আগামী মে মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের দুটি প্লান্টের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এমন অবস্থায় ব্যবসায়িক অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে কোম্পানিটির।
প্লান্টের মেয়াদ শেষ হলে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের কী হবে সেটি নিয়ে হচ্ছে আলোচনা। তলব করা হয়েছে কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্তা ব্যক্তিদের। দেশে এখন বাই ব্যাক আইন কার্যকর না থাকায় বিনিয়োগাকারীদের মধ্যেও এ নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চিয়তা।
এমন অবস্থায় কোম্পানিটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী, লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে কি না এসব বিষয় স্পষ্ট ধারনা পেতে কেপিসিএলকে তলব করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
মঙ্গলবার এসব বিষয় জানাতে বিএসইসিতে আসেন কেপিসিএলের কর্মকর্তারা। সঙ্গে ছিল সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ও সামিট গ্রুপের প্রতিনিধিরাও।
আলোচনায় হয় সেসব বিষয়ে
মঙ্গলবার কেপিসিএল’র নেতৃবৃন্দ বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যেখানে বিএসইসিকে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ সার্বিক বিষয়ে অবহিত করা হয়।
এ বিষয়ে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিটির দুটি প্লান্টের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে কথা হয়। লাইসেন্স নবায়নের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।
লাইসেন্স নবায়ন সম্ভব হবে কি না প্রশ্নে শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো খুবই ভালো ব্যবসা করছে। তাদের কার্যক্রমের কারণেই এখন আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছি। এমন অবস্থায় কোম্পানিও চাইবে না লাইসেন্সের কারণে প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাক।
‘কেপিসিএল’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আছে ইউনাইটেড পায়রা প্লান্ট। একই সঙ্গে সামিট গ্রুপও চাইলে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে কমিশনের কোনো আপত্তি থাকবে না। তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গুলো আমরা শোনেছি। আমাদের ভালো মনে হয়েছে। তবে কোম্পানি যায় করুক না কেন, বিনিয়োগাকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ গুরূত্ব দেবে বিএসইসি।’
এর আগে গত ১৫ মার্চ বিএসইসির সঙ্গে ব্যবসায়িক কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয় কেপিসিএ’র পরিচালনা পর্ষদের। আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসি থেকে কোম্পানির প্লান্ট দুটি অবসায়ন হলে কীভাবে তা করা হবে সেটি জানাতে বলা হয়। এছাড়া কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও লিখিত আকারে জানাতে বলেছিল বিএসইসি।
ফলে মঙ্গলবার যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে সেটি ছিল পূর্ব নির্ধারীত।
এ বিষয়ে খুলনা পাওয়ারের কোম্পানি সচিব মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টির সঙ্গে আমি সরাসরি সম্পৃক্ত নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন।’
পুঁজিবাজারে কেপিসিএল’র লেনদেনের চিত্র
লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হচ্ছে যেসব প্লান্টের
কেপিসিএল’র তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে একটির মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। বাকি দুটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী মে মাসে।
এরমধ্যে খানজাহান আলী পাওয়ার লিমিটেডের ৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৩১ মে। আর খুলনা পাওয়ার কোম্পানি ইউনিট টু ১১৫ মেগাওয়াট কেন্দ্রের মেয়াদ শেষ হবে ২৮ মে।
মূল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও কেপিসিএলের হাতে থাকবে সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড পায়রা পাওয়ার প্লান্ট। গত ১৮ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু হয় এটির।
এছাড়া পটুয়াখালী জেলার খলিসাখালী এলাকায় ১৫ বছর মেয়াদি ১৫০ মেঘাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩৫ শতাংশের মালিকানা রয়েছে খুলনা পাওয়ারের।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে আয় কমেছে
খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (কেপিসিএল) তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ার প্রতি আয় কমেছে বলে জানিয়েছে।
কোম্পানিটির অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০ সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে দশমিক ৬৬ পয়সা। সেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল দশমিক ৮৫ শতাংশ।
জুলাই-ডিসেম্বর ২০ সময়ে কেপিসিএল’র শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৫৭ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ৯৬ পয়সা।
কেপিসিএল’র শেয়ারে কোনো আগ্রহ নেই বিনিয়োগকারীদের। ছবি: সংগৃহীত
কার কাছে কত শেয়ার
কোম্পানিটির ৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ১৩ হাজার ১৭৯টি শেয়ারের মধ্যে ৩০.০১ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে আছে ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারী ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা।
যদি কোম্পানিটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ আর নবায়ন না হয়, তাহলে ১১ কোটি ৯৬ লাখ ২১ হাজার ৩৬৬টি শেয়ারের মালিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কী হবে, সে প্রশ্ন উঠেছে।
কোনো কোম্পানি অবসায়ন হলে সেই কোম্পানির শেয়ার বাই ব্যাক করার কোনো আইন বাংলাদেশে নেই। এই অবস্থায় কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে উৎকণ্ঠিত অনেক মানুষ।
২০১০ সালে চাঙা পুঁজিবাজারে সরাসরি তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি হয় গড়ে ১৯৪ টাকা করে। ছয় বছর বোনাস শেয়ার দিয়ে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩৯৭ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
এছাড়া কোম্পানির মোট শেয়ারের ৬৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ শেয়ার ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে দশমিক ৩০ শতাংশ শেয়ার।
ফ্লোর প্রাইসেও ক্রেতা নেই
বর্তমানে কোম্পানির শেয়ার গত ২৮ অক্টোবর থেকে লেনদেন হচ্ছে ফ্লোর প্রাইসে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর বাজার মূল্যের বিবেচনায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ঠিক করে দেয় কোনো কোম্পানির শেয়ারের দর এর চেয়ে নিচে নামতে পারবে না।
কেপিসিএলের ক্ষেত্রে এই দাম ঠিক হয় ৪৫ টাকা ৩০ পয়সা। ২৮ জানুয়ারি থেকে এই দামেই রয়েছে শেয়ার। বিক্রির পরিমাণ খুবই কম।
গত বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছে ১৫ হাজার ৩৬৩টি শেয়ার। আর মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৯২টি শেয়ার।
কোম্পানিটি ২০১০ সালের। তালিকাভুক্তির বছরে ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।
এরপর ২০১০ সালের জন্য ২০ শতাংশ, ২০১১ সালের জন্য ২৫ শতাংশ, ২০১২ সালের জন্য ১২.৫ শতাংশ, ২০১৩ সালের জন্য ৫ শতাংশ এবং ২০১৮ সালের জন্য আবার ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করে।
১৯৪ টাকা ভিত্তি ধরে ১০ বছরের বোনাস শেয়ার হিসাব করলে দাম দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৫৫ পয়সা।
পাঁচ বছর ধরে নগদ লভ্যাংশের দিকে জোর দেন কোম্পানির উদ্যোক্তারা। ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ (শেয়ারপ্রতি সাড়ে সাত টাকা), ২০১৭ সালে ৫৫ শতাংশ, ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৪০ শতাংশ এবং ২০২০ সাল ৩৪ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়।