বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘লকডাউন আতঙ্ক’ কাটায় পুঁজিবাজারে স্বস্তি

  •    
  • ১৫ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:৩৬

‘ধারণা করা হয়েছিল লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করবে। কিন্তু এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা যৌক্তিক আচরণ করছেন। তারা শেয়ার বিক্রি না করে বরং শেয়ার কিনছেন। যার ফলে পুঁজিবাজারে পতন হয়নি।’  

লকডাউন আতঙ্কে দুই সপ্তাহ ধরে টালমাটাল পুঁজিবাজার। লেনদেন স্থগিত হয়ে যাবে- এমন আশঙ্কায় বিধিনিষেধ দেয়ার আগেই বাজারে ব্যাপক দরপতন দেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে লেনদেন স্থগিত না হওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনা শুরু করায় শেয়ারদর, সূচক, লেনদেন- সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে ইতিবাচক প্রবণতা।

কঠোর বিধিনিষেধের পর প্রথম কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর সূচকে যোগ হলো ৫১ পয়েন্ট। ৬৬ কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে দেয়ার পর দুই দিন ব্যাপকভাবে দাম কমলেও বেশ কিছু কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার কারণেও তৈরি হয়েছে আস্থা।

সর্বাত্মক লকডাউনে নানা নাটকীয়তার মধ্যে চালু রাখা হয়েছে পুঁজিবাজারের লেনদেন। পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যেন নিবিঘ্নে কর্মস্থলে যেতে পারেন, সে জন্য সহযোগিতা নেয়া হয়েছে পুলিশের।

এই লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলবে না- এটি নিশ্চিত করা হয় সোমবার। কারণ, সেদিন সিদ্ধান্ত আসে বন্দর এলাকা ছাড়া অন্য ব্যাংক বন্ধ থাকবে। তবে মঙ্গলবার নাটকীয়ভাবে পাল্টে যায় পরিস্থিতি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়, ৫ থকে ১২ এপ্রিলের চেয়ে আধা ঘণ্টা বেশি লেনদেন হবে ব্যাংকে।

এরপর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও সিদ্ধান্ত নেয় লেনদেন চলবে। আর ব্যাংকের লেনদেন আধা ঘণ্টা বাড়ায় পুঁজিবাজারেও লেনদেন আধা ঘণ্টা বেশি হয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত আসার পর প্রথম কার্যদিবস বুধবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন সরকারি ছুটির কারণে লেনদেন বন্ধ ছিল।

বৃহস্পতিবার লেনদেনের শুরু থেকেই পুঁজিবাজার ছিল চাঙা। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে সূচক।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর উপমহাব্যবস্থাপক শফিকুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থায় মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫০ শতাংশের উপস্থিতিতে চলছে ডিএসইর কার্যক্রম। সরকারের সর্বাত্মক লকডাউনে জনসাধারণের চলাচলে বিধিনিষেধ থাকলেও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যাতায়াতের কোনো সমস্যা হয়নি। ব্রোকার হাউজগুলো থেকেও এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।’

আগ্রহ মিউচ্যুয়াল ফান্ডে

লেনদেনে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের। পাশাপাশি ছিল নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

দিনের সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি পাওয়া ১৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৭টি ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড। যার সবগুলোর দর বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশের বেশি। আর ৩টি ছিল ব্যাংকবহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পাওয়া ১০টি কোম্পানির ৭টিই ছিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড

এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ডের ইউনিটপ্রতি দর বেড়েছে ১০ শতাংশ। ইউনিটপ্রতি দর ৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ৯০ পয়সা।

সিএপিএম বিডিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড ওয়ানের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ইউনিটপ্রতি দর ৮ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৮ টাকা ৯০ পয়সা।

এসইএমএল লেকচার ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

সিএপিএম আইবিবিএল ইসলামি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। আইএফআইসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।

এ ছাড়া এ তালিকায় আছে ফাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, এনসিসিবিল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, ইবিএল ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

নন ব্যাংক আর্থিক খাতের মধ্যে বৃহস্পতিবার দর বৃদ্ধিতে ছিল লংকাবাংলা ফিন্যান্স, যার শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ইউনিয়ন ক্যাপিটেল লিমিটেডের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

দর বেড়েছে দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির

বৃহস্পতিবার লেনদেনে দর বেড়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের।

রেকিট বেনকিউজার শেয়ার দর বেড়েছে ৩২ টাকা ১০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ টাকায়। ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ টাকা ৬০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮০৩ টাকায়।

ম্যারিকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর লেনদেনের শুরুতে বাড়লেও শেষ কমেছে ৬ টাকা ৯০ পয়সা। এ সময়ে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৪৬ টাকায়।

বার্জার বাংলাদেশের প্রতিটি শেয়ারের দর কমেছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। রেনাটা লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ৩ টাকা ২০ পয়সা। ওয়ালটানের শেয়ারপ্রতি দর বেড়েছে ১৯ টাকা ২০ পয়সা।

বিশ্লেষকের বক্তব্য

ব্র্যাক ইপিএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সাবেক প্রধান গবেষণা কর্মকর্তা দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধারণা করা হয়েছিল লকডাউনে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত রাখার চেষ্টা করবে। কিন্ত এ সময়ে বিনিয়োগকারীরা যৌক্তিক আচরণ করছেন।

‘তারা শেয়ার বিক্রি না করে বরং শেয়ার কিনছেন। যার ফলে পুঁজিবাজারে পতন হয়নি।’

কারা শেয়ার কিনছেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও কিনছেন আবার প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও কিনছেন। কারণ, এখন বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের যে দর তাতে বিনিয়োগ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

তিনি বলেন, ‘যাদের শেয়ার বিক্রি করার কথা তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। ভালো দর ফেলেই হয়তো বিক্রি করবেন। আগের মতো লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে লোকসান কমানোর প্রবণতা নেই।’

মিউচ্যুয়াল ফান্ডের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে দর না বাড়ায় এখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগ উপযোগী। আর ফান্ডগুলো ভালো ব্যবসা করায় ভালো মুনাফাও দিচ্ছে। এতে আগ্রহ বাড়তে পারে।’

সূচক ও লেনদেন

লেনদেনের এক ঘণ্টায় সূচক উঠে ২৯ পয়েন্ট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উত্থান ছিল সূচকে।

বৃহস্পতিবার কঠোর লকডাউনের মধ্যে পুঁজিবাজারে লেনদেনের চিত্র আশান্বিত করেছে বিনিয়োগকারীদের

দিন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩১০ পয়েন্টে।

শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১০ দশমিক ৫০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২০৯ পয়েন্টে।

বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২৯ দশমিক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৬ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২১৬টির, কমেছে ৯০টির। দর পাল্টায়নি ৪৯টির। লেনদেন হয়েছে ৫৫৬ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৫১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ লেনদেন বেড়েছে ৪৫ কোটি টাকা।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৮৪ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৯ পয়েন্টে।

লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৪৪টির, কমেছে ৬৪টির। দর পাল্টায়নি ২১টির। লেনদেন হয়েছে মোট ১৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এ বিভাগের আরো খবর