ব্যাংকে সঞ্চয়ী স্কিমে টাকা রাখলে যে পরিমাণ মুনাফা পাওয়া যাবে, একই পরিমাণ টাকা দিয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার কিনলে তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ লভ্যাংশ পাওয়া যাবে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২৫ পয়সা অর্থাৎ সাড়ে ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ। পাশাপাশি প্রতি সাড়ে ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ৪০টি শেয়ারে তিনটি বোনাস শেয়ার দেবে তারা।
রোববার ব্যাংকটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৬০ পয়সা। এই হিসাবে বাজারদরের ৯.৯৯ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন বিনিয়োগকারীরা। আর ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন সুদ পাওয়া যায় ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। এর সঙ্গে যে বোনাস শেয়ার যোগ হবে সেটি অবশ্য শেয়ারদরের সঙ্গে সমন্বয় হবে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের বিনিয়োগকারীরাও এফডিআরের সুদ হারের চেয়ে বেশি হারে নগদ লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন এবার। ব্যাংকটির বিনিয়োগকারীরা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা করে লভ্যাংশ পেতে যাচ্ছেন। আর এর বাজারমূল্য ১৩ টাকার মতো। সঙ্গে তারা ৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশও পাবেন।
কেবল এই দুটি ব্যাংক নয়, গত পাঁচ বছরই দেখা গেছে ব্যাংকের শেয়ারধারীরা বাজারমূল্যের ৯ থেকে ১৭ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে পেয়ে আসছেন। সঙ্গে পেয়েছেন বোনাস শেয়ার। এত বেশি হারে সুদ কোনো সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো সঞ্চয়ী হিসাবে এখন পাওয়া যায় না।
- আরও পড়ুন: মহামারির বছরে চমক দেখাল ব্যাংক এশিয়াও
রোববার প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ারধারীদের ২০ শতাংশ করে লভ্যাংশ দেয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন ব্যাংকটির কোম্পানি সচিব আকরাম হোসেন। সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হবে।
মহামারির বছরে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় সামান্য বেড়েছিল। তবে চূড়ান্ত মুনাফা অনেকটাই কমে গেছে।
ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৬১০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ১০ কোটি টাকা বেশি। তবে চূড়ান্ত হিসাবে এবার শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ১৩ পয়সা, যা আগের বছর ছিল ৩ টাকা ৪৪ পয়সা।
এবার চূড়ান্ত মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব আকরাম হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি রাখতে হয়েছে বেশি। এ কারণে ইপিএস কমে গেছে।’
তবে মুনাফা কমলেও লভ্যাংশ এবার বেশি দিতে যাচ্ছে ব্যাংকটি। কেবল গত বছর নয়, গত পাঁচ বছরেও এত বেশি লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটি শেয়ারপ্রতি ৫০ পয়সা নগদ ও ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ৫টি বোনাস শেয়ার দিয়েছিল কোম্পানিটি।
এর আগের দুই বছরে যথাক্রমে ১৫.৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশ করে বোনাস শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারপ্রতি ১ টাকা নগদ ও প্রতি ১০০ শেয়ারে দুটি বোনাস শেয়ার পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। আর ২০১৫ সালের জন্য প্রতি ১০টি শেয়ারে একটি বোনাস শেয়ার দেয়া হয়।
এই লভ্যাংশ নিতে হলে বিনিয়োগকারীদের আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত শেয়ার ধরে রাখতে হবে। আর প্রস্তাবিত লভ্যাংশ চূড়ান্ত হবে আগামী ৫ মে বার্ষিক সাধারণ সভায়। করোনাকালে এই সভা হবে ডিজিটাল প্লাটফর্মে।
চলতি বছর এর আগে চারটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ডাচবাংলার পরিচালন মুনাফা ৯০ কোটি বা ৮ শতাংশ কমে গেলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে ২৭ শতাংশ।
- আরও পড়ুন: কমেছে পরিচালন, বেড়েছে চূড়ান্ত মুনাফা
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৩৩ শতাংশ কমে গেলেও চূড়ান্ত মুনাফা বাড়ে প্রায় ১৫ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার পরিচালন মুনাফা ২৫ শতাংশ কমে গেলেও চূড়ান্ত মুনাফা ৪ শতাংশের মতো বাড়ে।
আর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৪০ শতাংশ কমে গেলেও চূড়ান্ত মুনাফা গত বছরের সমান হয়।
এর মধ্যে তিনটি ব্যাংক আগের বছরের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে। আর মার্কেন্টাইল শেয়ারপ্রতি ১০ পয়সা করে কম লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করেছে।