ড পুনর্গঠন করার পর দেখা গেছে, কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল লুটপাটের জন্য। আমরা দেখছি, কোম্পানিগুলোর কীভাবে কী করা যায়। যদি একেবারেই চালু করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে দেব।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যে কয়েকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করে সেগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে, তার মধ্যে অন্তত দুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে ফ্যামিলিটেক্স ও সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে দুটি কোম্পানিকে টেনে তুলতে যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিএসইসি চেয়ারম্যান এই সংশয় প্রকাশ করেছেন।

নিউজবাংলাকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই দুটি কোম্পানির উদ্যোক্তাদের ‘অসৎ’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।

এম খায়রুল হোসেন বিএসইসির চেয়ারম্যান থাকাকালে এই কোম্পানি দুটি তালিকাভুক্ত হয়েছিল পুঁজিবাজারে। কিন্তু প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে টাকা তোলার পর থেকেই সেগুলো ধীরে ধীরে রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, একপর্যায়ে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। মালিকপক্ষ আর বিএসইসির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছে না, বিনিয়োগকারীদেরও কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এ অবস্থায় পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হাজার হাজার বিনিয়োগকারী।

শিবলী রুবাইয়াতের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমে আলহাজ ও পরে রিংশাইন টেক্সটাইলের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়।

বিএসইসি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ছবি: নিউজবাংলা

আলহাজ টেক্সটাইল এরই মধ্যে উৎপাদন শুরুর তারিখ দিয়েছে। রিংশাইনও উৎপাদন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।

তবে সিঅ্যান্ডএ ও ফ্যামিলিটেক্সের বিষয়ে সন্দিহান তিনি। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বোর্ড পুনর্গঠন করার পর দেখা গেছে কয়েকটি কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছিল লুটপাটের জন্য। আমরা দেখছি কোম্পানিগুলোর কীভাবে কী করা যায়। যদি একেবারেই চালু করা সম্ভব না হয়, তাহলে সেসব কোম্পানির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করে দেব।’

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ফ্যামিলিটেক্স ও সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে বিএসইসি।

ফ্যামিলিটেক্সের জন্য বিএসইসির মনোনীত পরিচালক হলেন কাজী আমিনুল ইসলাম, ড. সামির কুমার শীল, ড. গাজী মোহাম্মদ হাসান জামিল, ড. মো. জামিল শরিফ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরিফ এহসান এবং ড. মো. ফরজ আলী। এই ছয়জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্যে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কাজী আমিনুল ইসলাম।

আর সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের দায়িত্ব পেয়েছেন সাতজন। চেয়ারম্যান করা হয় অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথকে। অন্যরা হলেন ড. মোহাম্মদ শরিয়ত উল্লাহ, ড. এ বি এম শহীদুল ইসলাম, ড. রেজওয়ানুল হক খান, ড. এ বি এম আশরাফুজ্জামান, ড. তৌফিক ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ এহসান।

তিন মাসে কোম্পানি দুটির মূল্যায়ন রিপোর্ট অবশ্য এখনও জমা দেননি তারা। তবে বিএসইসিকে নানা সময় কোম্পানির অবস্থা সম্পর্কে তারা জানিয়েছেন।

বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ম্যানপাওয়ার কম। মাত্র ৮০ জন এখানে কাজ করি। এতগুলো কাজ একসঙ্গে করা মুশকিল হয়ে যায়। এ জন্য আমরা একটি একটি করে ধরছি, করছি। নতুন বোর্ড করে দিচ্ছি। তারা প্রোগেস করছে। এখন পর্যন্ত আমরা যে বোর্ড গঠন করে দিয়েছি, তার প্রোগেস রিপোর্ট শিগগিরই চলে আসবে। তখন সব বোঝতে পারব কোথায় কী হচ্ছে।’

আগামী সপ্তাহেই পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

ফ্যামিলিটেক্সের আদ্যোপান্ত

২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। ১০ টাকা মূল্যমানের সাড়ে তিন কোটি শেয়ার ছেড়ে তারা সংগ্রহ করে ৩৫ কোটি টাকা।

তালিকাভুক্তির পর ২০১২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক হিসাব পর্যালোচনা করে কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। তবে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

ওই বছর কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় দেখানো হয় ৭ টাকা ২৬ পয়সা আর শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য হয় ২১ টাকা ৭২ পয়সা। এই লভ্যাংশ ঘোষণার পরদিন ১ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়ায় ৬২ টাকা, যদিও একপর্যায়ে দাম ৭৪ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছিল।

বিপুল পরিমাণ বোনাস শেয়ার দেয়ার পর থেকেই ফ্যামিলিটেক্সের আয় কমতে থাকে। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরে তারা সবশেষ মুনাফা করেছিল। তখন শেয়ারপ্রতি আয় হয় ৮২ পয়সা। এর পরের চার বছর ধরে লোকসান দিচ্ছে তারা।

২০১৭ সালে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় সাড়ে ৪ পয়সার মতো। পরের বছর লোকসান হয় ৭ পয়সা, ২০১৯ সালে লোকসান হয় ৮ পয়সা। আর ২০২০ সালে লোকসান হয় ১৫ পয়সা।

২০১৩ সালে ১০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়ার পরের বছর তারা দেয় আরও ১০ শতাংশ বোনাস। এর পরের তিন বছর দেয় ৫ শতাংশ করে। কিন্তু গত দুই বছর কোনো লভ্যাংশই দেয়া হয়নি।

অথচ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে কোম্পানির আয় ক্রমেই বাড়ছিল। তালিকাভুক্তির আগে তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে হয় বিএসইসিতে।

সেখানে দেখা গিয়েছিল ২০১১ ও ২০১২ সালে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছিল চার গুণের বেশি। আর তালিকাভুক্ত হওয়ার বছরে মুনাফা বাড়ে আরও ৭৬ শতাংশ।

গত বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১৫ পয়সা করে লোকসান দেয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই প্রান্তিক অর্থাৎ ছয় মাসে লোকসান দিয়েছে ১৩ পয়সার কিছু বেশি।

এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকরা আরেকটি আইনবিরুদ্ধ কাজ করেন। পুঁজিবাজারে ঘোষণা না দিয়েই উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা সিংহভাগ শেয়ার বিক্রি করে দেন।

এই বিষয়টি তদন্তে ডিসেম্বরের শেষে একটি কমিটি করে বিএসইসি। তারা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে কি না, সেটি এখনও জানা যায়নি। আর এ জন্য পরিচালকদের তেমন কোনো শাস্তিও পেতে হয়নি।

কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৪০ লাখ শেয়ারের মধ্যে এখন মাত্র ৪.০২ শতাংশের মালিক কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী অন্তত ৩০ শতাংশ শেয়ার ধরে রাখতে হবে মালিকপক্ষ।

এই কোম্পানির ৭৭.৫৭ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। ক্রমাগত লোকসান দিতে থাকা কোম্পানির শেয়ার দরও একেবারে তলানিতে। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের সবশেষ মূল্য ২ টাকা ৮০ পয়সা।

সিঅ্যান্ডএর শুরু থেকেই জালিয়াতি

কোম্পানিটি ২০১৫ সালে পুঁজিবাজার থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ শেষে একই সালের ২১ জানুয়ারি দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার লেনদেন শুরু করে।

২০০১ সালে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানি ছিল সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ৯ লাখ ৯২ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু ও প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হয় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর আবারও নতুন শেয়ার ছেড়ে ১২০ কোটি টাকার বেশি মূলধন বাড়ানো হয়। এরপর বিএসইসির কাছে কোম্পানিটির আইপিও আবেদন জমা দেয়া হয়।

অর্থাৎ আইপিও আবেদনের আগের দুই মাসে পাঁচ লাখ টাকার কোম্পানিটি হয়ে যায় ১৩০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা যোগ হওয়ার পর সেটি হয়ে যায় ১৭৫ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি।

তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে যথাক্রমে ১১, ১২ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানির মূলধন দাঁড়ায় ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

সিঅ্যান্ডএর আরও অনিয়মের খবর সে সময় আগে গণমাধ্যমে। আইপিও আবেদনে মিথ্যা তথ্য দেয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদনও হয়। তবে এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন এসব অভিযোগ বিবেচনায় আনেনি।

শেয়ার লেনদেন শুরুর ২৭ মাস পর অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ মে হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ করে কোম্পানির কর্তৃপক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির কারখানা সংস্কার করার কথা বলে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রায় চার বছরেও আর উৎপাদনে ফেরেনি কোম্পানিটি।

ঘটনার পরে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি কারখানা পরিদর্শনে যায়। তবে কর্তৃপক্ষ কারখানায় ঢুকতে পারেনি বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) লিখিত জানায়।

তালিকাভুক্তির প্রথম দিনেই সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ১০ টাকার প্রতিটি শেয়ারের দাম এক লাফে ১২০ শতাংশ বেড়ে ২২ টাকায় উন্নীত হয়েছিল।

২০১৬ সালের ৩০ জুন কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে শেয়ার ছিল ৩০.২৯ শতাংশ। পরে এক-চতুর্থাংশ বিক্রি করেন দেন তারা। এখন পরিচালকদের শেয়ার সংখ্যা ২২.১৪ শতাংশ।

গত জুলাইয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোর্শেদ, পরিচালক শারমিন আকতার ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক বাংলাদেশ শু ইন্ডাস্ট্রিজকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল বিএসইসি। আইন লঙ্ঘন করে কোনো ঘোষণা ছাড়া তাদের হাতে থাকা বিপুল শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ১২ কোটি টাকার বেশি মুনাফা করায় এ জরিমানা করা হয়। তবে সে টাকা পরিশোধ করেননি তারা।

এ বিভাগের আরো খবর