সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ছয় হাজার পয়েন্ট ছোঁয়ার আনন্দ স্থায়ী হলো না।
২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো সূচক ছয় হাজারের ওপরে উঠে রোববার। পরদিন সোমবার সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর পাঁচ মিনিটেই সূচক কমে যায়। এক পর্যায়ে সেটি ৫১ পয়েন্ট নেমে যায় আগের দিনের চেয়ে।
এরপর শেয়ারদর কিছুটা বাড়তে থাকায় সেখান থেকে সূচক ফিরে পায় ৩৪ পয়েন্ট। ফলে দিন শেষে আগের দিনের চেয়ে ১৭ পয়েন্ট কমে লেনদেন শেষ করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
সূচক পড়ার দিন লেনদেনেও দেখা গেছে ভাটা। টানা তিন দিন পর লেনদেন নেমেছে দুই হাজার পয়েন্টের নিচে। সারা দিনে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় ৪৫৬ কোটি টাকা কম।
সূচক পতনের দিন দর হারিয়েছে ব্যাংক, বিমা, বস্ত্র, প্রকৌশল, খাদ্য, জ্বালানি খাতের বেশিরভাগ কোম্পানি। আগের দিন সব কটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বাড়লেও দ্বিতীয় দিনেই দর হারিয়েছে বেশিরভাগ।
‘ভয়ের কারণ নেই, দর সংশোধন’
ছয় হাজার পয়েন্টের সীমা পার হওয়ার পরদিনই বাজারে নেতিবাচক প্রবণতায় কোনো শঙ্কার কিছু দেখছেন না পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সোমবার লেনদেনে সূচকের যে পতন তা মূলত মূল্য সংশোধনের কারণে হয়েছে। গত তিন বছর ধরে ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ছিল। ফলে ব্যাংক থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো মুনাফা পেয়েছে। তাই তারা সেগুলো বিক্রি করেছে।’
তিনি বলেন, ‘লেনদেন যে অবস্থা আছে সেটি ধরে রাখা গেলে সূচক তিনশ পয়েন্ট কমলেও আতঙ্কের কিছু নয়।’
ব্যাংক-বিমার পতন
গত সাত কার্যদিবস ভালো সময় কাটিয়ে ব্যাংকের একটি খারাপ দিন গেল।
সোমবার লেনদেন হওয়া ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দর বেড়েছে পাঁচটির। পাল্টায়নি ছয়টির। বাকি ১৯টি ব্যাংকের শেয়ারের দর কমেছে।
এনআরবিসির লেনদেন হয়নি রেকর্ড ডেটের কারণে।
দর পতনে এগিয়ে থাকলেও সোমবার দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ পাঁচটি কোম্পানির মধ্যে ব্যাংকের ছিল একটি।
ডাচ বাংলা ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৬৯ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক ২০ পয়সা। এ নিয়ে টানা দুই কার্যদিবস এই ব্যাংকটির শেয়ার দর সর্বোচ্চ পরিমাণে বাড়ল।
সোমবার ব্যাংক খাতে একটি খারাপ দিন গেছে পুঁজিবাজারে
এবি ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। শেয়ার দর ১৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫ টাকা ৯০ পয়সা।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। শেয়ার দর ১৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ৮০ পয়সা।
আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে দশমিক ৪১ শতাংশ। শেয়ার দর ২৪ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৪ টাকা ১০ পয়সা।
ক্রমাগত উত্থানে থাকা সাধারণ ও জীবন বিমা খাতের কোম্পানিগুলো দর হারিয়েছে ব্যাপক হারে।
লেনদেন হওয়া ৫০টি কোম্পানির মধ্যে সোমবার দর হারিয়েছে ২৯টির। দর পাল্টায়নি একটির। আর দর বেড়েছে ২০টির।
উড়তে থাকা বিমা খাতেরও পতন হয়েছে সোমবার
সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। শেয়ার দর ৩৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৩৩ টাকা ৩০ পয়সা।
পিপলস ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। প্রগতি ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। সন্ধানী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সোনার বাংলা ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ। রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ।
দর হারালো মিউচ্যুয়াল ফান্ডও
চলতি সপ্তাহের শুরুতে দাপটে ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো। লেনদেন ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৬টির। স্থান করে নিয়েছিল দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ তালিকায়।
সোমবার লেনদেনে তালিকাভুক্ত ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র তিনটির। দর পাল্টায়নি ছয়টির। বাকি ২৫টির দর কমেছে।
লেনদেনে আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় ছিল আইসিবি অগ্রনী ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।
তবে সবচেয়ে বেশি মিউচ্যুয়াল ফান্ড আছে দর পতন হওয়া শীর্ষ তালিকায়। এদিন প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফিন্যান্স মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানে ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ৩ দশমিক ২৩ শতাংশ।
আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। ইউনিট প্রতি দর ৬ টাকা ৯০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৬ টাকা ৫০ পয়সায়।
ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট প্রতি দর কমেছে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এবিব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর কমেছে ২ দশমিক ৯০ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
সোমবার লেনদেনে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৭ দশমিক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৯০ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক দশমিক ৩১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৬ পয়েন্টে।
ছয় হাজার পয়েন্ট উঠার পর দিনই ১৭ পয়েন্ট কমে সূচক নেমে গেল পাঁচ হাজার পয়েন্টের প্রান্তসীমায়
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৫ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে মোট ১ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। ফলে এক কার্যদিবসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪১৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ১৯ দশমিক ৭৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৫৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ৫৮ কোটি টাকা।