দেশের হাওর অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ধানের মোকাম হিসেবে পরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ মেঘনা নদীর বিওসি ঘাট। এই মোকামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জসহ হাওরাঞ্চলে উৎপাদিত ধান বিক্রির জন্য নৌপথে আনেন কৃষক ব্যবসায়ীরা।
প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এসব ধান বেচাকেনা।
এবার হাওরাঞ্চলে বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। তবে সপ্তাহে সপ্তাহে ধানের দামের উত্থান-পতনে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। আতঙ্কে আছেন আড়তদার, ব্যবসায়ীরাও।
দাম কমার প্রভাব পড়লেও বাড়ার সুবিধা থেকে বরাবরের মতো এবারও বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।
কৃষকদের অভিযোগ, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমাচ্ছে।
ব্যবসায়ীর বলছেন, অনেকেই ধান না শুকিয়ে ভেজা অবস্থাতেই বিক্রি করতে আনছেন বলেই দাম কম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে ধান সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। আর সেদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে ৩১ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন।
সরকারিভাবে আতপ চাল সংগ্রহের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকার এবার প্রতি কেজি ধান ২৭ টাকা, সেদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৪০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। বোরো সংগ্রহের এই অভিযান চলবে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জ নদীর পাড় বিওসি ঘাটে ব্যাপক পরিমাণ নতুন বোরো ধান বেচাকেনা হতে দেখা গেছে।
অনেক কৃষক বলছেন, গত আমন মৌসুমের শেষ সময়ে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় এবার তারা ধান আগেই হাতছাড়া করতে চান না।
আশুগঞ্জের বিওসি ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ব্যবসায়ীরা আতপ চাল কেনার ক্ষেত্রে কম আগ্রহী। সরকারিভাবে আতপ চাল না কেনায় মিলাররা এই ধান কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
ঘাটে গত সপ্তাহে ধানের দাম বাড়তির দিকে থাকলেও তা আবার কমেছে। এখন সব জাতের ধানেই মণপ্রতি কমে গেছে ৭০ টাকার বেশি।
কৃষক আলমগীর মিয়া বলেন, ‘ধানের বাজার বেশি কমে গেলে আমরা টিকে থাকতে পারব না। তখন অর্থনৈতিকভাবে বিপদে পড়তে হয় আমাদের। আমাদের দাবি, বাজারে দামের ভারসাম্য যেন ঠিক রাখে কর্তৃপক্ষ।’
এ ব্যাপারে জেলা চাতাল, কলমালিক সমিতির সভাপতি বাবুল আহম্মেদ জানান, কারসাজি করার অভিযোগ সঠিক না। তবে বোরো ধান ভেজা হওয়ায় মূল্য কিছু কম-বেশি হচ্ছে।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বীরনাথ চৌধুরী বলেন, ‘বাজার মনিটরিং করার জন্য ১৯ টিম কাজ করছে। কেউ যাতে ধানের বাজারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে আমরা সর্তক আছি।’