লভ্যাংশের সীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বিএসইসির বৈঠকের দিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর বাড়ল।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবস সোমবার বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। মূল্য সূচকেও যোগ হয়েছে পয়েন্ট। তবে লেনদেন বেড়েছে সামান্য।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশে লাগাম বেঁধে দিয়ে আদেশ দেয়ার পর পুঁজিবাজারে দেখা দেয় স্থবিরতা।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানায়, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লভ্যাশ দিতে পারবে। তবে ব্যালান্স শিটের স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে কারও কারও সর্বোচ্চ লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দেয়া হয় ৫ শতাংশ। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান আবার কোনো লভ্যাংশ ঘোষণাও করতে পারবে না।
এই আদেশ আসার পর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর পড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আদেশ পর্যালোচনার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়। বিএসইসিও অসন্তোষ জানায়।
এই অবস্থায় সোমবার দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে বৈঠকে একটি সমাধান আসতে পারে, এমন আশাবাদ তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের লেনদেন
ব্যাংক খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১৭টির। কমেছে সাতটির আর পাল্টায়নি ছয়টির।
ব্যাংকগুলোর অর্থবছর শেষ হয়েছে ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। মহামারির বছরেও আগের চেয়ে বেশি আয় ও বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে দুটি। একটির আয় গত বছরের সমান হয়েছে। তবে লভ্যাংশ সামান্য কম হয়েছে।
ব্যাংকের শেয়ারের যে দাম, সে তুলনায় যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে, তা বেশ আকর্ষণীয়। এই অবস্থায় রোববারও বাজারে বড় পতনের মধ্যেও ব্যাংকের শেয়ার ছিল উজ্জ্বল।
টানা দ্বিতয় দিন সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারের দর। এক টাকা ২০ পয়সা বেড়ে এখন দাম ২৭ টাকা ৯০ পয়সা।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম
৫০ পয়সা দাম বেড়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংকের, ব্যাংক এশিয়ার বেড়েছে ৪০ পয়সা। ট্রাস্ট ব্যাংকের বেড়েছে ৩০ পয়সা। বাকি ব্যাংকগুলোর দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ পয়সা করে।
২৩টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মধ্যে আগের দিন দর পতন হয় ১৮টির, বাড়ে কেবল একটির। সেই তুলনায় কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে আজ।
২৩টির মধ্যে একটির লেনদেন স্থগিত দীর্ঘদিন ধরে। বাকিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৮টির, কমেছে ৬টির। বাকি ৯টির দর পাল্টায়নি।
৩৫ শতাংশ (শেয়ার প্রতি সাড়ে তিন টাকা) লভ্যাংশ ঘোষণা করা আইডিএলসি ফিন্যান্স লিমিটেডের দর বেড়েছে ৩ টাকা ৩০ পয়সা। আগের দিন এই শেয়ারের দাম কমেছিল ৪ টাকার বেশি।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খাতভিত্তিক বিবেচনা করলে বছরের এ সময়টিতে যেসব খাতে গতি থাকার কথা সেটি হচ্ছে না। আর এ কারণেই মনে হচ্ছে বাজার ভালো যাচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘বৈঠকের কারণে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে আলোচনা যদি কার্যকরি না হয় তাহলে বৈঠকের ইতিবাচক দিকগুলোকে নিয়ে বাজার ভালো করা যাবে না। বিএসইসির উচিত হবে আগামীতে পুঁজিবাজারের ক্ষেত্রে আর কোনো সমন্বয়হীনতা না হয় সেদিনে নজর দেয়ার।’
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বৈঠকটি আরও আগে হওয়া উচিত ছিল। তাহলে এখন যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা করছে তাদের ক্ষেত্রে এত আলোচনা হতো না।’
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৩ দশমিক ৮১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৩২ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ২ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৯ পয়েন্টে।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৯টির, কমেছে ১০৩টির। পাল্টায়নি ১২২টির, যার বেশির ভাগই কোম্পানির লেনদেনের সর্বনিম্ম দর বা ফ্লোর প্রাইসে অবস্থান করছে।
ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬২৩ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬২২ কোটি টাকা। ফলে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১ কোটি টাকা্।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২৭ দশমিক ২৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৪ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২২৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮০টির, কমেছে ৭৩টির ও পাল্টায়নি ৭৪টির।
লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
ডিএসইতে নতুন করে দর বৃদ্ধির শীর্ষে উঠে এসেছে সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২২ শতাংশ।
কোম্পানিটির পক্ষ থেকে গত জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে শেয়ার প্রতি আয় প্রায় ৫১ শতাংশ বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৩৬ পয়সা। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ২২ পয়সা।
গত এক মাসের কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৫০ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় উঠানামা করেছে।
দর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে দেখা গেছে অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সকে। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮ দশমিক ২১ শতাংশ।
সোনালী আঁশের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ। দেশ গার্মেন্টেসের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
এছাড়া আইডিএলসির ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, রবি আজিয়াটার ৫ দশমিক ১৫ শতাংশ দর বেড়েছে।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল আলিফ, যার শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্স ফান্ড দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ।
তৃতীয় অবস্থানের ফাইনফুড দর হারিয়েছে ৩ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, আলহাজ্ব টেক্সটাইলস, এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ মিউচ্যুয়াল ফান্ডও ছিল সর্বাধিক দর পতনের তালিকায়।
টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেড, লংকাবাংলা ফিনান্স, রবি, জিবিবি পাওয়ার ও সাবমেরিন কেবল।