বিশেষ লেনদেনের জন্য কিছু শাখা ছাড়া ঈদের ছুটিতে বন্ধ হয়ে গেছে ব্যাংক। তবে চালু থাকবে ব্যাংকের বুথ। কার্ড দিয়ে ২৪ ঘণ্টাই তোলা যাবে টাকা।
কিন্তু বাড়তি চাপের কারণে বুথের সেবা পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
গ্রাহকরা প্রতি বছরই অভিযোগ করেন, বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা থাকে না। নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে জটিলতাও দেখা যায়। ফলে ঈদের ছুটিতে টাকার অতি প্রয়োজনে গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ে। বুথ বদলিয়েও কোনো সমাধান হয় না গ্রাহকের।
ব্যাংকগুলোতে পর্যপ্ত টাকা রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি বছরই তফসিলি ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিলেও তা অনেক সময় মানা হয় না।
চলতি বছরেও ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকরা বুথ থেকে টাকা তোলায় সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে অনেক গ্রাহক এক ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে অন্য ব্যাংকের বুথ থেকে টাকা তুলতে পারছেন না।
রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় চলতি সপ্তাহে এটিএমে অর্থ সংকটের খবরও পাওয়া গেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বুথে কঠোর নজরদারি না থাকায় প্রতিবার ঈদের আগে এমন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়। চেকবইয়ের ঝামেলা এড়াতে তারা এটিএম কার্ড ব্যবহার করছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় টাকা তুলতে গিয়ে দেখছেন বুথে টাকা নেই বা বুথ নষ্ট।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটিএম বুথে গ্রাহক হয়রানি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতি বছর অনেক অভিযোগ আসে। আগে থেকে ব্যাংকগুলোকে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি নিরাপত্তা জোরদারের জন্যও নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এ ব্যাপারে আগের থেকে হয়রানি কমেছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকার আবদুস সামাদ এবি ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন সেখানে অন্য ব্যাংকের কার্ড দিয়ে টাকা তোলা যাচ্ছে না। একই এলাকার সিটি ব্যাংকের বুথেও দেখেন এই সমস্যা।
মনিপুর এলাকার ফয়সাল আহমেদ ইসলামী ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে গেলে নিরাপত্তাকর্মী জানান বুথে টাকা নেই।
তিনি বলেন, ‘বাসার পাশেই বুথ আছে। এজন্য গতকাল আর ব্যাংকে যাওয়া হয়নি। কিন্তু সকালে টাকা তুলতে এসে দেখি বুথে টাকা নেই।’
এরপর তিনি পাশের কয়েকটি বুথ ঘোরার পর টাকা তুলতে সক্ষম হন।
বুথের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের কেনাকাটার জন্য বুথে টাকা উত্তোলন বেড়েছে। সেজন্য দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে টাকা। ফের বুথে টাকা জমা করতে দেরি হওয়ায় গ্রাহকরা সমস্যায় পড়ছেন।
অনেকেই এটিএম বুথে নগদ টাকা না পেয়ে চেকবইয়ের দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু ব্যাংক তিন দিন বন্ধ। চেক দিয়ে রোববারের আগে টাকা তোলা যাবে না।
বর্তমানে ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে কার্ড দিয়ে এককালীন ১ লাখ টাকা তোলা যায়। আগে যা ছিল ৫০ হাজার। গ্রাহকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে চলতি বছর ১৩ এপ্রিল এক সার্কুলারে এ সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারা দেশে ব্যাংকগুলোর ১২ হাজার ১১১টি এটিএম বুথ রয়েছে। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ৮ হাজার ৫২৯টি, মফস্বলে আছে ৩ হাজার ৬৮২টি।
সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের বুথ। তাদের বুথের সংখ্যা ৫ হাজার।
এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের আছে ৪৪৭টি, সিটি ব্যাংকের ৩৬৯টি, ইসলামী ব্যাংকের ২৯১টি, এবি ব্যাংকের ২৭০টি এটিএম বুথ রয়েছে।
এ ছাড়া ইস্টার্ন ব্যাংকের ২০০টি, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭৬টি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ১২০টি, যমুনা ব্যাংকের ১১২টি, ট্রাস্ট ব্যাংকের ১১৪টি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) ও পূবালী ব্যাংকের ৯৭টি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ৯৬টি, ব্যাংক এশিয়ার ৮১টি, সাউথইস্ট ব্যাংকের ৭০টি, এনসিসি ব্যাংকের ৫৭টি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৪৮টি, ঢাকা ব্যাংকের ৪৬টি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৪৪টি।
এক্সিম ব্যাংক ও এইচএসবিসি ব্যাংকের বুথ আছে ৩৯টি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ৩৫টি, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ৩৪টি, ওয়ান ব্যাংকের ৩০টি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ২১টি, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৭টি, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১৩টি, প্রিমিয়ার ব্যাংকের ৮টি ও উত্তরা ব্যাংকের ৭টি বুথ আছে।
নতুন অনুমোদন পাওয়া ৯ ব্যাংকের মধ্যে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৪টি বুথ ছাড়া আর কোনো ব্যাংকই এখনও বুথ খুলতে পারেনি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানার ৫ ব্যাংকের মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ১০০টি, জনতা ব্যাংকের ৬৪টি, বেসিক ব্যাংকের ৮টি ও অগ্রণী ব্যাংকের ২৬টি এটিএম বুথ আছে।
বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাতটি এটিএম বুথ রয়েছে। তবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কোনো বুথ নেই।
বিদেশি মালিকানার ব্যাংকের মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ১৯টি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ছয়টি, হাবিব ব্যাংকের পাঁচটি, ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের তিনটি এটিএম বুথ রয়েছে।
সিটি ব্যাংক এনএ এবং ওরি ব্যাংকের এখনও বাংলাদেশে কোনো এটিএম বুথ খোলেনি।