বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অর্থের সংস্থানের অনিশ্চয়তা থাকছেই

  •    
  • ৪ জুন, ২০২১ ০৮:২৬

অর্থমন্ত্রী আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করে তিনি বাজেটের ঘাটতি মেটাবেন।

মহামারিকালে চতুর্মুখী চাপের মধ্যে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার যে বাজেট দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তাতে সংকট সামাল দিতে সরকারের পকেট কিছুটা চওড়া হবে, কিন্তু সেই অর্থের সংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।

২০২১-২২ সালের জন্য তিনি দেশের আয়-ব্যয়ের যে ফর্দ হাজির করেন, তা কাটাছেঁড়া করে ‘অসম্ভব কল্পনাবিলাসই’ দেখতে পাচ্ছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

অবশ্য এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের আর কোনো অর্থমন্ত্রীকে বাজেট দিতে হয়নি। মানুষের জীবন আর জীবিকা– দুই কূলই রক্ষা করার কথা মাথায় রাখতে হয়েছে মুস্তফা কামালকে।

সে জন্য গতানুগতিক বাজেটের ধারা থেকে সরে এসে সরকারের অগ্রাধিকারের কাঠামো পরিবর্তন করার কথা অর্থমন্ত্রী নিজেই বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন।

স্বাভাবিকভাবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তাকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হয়েছে, লকডাউনে আয়হীন-কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি মানুষকে খাওয়ানোর জন্য রাখতে হয়েছে অর্থ। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বেড়েছে ব্যয়ের বড় বড় অঙ্ক।

বিপরীতে আয়ের খাত ছিল সংকুচিত। মহামারিতে সাধারণ মানুষের ওপর প্রত্যক্ষ কর বাড়াতে পারেননি তিনি। এই অবস্থায় ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে বাড়তি অর্থ জোগাড়ের কথা ভাবতে গিয়ে বাজেট ঘাটতি এবারও ৫ শতাংশের বৃত্ত ভাঙার সাহস দেখাতে হয়েছে মুস্তফা কামালকে।

যেসব খাত থেকে আসবে টাকা

বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করতে কত আয় হবে, সেটা নিয়ে খুব বেশি না ভেবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও জোগানকে ঠিক রাখতে জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা ধারদেনার প্রস্তাব করেছেন তিনি।

অর্থমন্ত্রীর আশা, কর-রাজস্ব থেকে আয় হবে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এই দুই খাতের প্রাপ্তি থেকে আগামী অর্থবছরে তার ব্যয় পরিকল্পনা ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বিশাল ঘাটতি পূরণে তিনি আশা করছেন, বিদেশ থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ করে তা মেটানো যাবে।

মহামারির অনিশ্চিত যাত্রার মধ্যেও নতুন বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জনের লক্ষ্য ধরেছেন মুস্তফা কামাল।

তবে অর্থমন্ত্রীর করোনাকালের দ্বিতীয় এই বাজেট প্রস্তাবে খুশি হাতে পারেননি অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর। তিনি মনে করেন, এবারের বাজেটে করোনার ব্যাপারে ফোকাস আছে, কিন্তু সেটা দৃশ্যমান না।

বাজেট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় নিউজবাংলাকে আহসান মনসুর বলেন, ‘বাজেটে বলা হয়েছে হাসপাতালসহ বিভিন্ন খাতে টাকা দেয়া হবে, টিকাদানের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে ইত্যাদি। এ টাকা কীভাবে খরচ করা হবে, তার পরিকল্পনা নেই।

‘বড় প্রশ্ন হচ্ছে কবে নাগাদ বাংলাদেশের সবাইকে টিকা দেয়া হবে? তার জবাব কি বাজেটে আছে? কবে নাগাদ বাংলাদেশ করোনা মুক্ত হবে? এ জন্য কতজনকে টিকা দিতে হবে? তার কোনো আলাপ বা উত্তর নেই।’

আরেক অর্থনীতিবিদ সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘সার্বিকভাবে দুর্বল অনুমিতি ও বাস্তবায়নের সীমাবদ্ধতা কোভিডকালীন বাজেট বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘মোটা দাগে, একদিকে কোভিডকে মোকাবিলা করা, অন্যদিকে কোভিড থেকে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য যে বাজেটটি প্রয়োজন ছিল, সেটা আমরা লক্ষ্য করিনি। সেটি এক বছরের বাজেট নয়। সেই বাজেটে আগামী কয়েক বছরের স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, সামাজিক খাত, কর্মসংস্থান ইত্যাদি কেমন হবে এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় কাঠামো কেমন হবে, রাজস্ব আহরণ কীভাবে হবে, সেগুলোর একটা পরিষ্কার দিকনির্দেশনা থাকা উচিত ছিল।’

যেসব খাতে ব্যয় হবে টাকা

আয়ের চেয়ে প্রায় সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা বেশি ব্যয় ধরে নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল। করোনাকালে জীবন এবং জীবিকা বাঁচাতে এর চেয়ে সহজ আর কোনো পথও খোলা ছিল না তার সামনে।

বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন, রাজস্ব আয়ে তিনি যে গতি আশা করেছিলেন, তা অর্জন করা সম্ভব হয়নি, কাজেই ধারদেনার ওপর ভর করতে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করা এবং সরকার মানুষের পাশে আছে এই আস্থা তৈরির বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে পুরো বক্তৃতায়।

১ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০২১-২২ অর্থবছর। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে বাজেট বক্তৃতায় আগামী জুলাই থেকে পরবর্তী ৩০ জুন অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা গোটা জীবন-যাপন কীভাবে পরিচালিত হবে, তার একটি দিকনির্দেশনা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। অস্বাভাবিক সময়, করোনাকাল। কাজেই ব্যয় করতে গিয়ে কিছুটা উচ্চাভিলাষী হতে হয়েছে অর্থমন্ত্রীকে।

প্রস্তাবিত ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনার বিপরীতে অর্থমন্ত্রীর আশা এক বছরে আয় হবে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। তাহলে ব্যয় এবং আয়ের ফারাক অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। অবশ্য এর সাথে বিদেশি অনুদান ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা যোগ করে অর্থমন্ত্রী প্রকৃত ঘাটতি দেখিয়েছেন ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এই ঘাটতি জিডিপির ৬.২ শতাংশ।

করোনার বছরেও অর্থমন্ত্রী যে বিশাল আয়ের পরিকল্পনা করলেন, তা আসবে কোন কোন খাত থেকে? জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর, সেতুর টোল, স্ট্যাম্প বিক্রি থেকে আয়, সরকারের বিভিন্ন ফর্ম এবং সেবা বিক্রির আয় আর বিদেশি অনুদান সব মিলে সরকারের আয় হবে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর আয় করবে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, এনবিআরবহির্ভূত কর ১৬ হাজার কোটি টাকা, কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৪৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি অনুদান ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

এবার দেখা যাক ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে কোথায় কোথায় কী বাবদ। মোট ব্যয়কে অর্থমন্ত্রী মোটা দাগে পরিচালন এবং উন্নয়ন ব্যয় – এই দুই হেডে দেখিয়েছেন। ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পরিচালন ব্যয় মূলত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং ঋণের সুদ। উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকার সিংহভাগই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি এডিপি। ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি আগেই চূড়ান্ত হয়েছে এনইসির সভায়। পরিচালন ব্যয়ের মধ্যে ঋণ ও অগ্রিম বাবদ ধরা আছে ৪ হাজার ৫০৬ কোটি আর খাদ্য হিসাবে ৫৯৭ কোটি।

সাহস করে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় ঘাটতির বাজেট তো দিলেন অর্থমন্ত্রী, এখন দেখা যাক এই ঘাটতির অর্থায়ন আসবে কোত্থেকে। ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার ঘাটতির সবচেয়ে বড় অংশ আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ থেকে। এরপর বিদেশি ঋণ থেকে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি অনুদান থেকে আসবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের টাকা জোগাড় করতে অর্থমন্ত্রী দেশের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ধার করবেন। অন্য উৎস থেকে আসবে আরও ৫ হাজার ১ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট বক্তৃতা শেষ করেছেন আশার কথা শুনিয়ে। তার আশা, ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে জিডিপির আকার দাঁড়াবে ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৪০ কোটি টাকা। বর্তমানে জিডিপির আকার ৩০ লাখ ৮৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই জিডিপি অর্জন করতে অর্থমন্ত্রীকে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আর মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশের মধ্যে আটকে রেখে কম আয়ের মানুষকে স্বস্তি দেয়ার আকুতি দেখিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

এ বিভাগের আরো খবর