কোম্পানি বন্ধ থাকায় মূল বাজার থেকে ওভার দ্য কাউন্টার বা ওটিসি মার্কেটে পাঠানো ইউনাইটেড এয়ারের শেয়ারদর লাফ দিয়েছে। এই মার্কেটে শেয়ার কেনাবেচায় নানা জটিলতা থাকলেও পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের খবরে এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে।
যদিও নতুন পরিচালনা পর্ষদ এখনও কোম্পানি চালুর বিষয়ে প্রাথমিক কাজও শুরু করতে পারেনি। বরং তারা নানা জটিলতার বিষয়টি নিয়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করেছে।
- আরও পড়ুন: ওটিসিতে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ
গত ১৩ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরি থেকে ওটিসিতে স্থানান্তর করে। তারপর একের পর এক আসতে থাকে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির আদেশ।
২৮ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রায় ৭৮ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। কিন্তু ক্রেতা ছিল না।
এরপরই কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের খবর আসে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। তারপর চিত্র পালটে যায়।
পৌনে এক কোটি শেয়ার বিক্রির অর্ডার দুই-তিন দিনেই শেষ হয়ে যায়। এখন ক্রেতারা আগের চেয়ে বেশি দাম চাইছেন শেয়ারের জন্য।
মূল বাজার থেকে ইউনাইটেডকে যেদিন ওটিসিতে পাঠানো হয়, সেদিন কোম্পানিটির দাম ছিল ১ টাকা ৯০ পয়সা।
সার্কিট ব্রেকার অনুযায়ী কোনো কোম্পানির শেয়ারদর এক দিনে ১০ শতাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। কিন্তু এই বাড়া-কমার কিছুই ১০ পয়সার হিসাবের বাইরে হবে না।
ইউনাইটেডের শেয়াররদর এ কারণে সর্বোচ্চ ১০ পয়সা বাড়ানো বা কমার সুযোগ ছিল। আর সর্বোচ্চ পরিমাণে কমিয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সায় বিপুল পরিমাণ শেয়ার বিক্রির অর্ডার আসে। কেউ কেউ অর্ডার দেন ১ টাকা ৯০ পয়সায়।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ক্রেতা না থাকলেও বোর্ড পুনর্গঠনের খবরে ৩ মার্চ ৭৮ লাখ শেয়ারের সবগুলা বিক্রি হয়ে যায়। গড় দাম ছিল ১ টাকা ৮৪ পয়সা।
এরপর প্রায় ২ লাখ শেয়ার বিক্রির আদেশ আসে। হাতবদল হয় ২ টাকা থেকে ২ টাকা ১০ পয়সায়।
এরপর ১৮ লাখ শেয়ার বিক্রির অর্ডার আসে ১০ ও ১১ মার্চ। এই শেয়ারের বিক্রেতারা দাম চাইছেন ২ টাকা ৩০ পয়সা করে।
দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রোববার এই শেয়ার কেনার সুযোগ আসবে।
ওটিসির অন্য কোম্পানির কী অবস্থা
ওটিসি মার্কেটে বর্তমানে ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯৩৮টি শেয়ার বিক্রির অর্ডার আছে। এর মধ্যে মগ ইন্টারন্যাশনালের ৮০০ শেয়ার বিক্রির অর্ডার দেয়া হয়েছে ২০০৯ সালের অক্টোবরে। ৩৭ টাকা দরে শেয়ার বিক্রির অর্ডার দেয়া হলেও এখনও তা বিক্রি হয়নি।
একই সময়ে ঈগল স্টারের ৫০টি শেয়ার ৬৬ টাকায় বিক্রির অর্ডার দেয়া হলেও ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
ওটিসি মার্কেটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের শেয়ারেই বেশি আগ্রহ বিনিয়োগকারীদের।
পর্ষদ পুনর্গঠনে কোম্পানিতে
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন বিএসইসি ইউনাইটেড এয়ারের পর্ষদ ভেঙে স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে।
এর অংশ হিসেবে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের বাদ দিয়ে পুনর্গঠন করা পর্ষদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাজী ওয়াহিদুল আলমকে।
ওয়াহিদুলের এভিয়েশন ব্যবসায় বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে। তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি পর্যটন ও এভিয়েশন-বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক।
নতুন পর্ষদে রয়েছেন এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।
এই সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে বিপাকে পড়া হাজার হাজার মানুষ তাদের নাই হয়ে যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়ার আশা ফিরে পেল।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজান উর রশিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মোট শেয়ারের সবচেয়ে বেশি শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। ওটিসিতে যখন নেয়া হলো তখন আতঙ্কে সবাই শেয়ার বিক্রি শুরু করে দিল।
‘কোম্পানিটিকে আবার চালুর করার উদ্যোগের কারণেই ওটিসিতেও শেয়ারের চাহিদা বেড়েছে। তবে এটি ওটিসিতে না নিয়ে যদি মূল মার্কেটে রেখে বিএসইসি এমন সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে দর আরও বেশি বাড়ত। তাতে বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতো।’
- আরও পড়ুন: ইউনাইটেড এয়ারকে বাঁচানোর উদ্যোগ বিএসইসির
আর্থিক আশ্বাস ও বেবিচকের কাছে চিঠি বিএসইসির
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পুনরায় চালুর জন্য গঠন করা নতুন বোর্ড শুরুতেই তহবিল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বিএসইসির কাছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএসইসির সহায়তা চেয়েছে নতুন পর্ষদ।
একই সঙ্গে পুনর্গঠিত পর্ষদকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
চিঠিতে ইউনাইটেড এয়ারকে আবার আকাশপথে সেবা দেয়ার লক্ষ্যে পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদকে সার্বিক সহযোগিতা দিতে বেবিচকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
এর আগে পুনর্গঠিত বোর্ড বিএসইসির সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে কোম্পাটিকে চালু করতে যে আর্থিক সংকট রয়েছে তা তুলে ধরা হয়।
এ বিষয়ে কমিশনের কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোম্পানিটির নতুন বোর্ড আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। আমরা তাদের সব ধরনের আইনকানুন সম্পর্কে অবহিত করেছি। তাদের বক্তব্যও আমরা শুনেছি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি চালু করতে কিছু সমস্যা থাকবেই। যেকোনো সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের সহযোগিতা তাদের করা হবে।’
দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রধান কার্যালয়। ছবি: নিউজবাংলা
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা
২০১০ সালে পুঁজিবাজার যখন চাঙা, তখন কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিকে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর খারাপ অবস্থায় যেতে থাকে কোম্পানিটি। একপর্যায়ে উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটিই বন্ধ করে দেন।
৮২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির ৮২ কোটি শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে মাত্র আড়াই শতাংশ শেয়ার। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে কথা উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর কোম্পানিটির আর কোনো আর্থিক বিবরণী তৈরি হয়নি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির কোনো আয় নেই। তবে ২০১৬ সালের রেভিনিউ দেখানো হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা।