পুঁজিবাজারে বিমা খাতের শেয়ারদরে উত্থানের পাশাপাশি এখন এই খাতের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের বিষয়টি উঠে এসেছে শেয়ার লেনদেনের চিত্রে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার হাতবদল হয়েছে মোট দুই হাজার ২৮২ কোটি টাকার। এর মধ্যে একক খাত হিসেবে লেনদেন হয়েছে ৭৩৪ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাংক খাতের তুলনায় এটি আড়াই গুণ, যদিও শেয়ারসংখ্যা ব্যাংক খাতের তুলনায় বহু কম।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার পর ৬৬ দিন বন্ধ থাকে পুঁজিবাজার। জুনে লেনদেন আবার চালু হওয়ার পর থেকে বিমা খাতের প্রতি আগ্রহ দেখা দেয় বিনিয়োগকারীদের। দাম বাড়তে থাকে টানা জানুয়ারি পর্যন্ত।
এরপর এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত দর সংশোধন হলেও লকডাউনের শুরু থেকে শুরু হয় উত্থানের আরেক পর্ব। টানা দুই মাসে বিশেষ করে সাধারণ বিমার শেয়ার যেন আকাশে উড়তে চাইছে।
গত বছর বিমা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা আইডিআরএ এজেন্ট কমিশন কমানোর পরে তুলে দেয়াসহ নানা সিদ্ধান্ত নেয়ার পর বিমা খাতের আয় ব্যাপকভাবে বেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছিল। তবে বছর শেষে বেশির ভাগ কোম্পানির আয়ই বেড়েছে নগণ্য পরিমাণে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকেও আয়ে প্রবৃদ্ধি নেই।
তার পরেও এই এক বছরে বিমা খাতের একটি কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১০ গুণেরও বেশি। পাঁচ গুণের কম বেড়েছে, এমন কোম্পানি খুঁজে পাওয়াই মুশকিল।
সেই তুলনায় জীবন বিমা খাতের শেয়ারদর না বাড়লেও সম্প্রতি এই খাতের ১২ কোম্পানির শেয়ারেও আগ্রহ বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। আর এক সপ্তাহ ধরে খাতওয়ারী লেনদেনে বিমার ধারেকাছে কেবল দুই-এক দিন ব্যাংক খাতকে দেখা গেছে।
গত সপ্তাহে ব্যাংক খাতেও ব্যাপক আগ্রহ দেখায় বিনিয়োগকারীরা। তবে চলতি সপ্তাহে এই খাতে দর সংশোধন হয়। রোব থেকে মঙ্গলবার দাম কমে বুধবার ঘুরে দাাঁড়ালেও বৃহস্পতিবার আবার দর হারায় ব্যাংকের শেয়ার।
তবে পড়তি দরে ব্যাংকের শেয়ারধারীরা শেয়ার বিক্রি করতে না চাওয়ায় লেনদেন পড়ে গেছে। আগের দিন মোট লেনদেনের ২০ শতাংশ এই খাতের হলেও আজ হয়েছে ১৩ শতাংশ।
গোটা সপ্তাহজুড়েই সর্বাধিক দর বৃদ্ধির তালিকায় বিমা খাতের প্রাধান্য দেখা গেছে
অন্যদিকে এদিন মোট লেনদেনের ৩৩ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে বিমা খাতের।
এদিন ব্যাংক খাতের মোট লেনদেন হয়েছে ২৯২ কোটি টাকা। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে মোট লেনদেন হয়েছে ১২০ কোটি টাকা।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বস্ত্র খাতে হাতবদল হয়েছে ১৮৬ কোটি টাকার কিছু বেশি।
২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন ১২ কোম্পানির
এদিন সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে আটটিই বিমা খাতের। ব্যাংক খাতের কোম্পানি ছিল চারটি, দুটি করে ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বস্ত্র খাতের কোম্পানি।
আর গত কয়েক মাসের ধারাবাহিকতায় এদিনও শীর্ষে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার। বাকি তিনটি কোম্পানির একটি প্রকৌশল, একটি সিমেন্ট এবং একটি চামড়া খাতের।
বিমার শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতবদল হয়েছে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের; ৫৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ৩৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
তৃতীয় সর্বোচ্চ নর্দান ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
এ ছাড়া গ্রিনডেল্টার ৩৪ কোটি টাকা, সোনারবাংলার ৩৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, গ্লোবালের ২৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, রূপালী ইন্স্যুরেন্সের ২৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকা, প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের ২৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা, সিটির ২২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ফেডারেলের ২২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, পূরবীর ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা আর কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্সের লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৬ লাখ টাকার।
১০ কোটির বেশি থেকে ২০ কোটির কম যেগুলোর লেনদেন
রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া এক্সপ্রেসের ১৮ কোটি ৯৯ লাখ টাকা; ইস্টল্যান্ডের ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, প্রগতি লাইফের ১৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, এশিয়া প্যাসিফিকের ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ফিনিক্সের ১৫ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, ক্রিস্টালের ১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, ঢাকার লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, মার্কেন্টাইলের ১৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, পিপলসের ১৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা;
ব্রোকারেজ হাউসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন দেখছেন বিনিয়োগকারীরা
স্ট্যান্ডান্ডের ১৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফের ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা, ইসলামীর ১৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা, সেন্ট্রালের ১৩ কোটি ১০ লাখ টাকা, কন্টিনেন্টালের ১১ কোটি ৮২ লাখ, প্যারামাউন্টের ১১ কোটি ৭০ লাখ টাকা, অগ্রণীর ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
১০ কোটির নিচে লেনদেন ২০ কোম্পানি
প্রগেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে এই পরিমাণ লেনদেনেই দাম বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত।
এ ছাড়া দেশ জেনারেলের ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, নিটলের ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা, জনতার ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রূপালী লাইফের ৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, প্রাইমের ৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, রিলায়েন্সের ৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, এশিয়ার ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, পপুলার লাইফের ৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, মেঘনা লাইফের ৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, ফারইস্ট লাইফের ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা, প্রাইম লাইফের ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।
৩ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়েছে যেগুলোর তার মধ্যে আছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, ইউনাইটেডের ২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, তাকাফুলের ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, বিজিআইসির ২ কোটি ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।
১ কোটি টাকার কম হাতবদল হয়েছে চারটি কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে প্রভাতির ৯৪ লাখ টাকা, পদ্মা লাইফের ৮৬ লাখ টাকা, সানলাইফের ৬০ লাখ টাকার এবং ন্যাশনাল লাইফের লেনদেন হয়েছে ৩০ লাখ টাকার।