বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লভ্যাংশে লাগাম: বৈঠকে বিএসইসি-কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  •    
  • ১৫ মার্চ, ২০২১ ১৩:৫২

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজারের উন্নয়নে উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন কোন বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে, বৈঠকে তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। পরে সেসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমা বেঁধে দেয়ার সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আপত্তির মুখে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসএসির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ কমিশন ভবনে দুপুর সোয়া ১২টায় এ বৈঠক শুরু হয়।

বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এর কমিশনের সব সদস্য এবং মুখপাত্র উপস্থিত রয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা বৈঠকে যোগ দিয়েছেন।

দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, বৈঠকে শেয়ারবাজার ও মুদ্রাবাজারের উন্নয়নে উভয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন কোন বিষয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। পরে সেসব বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

ডিসেম্বরে খবর আসে করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে ভালো মুনাফা করেছে ব্যাংকগুলো। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এ বছর বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে।

এমন অবস্থায় ব্যাংকগুলোর জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। তবে এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়া যাবে।

এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এরপর ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্যও সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থবছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। এ সময়টিতে মূলত এসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে থাকে।

লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক বিনিয়োগকারীরাসহ বাজার বিশ্লেষকরা। এ অবস্থার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির মধ্যে সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তারা। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেয় দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা নির্ধারণ করে নির্দেশনা জারির আগে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ছবি: নিউজবাংলা

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য লভ্যাংশে লাগাম টানা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু অবগত নয় বলে বক্তব্য আসে বিএসইসির পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাজার সংবেদনশীল জায়গা। এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিএসইসি এককভাবে কিছু করতে পারবে না। প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরের সহযোগিতা। ভালো পুঁজিবাজার সবার সমন্বয় ছাড়া সম্ভব নয়।’

আরও একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তিনটি সংস্থার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর আর বিএসইসি একসঙ্গে কাজ না করলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। কিন্তু আমাদের গুরুত্বই দেয়া হয় না।

‘মনে করা হয় আমরা ছোট। এমনও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে আমাদের বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। আমাদের প্রয়োজনীয় সময়ই দেয়া হয় না।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় ও বিরক্ত প্রকাশ করেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের প্রভিশন বা তারল্য কী পরিমাণ হতে পারে, সেটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে, সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’

এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে কোম্পানিগুলোকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদানের সুযোগ দিতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়।

সমন্বয়হীনতা পুরোনো

২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলালউদ্দিন নিজামী ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সমন্বয়হীনতা নিয়ে আক্ষেপ করেন।

সেদিন তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার সম্পৃক্ত কোনো কিছু জারি করতে গেলে বিএসইসির সঙ্গে আলাপ করে নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

‘আগেও সমন্বয়ের বিষয়ে বলা হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে সেটি হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমন্বিত প্রয়াসে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে।’

কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ায় বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

গত শনিবার ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) এক আলোচনা সভায়ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়হীনতা নিয়ে কথা বলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি জানান, প্রত্যেকটি রেগুলেটরের নিজস্ব দায়-দায়িত্ব আছে। সে দায়িত্ব অনুযায়ী, তাদের কাজ করতে হয়। আমাদেরও কিছু দায়দায়িত্ব আছে। সেগুলো মেনেই তাদের কাজ করতে হয়।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা খেয়াল করেছি, বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই কিছু কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। এ বিষয়ে আমরা দেশের সর্বোচ্চ মহলের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি গভর্নরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি।

‘তার পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি হাইপ্রোফাইল টিম বিএসইসিতে ১৫ মার্চ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে। সে বৈঠকে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। যাতে আমরা ভবিষ্যতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারি। পাশাপাশি কোনো রেগুলেটরি সিদ্ধান্ত যেন কারও অসুবিধার কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।’

এ বিভাগের আরো খবর