বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সোয়া তিন বছর পর সূচক ছয় হাজার পয়েন্টে

  •    
  • ৩০ মে, ২০২১ ১৪:৪৬

২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে সূচক ছিল ছয় হাজার ৫০ পয়েন্ট। এরপর আর ছয় হাজার পয়েন্টের ঘর অতিক্রম করতে পারেনি। মাইলফলক ছোঁয়ার দিন টানা দ্বিতীয় কার্যদিবসের মতো লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। কিছুটা কমে আজ লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।

পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব অব্যাহত রয়েছে। সোয়া তিন বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক সোয়া তিন বছর পর ছয় হাজার পয়েন্টের মাইলফলক অতিক্রম করেছে।

রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে সূচক আগের দিনের চেয়ে ২২ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে সূচক ছিল ৬ হাজার ৫০ পয়েন্ট। এরপর নানা সময় পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা গেলেও আর ৬ হাজার পয়েন্ট আর অতিক্রম করতে পারেনি।

টানা দ্বিতীয় কার্যদিবসের মতো লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। যদিও বৃহস্পতিবারের তুলনায় লেনদেন কিছুটা কমেছে।

বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। কিছুটা কমে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ১৪৯ কোটি টাকা।

এর আগে গত ১৩, ১৪ ও ১৭ জানুয়ারি টানা তিন কার্যদিবস দুই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছিল।

গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকে পুঁজিবাজারে উত্থান শুরু হলেও জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের পর থেকে শুরু হয় বাজার সংশোধন, যা অব্যাহত থাকে এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।

৫ এপ্রিল থেকে লকডাউনের ঘোষণায় বাজারে ছোটখাট ধসও নামে। এ সময় লেনদেন বন্ধ হয়ে যাবে, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়লে বিনিয়োগকারীরা কম দামে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিতে থাকেন। তবে লেনদেন চালু থাকবে এবং লেনদেনের সময় সীমা ঘোষণার পর ফিরে আসে স্বস্তি।

৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরুর দিন থেকেই পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা দেয়। এরপর মোট ৩৬টি কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছে এর মধ্যে সূচক কমেছে অল্প কয়েক দিন।

৭ এপ্রিল ৬৬ কোম্পানির শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য তথা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর দুই দিন বেশ বড় পতন হয়। তবে এসব শেয়ারের দাম ‍দুই শতাংশের বেশি কমতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত জানানোর পর ঘুরে দাঁড়ায় বাজার। পাশাপাশি মার্জিন ঋণ নেয়ার অনুপাত বাড়িয়ে ১০০ টাকার বিপরীতে ৮০ টাকা নির্ধারণ করার পর বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্টগুলো নতুন করে শেয়ার কেনার উপযোগী হয়।

এর মধ্যে প্রথমে বিমা খাত, পরে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এরপর আর্থিক প্রতিষ্ঠান, পরে ব্যাংক খাত এবং সব শেষে বস্ত্র খাতের উত্থানে মুনাফা করতে থাকায় বিও হিসাবগুলো আরও শেয়ার কেনার উপযোগী হয়। আর এ কারণে লেনদেন বাড়তে থাকে ধারাবাহিকভাবে।

ঈদের আগে সব সময় বাজারে ধীরগতি ও দর সংশোধনের প্রবণতা থাকলেও এবার ছিল উল্টোচিত্র। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনেছেন যা ঈদের পরেও অব্যাহত থাকে।

লকডাউনের শুরুতে তিনশ কোটি টাকার নিচে নেমে যাওয়া লেনদেন ২০ এপ্রিল ছাড়ায় এক হাজার কোটি টাকা। এরপর ২১, ২২ ও ২৬ এপ্রিল কেবল হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হয়েছে।

২৫ এপ্রিলের পর টানা ১৯ কার্যদিবস এক হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে। এর মধ্যে গত সাত কার্যদিবসে তিনবার তা দুই হাজার কোটির ঘর ছাড়িয়েছে।

দর পতন উত্থান-দুটোই আছে ব্যাংক খাতে

বৃহস্পতিবার ব্যাংক খাতে বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে চাঙ্গাভাব দেখা দিয়েছিল। ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর হারিয়েছিল কেবল একটি। তার চেয়ে বড় কথা সাতটি ব্যাংক লেনদেন হয়েছিল দিনের সর্বোচ্চ সীমায়। এর চেয়ে বেশি দাম বাড়া সম্ভব ছিল না সেদিন।

এর বাইরে আরও চারটি ব্যাংকের শেয়ার দর সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে ১০ থেকে ৩০ পয়সা কমে লেনদেন হয়েছে।

ছয় থেকে আট শতাংশ দাম বাড়ে আরও বেশ কয়েকটির।

আজও দুটি ব্যাংকের শেয়ার দর লেনদেন হয়েছে এক দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমায়। ডাচ বাংলা ব্যাংকের ১০ শতাংশ আর যমুনা ব্যাংকের দর বাড়ে ৯.৮৫ শতাংশ।

ব্যাংক খাতের ৩১টি কোম্পানির লেনদেনের চিত্র

ডাচ বাংলার শেয়ার দর ছয় টাকা ৩০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ টাকা ৩০ পয়সা। আর যমুনার ব্যাংকের শেয়ার পর দুই টাকা ১০ পয়সা বেড়ে হয়েছে ২৩ টাকা ৪০ পয়সা।

এর বাইরে বলার মতো দর বেড়েছে ইবিএলের ৫.৬ শতাংশ বা দুই টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের ৪.২১ শতাংশ বা দুই টাকা ১০ পয়সা, উত্তরা ব্যাংকের ৪.১৭ শতাংশ বা এক টাকা এবং এনআরবিসির ২.৭৫ শতাংশ বা এক টাকা।

সব মিলিয়ে ৩১টির মধ্যে দাম বেড়েছে ১১টির, দুইটির দাম ছিল অপরিবর্তিত। আর কমেছে বাকি ১৮টির দাম।

সবচেয়ে বেশি কমেছে প্রাইম ব্যাংকের এক টাকা ৪০ পয়সা বা ৫.৩৬ শতাংশ এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এক টাকা বা ৪ শতাংশ।

সাধারণ বিমায় পতন, জীবন বিমায় উত্থান

লকডাউনের প্রথম দিন থেকে সাধারণ বিমা খাতে বিস্ময়কর উত্থান দেখা দিলেও গত সপ্তাহ থেকে বেশ কিছু শেয়ারের দর কমতে থাকে।

আজ সাধারণ বিমা খাতের ৩৮টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে কেবল আটটির। একটির লেনদেন ছিল স্থগিত। কমেছে বাকি সব কটির।

সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৫.৯৭ শতাংশ বা দুই টাকা ৪০ পয়সা, দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৫.৪১ শতাংশ বা দুই টাকা ৬০ পয়সা, ফিনিক্স ইন্স্যুরেন্স ৫.১২ শতাংশ বা তিন টাকা ১০ পয়সা, ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের ৪.৬৩ শতাংশ বা চার টাকা, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের ৪.৪ শতাংশ বা দুই টাকা ৮০ পয়সা, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের ৪.৩৬ শতাংশ বা তিন টাকা ৬০ পয়সা, রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স ৪.৩ শতাংশ বা তিন টাকা ৩০ পয়সা, আর অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ৪.১১ শতাংশ বা দুই টাকা ৩০ পয়সা দর কমেছে।

বিমা খাতের ৫০টি কোম্পানির লেনদেনের চিত্র

তবে পতনের চিনও উজ্জ্বল ছিল নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স। টানা চার কার্যদিবস দাম বৃদ্ধির প্রান্তসীমা ছুঁয়ে শেয়ার মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬৬ টাকা ৫০ পয়সা। দাম বেড়েছে পাঁচ টাকা ৯০ পয়সা বা ৯.৭৪ শতাংশ।

গত ২৩ মে এই কোম্পানির শেয়ার মূল্য ছিল ৪৫ টাকা ৬০ পয়সা। অর্থাৎ চার দিনে বেড়েছে ২১ টাকা ১০ পয়সা।

এ ছাড়া ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের সাত টাকা ৬০ পয়সা বা ৬.১৩ শতাংশ, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের পাঁচ টাকা ১০ পয়সা বা ৫.৭ শতাংশ, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের পাঁচ টাকা ২০ পয়সা বা ৫ শতাংশ, বিজিআইসির চার টাকা ৯০ পয়সা বা ৩.৬ শতাংশ, পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের তিন টাকা বা ২.২. শতাংশ দাম বেড়েছে।

অন্যদিকে জীবন বিমা খাতের ১২টি কোম্পানির মধ্যে দাম কমেছে কেবল দুটির, বেড়েছে বাকি ১০টির।

এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে প্রাইম লাইফের দর। দিনে দর বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৭৯ টাকা। দাম বৃদ্ধির হার ৯.৮৭ শতাংশ।

দিনের সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে ফারইস্ট লাইফের দরও। পাঁচ টাকা ৫০ পয়সা বা ৯.৮৬ শতাংশ বেড়ে দাম দাঁড়িয়েছে ৬১ টাকা ৩০ পয়সা।

এ ছাড়া ডেল্টা লাইফের ৭ টাকা ৮০ পয়সা বা ৮.০৮ শতাংশ, প্রগতি লাইফের ছয় টাকা ৮০ পয়সা বা ৭ শতাংশ, পদ্মা লাইফের দুই টাকা ২০ পয়সা বা ৬.৯৬ শতাংশ, মেঘনা লাইফের চার টাকা ১০ পয়সা বা ৫.১২ শতাংশ।

পপুলার লাইফের তিন টাকা ৪০ পয়সা বা ৪.০৭ শতাংশ, ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাত টাকা ১০ পয়সা বা ২.৮৬ শতাংশ, সানলাইফের এক টাকা ৩০ পয়সা বা ৩.৫১ শতাংশ এবং প্রগ্রেসিভ লাইফের দুই টাকা বা ১.৬৬ শতাংশ।

দিন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের

পুঁজিবাজারে বলার মতো দিন গেলে এই খাতের।

৩৭টি ফান্ডের মধ্যে লেনদেন হয়নি একটির, দাম বেড়েছে বাকি ৩৬টির সবগুলোর।

সবচেয়ে দাম বাড়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে চারটিই ছিল এই খাতের। আর সবচেয়ে বেশি দাম বাড়া ৩০টির মধ্যে ফান্ডের সংখ্যা আটটি। এই খাতের একসঙ্গে সবগুলোর দাম বাড়ার প্রবণতা চলতি মাসে দ্বিতীয় বারের মতো দেখা গেল।

রোববার সবচেয়ে বেশি চাঙ্গা ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাত

এদের মধ্যে ফিনিক্স ফিনান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৯.১৭ শতাংশ বা এক টাকা, পিএইচপি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৮.০৬ শতাংশ বা ৫০ পয়সা, ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালান্স ফান্ডের ৬.৯৮ শতাংশ বা ৬০ পয়সা, ফার্স্ট বাংলাদেশ ইনকাম ফান্ডের ৬.৯০ শতাংশ বা ৪০ পয়সা দাম বেড়েছে।

অন্যান্য খাত

এর বাইরে বড় খাতগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৮টির, অপরিবর্তিত ছিল সাতটি আর কমেছে বাকি ৩১টির।

প্রকৌশল খাতের ৪২টি কোম্পানির মধ্যে সব বেড়েছে ১৫টির। দিনে দ্বিতীয় সর্বাধিক দর বাড়া ইফাদ অটো এই খাতের কোম্পানিই। পাঁচ টাকা বা ৯.৯৪ শতাংশ দর বেড়েছে এই কোম্পানির।

এই খাতের ১৪টি কোম্পানি দর হারিয়েছে, একটির লেনদেন হয়নি আর বাকি ১২টির দর ছিল অপরিবর্তিত।

রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের ২২ কোম্পানির মধ্যে বেড়েছে ১১টির দর, কমেছে নয়টির, আর অপরিবর্তিত ছিল দুটির দর।

আর্থিক খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৪টি। একটির লেনদেন স্থগিত, অপরিবর্তিত ছিল চারটির, বাকি চারটির বেড়েছে।

ওষুধ ও রসায়ন খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৬টি, অপরিবর্তিত ছিল দুটি, একটির লেনদেন স্থগিত। বেড়েছে বাকি ১২টির দর।

সূচক ও লেনদেন

রোববার লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২২ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৮ দশমিক ৫৪ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০৮ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৪টির। দর কমেছে ১৭৪টির। দর পাল্টায়নি ৪৬টির।

লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। এ সময়ে লেনদেন কমেছে ২১৯ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৩১ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে মোট ১০৯ কোটি টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর