বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

করোনাকালেও ঢিমেতেতালা স্বাস্থ্য খাত

  •    
  • ৩ মে, ২০২১ ০৯:৩০

করোনায় দেশে সবচেয়ে সচল সরকারি খাত স্বাস্থ্য। অথচ গত ৯ মাসে এ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন অবস্থা করুন। বাস্তবায়ন হারে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের মধ্যে তাদের অবস্থান ৫৩তম।

করোনাকালে বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দপ্রাপ্ত পাঁচ খাতের একটি স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু বেশি বরাদ্দ পেলে কী হবে, সে অর্থ খরচ বা কাজ বাস্তবায়নে তাদের তেমন নড়চড় নেই। এডিপি বাস্তবায়ন চিত্র বলছে, অর্থবছরের চার ভাগের তিন ভাগ সময় পার হলেও খরচ বা কাজের দিক থেকে তলানিতে থাকা ছয় খাতের একটি স্বাস্থ্য খাত। করোনার মোকাবিলায় সব হাসপাতালে আইসিইউ স্থাপন, ভেন্টিলেটর স্থাপন, স্থাস্থ্য কর্মীদের প্রশিক্ষণসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প রয়েছে এ খাতে।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সবশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত সার্বিক এডিপি বাস্তবায়ন অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। গত মার্চ পর্যন্ত জাতীয় গড় ৪২ শতাংশের মতো। করোনার এ দুর্যোগে স্বাস্থ্যসেবা খাতের অবস্থা আরও শোচনীয়। এ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার জাতীয় গড়েরও অর্ধেক, ২১ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবমতে, করোনা মহামারিতে সরকার স্বাস্থ্যসেবা খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। এমনি এডিপি ও সংশোধিত এডিপিতে স্বাস্থ্যসেবা খাত ও করোনা মোকাবিলার প্রকল্পগুলো ছিল অগ্রাধিকার। গত অর্থবছরের শেষ দিকে করোনা হানা দেয়। এ অবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দও বাড়ানো হয়।

২০১৯-২০ অর্থবছরের মূল এডিপিতে এ বিভাগের বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। কিন্তু কাজের গতি না থাকায় সংশোধিত এডিপিতে তাদের বরাদ্দ কমিয়ে করা হয় ৭ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। অর্থ কমিয়েও বছর শেষে তাদের এডিপির কাঙ্ক্ষিত বাস্তবায়ন হয়নি। ৭৪ শতাংশ বা ৫ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরুতেও তারা ২ দুই হাজার কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে।

তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ অনেক বাড়ানো হয়। আশা ছিল, করোনাকালে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনা ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম বাড়িয়ে মানুষের সেবা বাড়ানো যাবে। গত বছরের সংশোধিত এডিপির সঙ্গে অতিরিক্ত প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরুতে এ বিভাগের জন্য রাখা হয় ৯ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকা।

তবে শুরু থেকে এ বিভাগের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ছিল আগের বছরের মতো। অর্থবছরের ছয় মাসে মাত্র ১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা ব্যয় করতে পারে এ বিভাগ। তবু সংশোধিত এডিপিতে তাদের বরাদ্দ বাড়িয়ে দেয় সরকার।

বাড়তি সোয়া ২ হাজার কোটি টাকা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রেলকে টপকে বরাদ্দের দিক দিয়ে শীর্ষ পাঁচে উঠে আসে স্বাস্থ্য। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ তাতে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।

গত ৯ মাস বা মার্চ পর্যন্ত এ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন অবস্থা করুণ। তারা মাত্র ২ হাজার ৫১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। বাস্তবায়ন হারে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয়-বিভাগের মধ্যে তাদের অবস্থান ৫৩তম।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব লোকমান হোসেন মিয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনি ফোনে বার্তা পাঠিয়েও উত্তির মেলেনি।

পরে এ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. হেলাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ‘এখন মন্তব্য করা যাবে না’ বলে কল কেটে দেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এই মহামারি এক বছরে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধীন সংস্থাগুলোর সম্মুখসারিতে থাকার কথা। অথচ তাদের কাজ ও প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ সারিতে। তাদের সক্ষমতার অভাবের কারণে পুরো জাতিকেই ভুগতে হতে পারে।

অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, করোনায় স্বাস্থ্যসেবা খাত ঢেলে সাজাতে এবং এ খাতের বরাদ্দ বাড়াতে বলছে সবাই। কিন্তু টাকা দিলে কী হবে, তা তো খরচ করতে হবে। করোনার এই দুর্যোগের সময় যাদের কাজ সবচেয়ে বেশি হওয়ার কথা, তারা তা পারছে না। এ সময় তাদের আরও শক্ত হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের হাতে থাকা অর্থই খরচ করতে পরছে না। এমনটা কেন হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প স্বাস্থ্য খাতে

করোনার প্রকোপের শুরুতেই গত বছর এই মহামারি মোকাবিলায় বড় দুই দাতা সংস্থার অর্থায়নে নেয়া হয় দুই প্রকল্প। এপ্রিলে নেয়া এই দুটি প্রকল্প গত বছরের জুনে অনুমোদন দেয় সরকার। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রত্যেকটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। প্রতিটি হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন, প্রতিটি হাসপাতালে ভেন্টিলেটর স্থাপন এবং পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য যন্ত্রপাতি কেনার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ দুই প্রকল্পের একটি হচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ‘কোভিড-১৯ রেসপন্স ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স’ প্রকল্প। অপরটি বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডামিক প্রিপেয়ার্ডনেস’।

প্রথম প্রকল্পটির লক্ষ্য কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যৎ মহামারির জন্য পিসিআরসহ আধুনিক মাইক্রো-বায়োলজি ল্যাবরেটরি স্থাপন এবং ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট নিশ্চিত করা। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণের কথাও কথা রয়েছে এতে। প্রকল্পে খরচ ধরা হয় ১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অপর প্রকল্পটির লক্ষ্য কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত করা ও পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানো, জেলা হাসপাতালে আইসোলেশন ইউনিট এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট স্থাপন, সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সংক্রামক রোগ বিভাগ, জেলা পর্যায়ে এক্সপান্ডেড প্রোগ্রাম ফর ইম্যুনাইজেশন (ইপিআই) ইউনিট এবং সব সেকেন্ডারি এবং টারশিয়ারি হাসপাতালে ইনফেকশন প্রিভেনশন ইউনিট স্থাপন। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা আছে ১ হাজার ১২৭ কোটি টাকা।দুই প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর। তবে এক বছর পেরিয়ে প্রকল্পের খুব একটা অগ্রগতি নেই। বরং শুরু থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এসব প্রকল্পে। এখনও দেশের অর্ধেক হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপন হয়নি। হয়নি কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থা।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভিন্ন সংস্থার অধীনে এ রকম আরও ৫৩টি প্রকল্প রয়েছে চলতি অর্থবছরের এডিপিতে।

মৌলভীবাজারের ২৫০ শয্যার হাসপাতালে গত বছর পিসিআর ল্যাব স্থাপনের চাহিদা দেয়া হয়। ছবি: নিউজবাংলা

করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বিএসএমএমইউ-এর সাবেক উপাচার্য ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় আমাদের স্বাস্থ্য খাত খুব দক্ষতা দেখাতে পারেনি। তাদের উচিত ছিল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে সেন্টাল অক্সিজেন সিস্টেম চালুর ব্যবস্থা। জেলা পর্যায়ে আইসিউ স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও রয়েছে। এখনও প্রায় ৩৬ জেলায় আইসিইউ নেই, ২৮ জেলায় আছে। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রধান সমস্যা সক্ষমতা ও দক্ষতার অভাব। তাদের জিনিসপত্র বিমানন্দরে নষ্ট হবে, হাসপাতালের সামনে উঠানে পড়ে নষ্ট হবে। তবে এটাও ঠিক, বছরে ১০-১২ হাজার কোটি টাকা খরচের সক্ষমতা বা অভিজ্ঞতা স্বাস্থ্য খাতের নেই। ফলে যা হবার তা-ই হচ্ছে।’

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা চিকিৎসায় হাসপাতালে বেড বেড়েছে, আইসিইউ বেড়েছে। সারা দেশের ১৩০টি হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন দেয়া হয়েছে। করোনা চিকিৎসায় ২০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ঢাকায় করোনার জন্য আড়াই হাজার বেড ছিল। এখন সাত হাজার বেড করা হয়েছে। এটা আমরা রাতারাতি করতে সক্ষম হয়েছি।’

এ বিভাগের আরো খবর