৫ এপ্রিল লকডাউনের শুরু থেকে টানা উত্থানের মধ্যে সোয়া তিন বছরে সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছল পুঁজিবাজার। এক দশক পর ব্যাংক খাতে চাঞ্চল্য ফিরে আসার পর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা বাড়িয়ে দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে স্বপ্ন আরও বড় হচ্ছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬ হাজার পয়েন্ট ছুঁইছুঁই অবস্থানে।
দিন শেষে ডিএসইর সূচক দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮৫ পয়েন্ট। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজারে সূচক ছিল ৬ হাজার ৫০ পয়েন্ট। এরপর নানা সময় পুঁজিবাজারে উত্থান দেখা গেলেও আর ৬ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করতে পারেনি।
গত বছরের শেষ দিক থেকে পুঁজিবাজারে আবার উত্থান দেখা দেয়ার পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি সূচক ওঠে ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যশা ছিল এই সময়ে সূচক ৬ হাজারের ঘর অতিক্রম করবে। কিন্তু সেদিনের পর কমতে কমতে ৪ এপ্রিল সূচক প্রায় ৫ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে।
পরদিন থেকে লকডাউনকে কেন্দ্র করে আগের দিন পৌনে ২০০ পয়েন্ট সূচক হারানোর পরদিন থেকেই দেখা দেয় উত্থান পর্ব।
এরপর দুই মাসেরও কম সময়ে ৯০০ পয়েন্টের বেশি বাড়ল সূচক।
বিশ্লেষকের বক্তব্য
এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ আবু তাহের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সার্বিকভাবে খুবই ভালো যাচ্ছে পুঁজিবাজার। সব খাতের কোম্পানির উত্থান দেখা যাচ্ছে। ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো করছে।’
তার ধারণা, পুঁজিবাজার আরও ভালো হবে। কারণ, ‘জুন ক্লোজিংয়ে যেসব কোম্পানি আছে, সেগুলোর দর বৃদ্ধি আসলে সেভাবে হয়নি।’
তবে বিমা খাতের অনেক শেয়ারের দর এখন অতিমূল্যায়িত বলেও মনে করেন তিনি। তাই বিনিয়োগকারীদের একটু দেখে-বুঝে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
রাজা এবার ব্যাংক খাত
একই দিনে সব ব্যাংকের মূল্য বৃদ্ধির ঘটনা চলতি সপ্তাহেও ঘটেছে। তবে আজ যেটা ঘটেছে, সেটি ঘটেনি বহু বছর।
৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দর হারিয়েছে একটি। বাকিগুলোর মধ্যে এক দিনে মূল্য বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে সাতটি। আরও পাঁচটি কোম্পানি সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়ে পরে কিছুটা কমেছে। আরও কয়েকটির দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি।
২০২০ সালের জন্য শেয়ারধারীদের ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পরও সবচেয়ে অবহেলিত খাত হিসেবে বিবেচিত ছিল আর্থিক বা ব্যাংক খাত।
ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উত্থানেও ব্যাংকের ঘুমিয়ে থাকা নিয়ে ছিল নানা আলোচনা। তবে চলতি মাসের শুরু থেকেই এই খাত আড়মোড়া ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছিল।
ব্যাংক খাতের নয়টি কোম্পানির দাম বেড়েছে দিনের সর্বোচ্চ পরিমাণে। এক দশকে এ চিত্র দেখা যায়নি
আজ কেবল একটি ব্যাংকের দর অপরিবর্তিত ছিল। আর এক মাসের কম সময়ে তিন গুণ হয়ে যাওয়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক ৬০ পয়সা দর হারিয়েছে।
ব্যাংকের মতো না হলেও চাঙা ছিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১১টির। দর কমেছে সাতটির। আর পাল্টায়নি চারটির।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতেও দর বৃদ্ধির হার ছিল বেশি। ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে দর কমেছে পাঁচটির। পাল্টায়নি ১০টির। বাকি ২২টির দর বেড়েছে।
এবার উত্থান জীবন বিমায়
সাধারণ বিমা খাতে প্রায় দুই মাস ধরে যে টানা উত্থান পর্ব দেখা গেছে, তাতে কিছুটা ছেদ পড়েছে আজ। ৩৮টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ২৮টি। একটির দাম অপরিবর্তিত।
তবে যে নয়টির দাম বেড়েছে, তার মধ্যে দুটির দাম বেড়েছে দিনের দাম বাড়ার প্রান্তসীমা। নর্দান, গ্রিন ডেল্টা ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি হওয়া চারটি কোম্পানির তিনটি। এর মধ্যে নর্দান বেড়েছে ১০ শতাংশ, অন্য দুটি যথাক্রমে ৯.৯৫ ও ৯.৯৩ শতাংশ বেড়েছে।
জীবন বিমা কোম্পানির মধ্যে পদ্মা লাইফের লেনদেন স্থগিত কোম্পানিটির অন্তর্বর্তী লভ্যাংশের রেকর্ড ডেটের কারণে। বাকি ১১টির মধ্যে দাম বেড়েছে ১০টির। আর এগুলোর মধ্যে এক দিনে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা ছুঁয়েছে চারটি। আরও কয়েকটি দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমার কাছাকাছি।
প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৮৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯৭ টাকা ১০ পয়সা।
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ বেড়ে ১০৯ টাকা ৯০ পয়সা দরের শেয়ার পৌঁছেছে ১২০ টাকা ৮০ পয়সায়।
ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯০ পয়সা।
ফারইস্ট লাইফের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
লেনদেন ও শেয়ারমূল্য দেখছেন বিনিয়োগকারী
এদিন সবচেয়ে বেশি দর পতন হওয়া তালিকায় শীর্ষেও ছিল বিমা কোম্পানি।
ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের দিনের সর্বোচ্চ দর পতন হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ ছাড়া কন্টিনেন্টাল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর কমেছে ৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ। মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ৪ দশমিক ৫৩ শতাংশ। প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারপ্রতি দর কমেছে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ।
আলো-আঁধারি মিলিয়ে বস্ত্র খাত
সম্প্রতি উত্থান হলেও সোয়া তিন বছরে পুঁজিবাজার সর্বোচ্চ অবস্থানে যাওয়ার দিন বস্ত্র খাতে মিশ্র অবস্থা দেখা গেছে।
৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৩১টির। কমেছে ১৬টির। আর দর পাল্টায়নি ৯টির।
ড্রাগন সোয়েটার, মেট্রো স্পিনিং, কাট্টালি টেক্সটাইলের দাম দিনের সর্বোচ্চ দাম বৃদ্ধির সীমা ছুঁয়েছে এদিন।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছ ৫ হাজার ৯৮৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৪ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৮৫ পয়েন্টে।
বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে লেনদেনের চিত্র
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৯ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হয়েছে মোট ২ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৮ কোটি টাকা। এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩৬০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ২৭৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৭ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হয়েছে মোট ৭৩ কোটি টাকা।