বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুই ঘণ্টায় ৩০ লাখ টাকার লিচু বিক্রি

  •    
  • ২২ মে, ২০২১ ১৯:৫৮

আওলিয়া বাজারে লিচুর হাট বসে ভোররাত ৪টায়। সকাল ৬টায় বিক্রিবাট্টা শেষ। প্রতিদিন এই বাজারে লিচু বিক্রি হয় কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার। 

লিচুর মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওলিয়া বাজারের চেহারা বদলে যায়। বিজয়নগর উপজেলার পুরোনো এই বাজারে সারা দেশের লিচু ব্যবসায়ীরা আসতে থাকে দলে দলে। এখানকার লিচু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। মৌসুমি একটি ফল হয়ে ওঠে পুরো এলাকার বাণিজ্যের প্রাণ।

তবে শুধু আওলিয়া বাজারই নয়, লিচুর হাট বসে সিংগারবিল, হরষপুর, চান্দুরা, বিষ্ণুপুর, ছতরপুর, আজমপুর, চম্পকনগর বাজারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় লিচুর কদর সারা দেশে। আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় প্রচুর লিচু হলেও বিজয়নগরেই সবচেয়ে বেশি লিচুবাগান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, আখাউড়া ও কসবা উপজেলায় ৪৯৫ হেক্টর জমিতে বোম্বাই, পাটনাই ও চায়না-৩ জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু বিজয়নগরেই চাষ হয়েছে ৩৭৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় লিচুর বাগান রয়েছে ৪৩০টি, যার বেশির ভাগই বিজয়নগরে।

এখানকার লিচুবাগানের কিছু লিচু এপ্রিলের শেষের দিকে বাজারে উঠলেও মে মাসের মধ্যবর্তী সময়ে আওলিয়া বাজারে লিচু বিক্রি শুরু হয়ে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফলের এই চলতি মৌসুমে প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন বাজারে লক্ষাধিক টাকার লিচু বেচাকেনা হচ্ছে। লিচুচাষি ও বাগানের মহাজনদের মুখে হাসি ফুটেছে।

আওলিয়া বাজারে বড় ব্যবসায়ী মুমিন নিউজবাংলাকে জানান, বিজয়নগরের সবচেয়ে বড় বাজার পাহাড়পুর ইউনিয়নের আওলিয়া বাজার। এখানে সারা দেশের লোক এসে বাগান থেকে লিচু কিনে এই বাজারে বিক্রি করে।

বাজার বসে ভোররাত ৪টায়। সকাল ৬টার বিক্রিবাট্টা শেষ। প্রতিদিন এই বাজারে লিচু বিক্রি হয় কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার।

মুমিন আরও বলেন, লিচুর পুরো মৌসুমে এ বাজারে ৭ থেকে ৮ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হয়। অনেক সময় বিক্রি ১০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়। এবার বাম্পার ফলন আর ব্যবসায় গতিপ্রকৃতি দেখে অনুমান করা হচ্ছে বিক্রি ১২-১৩ কোটি টাকা পার হয়ে যাবে।

বিজয়নগরের বিষ্ণপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক বিপুল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয়নগরে বেশির ভাগ বাড়িতে এক পাশের সামান্য জায়গা থাকলেই লিচুগাছ রোপণ করে এলাকার বাসিন্দারা। আমার বাগানে ৩০টির বেশি গাছ রয়েছে। সবগুলোই এলাচ লিচু জাতের। তবে অনেকেই দেশি লিচু, এলাচ লিচু, চায়না লিচু, পাটনাই লিচু ও বোম্বাই লিচু মিলিয়ে চাষ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাজারের খুচরা বিক্রেতারা ভোররাতে এসে ভিড় জমায়। আমরা তাদের কাছে গাছ হিসেবেই পাইকারি দরে বিক্রি করি। পরে তারা উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে নিয়ে বিক্রি করে।’

বাজার বসে ভোররাত ৪টায়, সকাল ৬টার বিক্রিবাট্টা শেষ।

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার ব্যবসায়ী রানা মিয়া প্রতিবছর হরষপুর গ্রামের মলাই মিয়ার বাগান থেকে লিচু কেনেন। তিনি মুঠোফোনে নিউজবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান, গতবার তিনি ওই বাগান থেকে লিচু কিনেছেন ৭ লাখ টাকার। সেটি মাধবপুর বাজারে নিয়ে ১০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিজয়নগরের উৎপাদিত লিচু খুবই ভালো হয়। তা ছাড়া পার্শ্ববর্তী এলাকা হওয়ায় ছোট ট্রলি নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে আসা-যাওয়া করা যায়। কাকডাকা ভোরে বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে ছোট ট্রলি দিয়ে মাধবপুরে নিয়ে যান তিনি। কিছু বিক্রি করেন আওলিয়া বাজারে।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পাহাড়পুর, বিষ্ণুপুর, কাঞ্চনপুর, খাটিঙ্গা, কাশিমপুর, সিঙ্গারবিল, চম্পকনগর, কালাছড়া, মেরাশানী, সেজামুড়া, কামালমুড়া, নুরপুর, হরষপুর, মুকুন্দপুর, নোয়াগাঁও, অলিপুর, চান্দপুর, কাশিনগর, ছতুরপুর, রূপা, শান্তামোড়া, কামালপুর, কচুয়ামোড়া, ভিটি দাউপুর এলাকায় পাঁচ শতাধিক লিচুবাগান রয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উপপরিচালক রবিউল আলম মজুমদার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০০৩ সালের কিছু আগে থেকে বিজয়নগর উপজেলায় ব্যাপক হারে লিচুর চাষ শুরু হয়। লিচু চাষে পরিশ্রম কম, লাভ বেশি। তাই বিজয়নগর এলাকার বেশির ভাগ লোক এখন লিচু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, কম শ্রমে বেশি লাভ হয় বলে ধানি জমিগুলোতেও লিচুগাছ লাগিয়েছেন অনেক চাষি। লিচুগাছে মুকুল ও গুটি এলেই প্রথম দফায় স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলার মহাজনের কাছে গাছ বিক্রি করা হয়। গাছে মুকুল ও গুটি আসার পর দ্বিতীয় দফায় গাছ বিক্রি হয়। লিচু ছোট আকার ধারণ করলে তৃতীয় দফায় বিক্রি হয়। লিচু বড় আকার ধারণ করলে চতুর্থ দফায় বিক্রি হয়। তবে সব চাষি এক মৌসুমের জন্য লিচু বিক্রি করেন।

জেলায় এ বছর লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় ১৫ কোটি টাকার বেশি লিচু বিক্রি হবে। বেশির ভাগ অর্থ আসবে বিজয়নগর থেকে। কারণ লিচু সবচেয়ে বেশি ফলন ও আমদানি-রপ্তানি হয় বিজয়নগরে, বলেন এই কর্মকর্তা রবিউল।

এ বিভাগের আরো খবর