বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে বহুজাতিক-দামি শেয়ারের দৌরাত্ম্য

  •    
  • ১০ মার্চ, ২০২১ ১৭:১১

এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে লাফিয়ে। মূল্য সংবেদনশীন কোনো তথ্য না থাকলেও কেন বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের পেছনে ছুটছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে হঠাৎ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানিসহ দামি শেয়ারের দরে দৌরাত্ম্য দেখা গেছে। বুধবারও তা অব্যাহত ছিল। এসব কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে লাফিয়ে।

মূল্য সংবেদনশীন কোনো তথ্য না থাকলেও কেন বিনিয়োগকারীরা এসব শেয়ারের পেছনে ছুটছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বুধবার এসব কোম্পানি লেনদেনে এগিয়ে না থাকলেও শেয়ারপ্রতি দর বৃদ্ধিতে ছিল এগিয়ে। তবে আগের দিনের সূচকের পতন অব্যাহত ছিল। কমেছে তালিকাভুক্ত সবচেয়ে ভালো কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ এর সূচক। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনও।

মঙ্গলবার হাজার কোটি টাকার লেনদেন বিনিয়োগকারীদের নতুন স্বপ্ন দেখালেও তা টেকেনি বুধবার। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুনাফা হলেই শেয়ার বিক্রি করে দেয়ায় বড় লেনদেন হচ্ছে না। তবে সূচক এখন সাড়ে পাঁচ হাজারে অবস্থান করায় এ ধরনের পতনকে সাময়িক বলেছেন তারা।

দামি ও বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার

গত রোববার থেকে বাড়তে থাকা বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া দামি শেয়ারের দরও বেড়েছে। তালিকাভুক্ত রেকিড বেনকিউজার, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ম্যারিকো, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেড, লিন্ডে বিডিসহ দামি শেয়ার ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রির মতো কোম্পানির প্রতি আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা।

কেন বাড়ছে এসব কোম্পানির শেয়ার দর, প্রশ্নে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক দেবব্রত কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গুজব আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিশোধিত মূলধন বাড়ানোর জন্য বলবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব কটি বহুজাতিক কোম্পানি স্বল্প মূলধনি।’

তিনি জানান, সম্প্রতি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০ শতাংশ বোনাস ল্ভ্যাংশ ঘোষণা করে তাদের পরিশোধিত মূলধন ৫৪০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছে।

দেবব্রত কুমার সরকার বলেন, ‘মূলত এ কারণেই হঠাৎ করে বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়ছে। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা হওয়া উচিত বলেও মনে করি না। কারণ, বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে তাদের শাখা অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা করে। অনেকগুলো আছে যাদের নিজস্ব কোনো উৎপাদন কারখানা নেই। ফলে এসব কোম্পানি পরিশোধিত মূলধন বাড়িয়ে আসলে কি করবে?’

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি রেকিড বেনকিউজারের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের ১২৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ হাজার ৪৬৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪ হাজার ৭৯৬ টাকায়। কোম্পানিটিতে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ।

ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডে বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে দশমিক ৪৩ শতাংশ। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১২ কোটি টাকার কিছু বেশি। কোম্পানিটি সবশেষ ২০১৯ সালে ৫৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। গত এক মাসে কোম্পানিটির শেয়ারদর ৩ হাজার ১৪১ টাকা থেকে সর্বোচ্চ উঠেছে ৩ হাজার ৩৪০ টাকায়।

ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডে পরিশোধিত মূলধন ৩১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এই কোম্পানির শেয়ারদরও গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বাড়ছে। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর ২ হাজার ৮৮ টাকা থেকে ২ হাজার ১৪৬ টাকায় উঠেছে।

বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ২০১৮ সালে ১০০ শতাংশ বা ১টি শেয়ারের বিপরীতে ১টি শেয়ার দিয়ে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করেছে। এবং ২০২০ জন্য কোম্পানিটি ২৯৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।

দামি শেয়ারের মধ্যে লিন্ডে বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। বুধবার কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৯২ টাকায়।

রেনেটা লিমিটেডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৯৫ টাকায়। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৯৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সবশেষ লেনদেনের সূচক।

লেনদেনে যারা এগিয়ে

বুধবার সূচক ও লেনদেন কমলেও কোম্পানিভিত্তিক লেনদেনে এগিয় ছিল রবি, সামিট পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, এসএস স্টিল, বেক্সিমকো।

বুধবার রবির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ১২ হাজার ১২৫টির, যার বাজারমূল্য ছিল ৫৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

শেয়ার লেনদেনের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও টাকার অঙ্কে শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড। বুধবার বেক্সিমকো লিমিটেডের ৮৭ লাখ ৬৪ হাজার ৩৪৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায়।

লাফার্জহোলসিম লিমিটেডের লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ১৯ লাখ টাকার শেয়ার। সামিট পাওয়ার লিমিটেডের ৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের মোট ৩১ কোটি ১৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

রাজধানীর একটি ব্রোকারেজ হাউসে উৎসুক বিনিয়োগকারীরা। ছবি: নিউজবাংলা

দিনের সর্বোচ্চ দরে নতুন কোম্পানির শেয়ার

৯ মার্চ থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। দ্বিতীয় দিনেও কোম্পানিটির শেয়ারদর ৫০ শতাংশ বেড়েছে।

নতুন কোম্পানির ক্ষেত্রে তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রথম দুদিন শেয়ার দর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ থাকে। তৃতীয় দিন থেকে স্বাভাবিক নিয়মে ১০ শতাংশ করে বাড়তে পারে শেয়ারদর। এ হিসেবে বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক লেনদেনে যাচ্ছে কোম্পানিটি।

বুধবার কোম্পানিটির ১ কোটি ৩২ লাখ ১৩ হাজার ২৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। মঙ্গলবার কোম্পানিটির মাত্র ৪২১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছিল।

এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে ইজেনারেশন লিমিটেড। মাত্র সাত কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর দিনের সর্বোচ্চ দরে লেনদেন হয়ে ১০ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৩৯ টাকা ৪০ পয়সায়। এখন কিছুটা উত্থান-পতন থাকলেও দর কমে আসার প্রবণতাই বেশি। বর্তমানে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে ৩৭ টাকা ২০ পয়সায়।

তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই বিনিয়োগকারীদের প্রবল আগ্রহের কারণে এসব কোম্পানির শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে যখন শেয়ার সরবরাহ বাড়ে তখন উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে লোকসান গুনতে হয়।

গত চার মাসের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রবি, এনার্জিপ্যাক, ডমিনোস স্টিল ও ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্সের শেয়ার উচ্চমূল্যে কিনে এখন লোকসান গুনছেন বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ। ছবি: নিউজবাংলা

বিশ্লেষক বক্তব্য

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু না। হাজার কোটি টাকায় লেনদেনের দিন যারা শেয়ার কিনেছে তারা বুধবার শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না। তবে কিনতে পারবে।’

তার মতে, এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো যে উত্থানপতনের মধ্যেই সূচক সাড়ে পাঁচ হাজার পয়েন্টে আছে। এখানে হঠাৎ করে কোনো বড় ধরনের পতন হয়নি। আগের যেমন কয়েক দিন পুঁজিবাজার ভালো থাকার পর শেয়ার বিক্রির চাপে এক দিনেই শত পয়েন্ট সূচকের পতন হতো।

সূচক ও লেনদেন

ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ২৭ দশমিক ৭১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫৬৩ পয়েন্টে। শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২ দশমিক ২৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৩ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস ৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৪৯ পয়েন্টে।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৭৯ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ১৬৪ কোটি টাকা।

এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে সবচেয়ে কম কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে। মাত্র ৬৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে লেনদেন। দর কমেছে ১৭৩টির আর পালটায়নি ১১৪টির।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮৩ দশমিক ০৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৭৩ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২২৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫০টির, কমেছে ১১৬টির ও পালটায়নি ৬০টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি

বুধবার ডিএসইতে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে এসএস স্ট্রিল লিমিটেডের ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৯ টাকা ১০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা ৯০ পয়সা।

তবে দর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল সদ্য তালিকাভুক্ত কোম্পানি লুব রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড। লেনদেনের দ্বিতীয় দিনে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। নতুন কোম্পানি তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারের এমন দর বেড়েছে।

তৃতীয় স্থানে ছিল রহিমাফুড, যার শেয়ারদর বেড়েছে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার ১৯৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১১ টাকা ৯০ পয়সা। এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল বিকন ফার্মা, বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশ, ফরচুন, লিব্রা ইনফিউশন, এক্টিভফাইন, ওয়ালটন ও লিন্ডে বিডি।

দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়ার ফিন্যান্স লিমিটেড, এদিন কোম্পানিটির শেয়ারদর ৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ৪ টাকা। দর কমেছে ৬ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের শেয়ারদর কমেছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

এ তালিকায় আছে এশিয়া প্যাসিফিক ইনস্যুরেন্স, সাভার রিফ্যাক্টরিস, শাইনপুকুর সিরামিক, ইজেনারেশন লিমিটেড, মাইডাস ফিন্যান্স।

এ বিভাগের আরো খবর