করোনায় দেশে ফেরা প্রবাসীদের কর্মসংস্থান কিছুটা বাড়লেও সেটি অর্থনৈতিক ঝুঁকি কমাতে পারেনি। বরং আগের তুলনায় এই ঝুঁকি ২০ ভাগ বেড়েছে।
তারা এখনও ঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন। ঋণ পরিশোধে তারা টাকা ধার করেছেন। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ৮৭ শতাংশ বিদেশফেরত প্রবাসী আবার বিদেশে ফিরে যেতে চান।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ‘র্যাপিড অ্যাসেসমেন্ট রাউন্ড-২: নিডস অ্যান্ড ভালনারেবিলিটিস অব ইন্টার্নাল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল রিটার্ন মাইগ্র্যান্টস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সরকার দেশব্যাপী লকডাউন প্রত্যাহারের পরের মাসগুলোতে ফিরে আসা প্রবাসীরা চাকরি খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন। স্বাস্থ্য ও মনো-সামাজিক সমস্যা কমেছে এবং পরিবারিক পর্যায়ে খাদ্য সুরক্ষা উন্নত হয়েছে। তা সত্বেও প্রবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বেড়েছে।
বাংলাদেশের ১২টি উচ্চ অভিবাসন প্রবণ জেলায় দ্বিতীয় দফায় এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়। ২০২০ সালের আগস্ট ও সেপ্টম্বরে ১ হাজার ৫৮৪ জন প্রবাসী এতে অংশ নেন, যার মধ্যে ৮৭৫ জন বিদেশফেরত ও ৭০৯ জন অভ্যন্তরীণ প্রবাসী।
প্রথম দফায় সে বছরেরই জুন মাসে ২ হাজার ৭৬৫ জনের উপর গবেষণাটি করা হয়েছিল, যেখানে দ্বিতীয় ধাপের সবাই ছিলেন।
গবেষণার ফলাফল অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রবাসীদের উপর কোভিড-১৯-এর প্রভাব, পুনঃরেকত্রীকরণে সমস্যা এবং পুনরায় ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়গুলো বুঝতে সহযোাগিতা করবে বলে গবেষণায় দাবি করা হয়েছে।
প্রবাসীরা বলছেন, তাদের ৮৭ শতাংশ আবারও বিদেশে ফিরতে চান। গন্তব্যগুলোর মধ্যে পছন্দের তালিকায় সৌদি আরব, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, ইতালি ও মালয়েশিয়া উপরের দিকে রয়েছে।
অভ্যন্তরীণ প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ৪৭ শতাংশ বলেছেন, তারা ঢাকায় যেতে চান। এই হার চট্টগ্রামের জন্য ১৫ শতাংশ এবং বরিশালে ১৩ শতাংশ।
প্রতিবেদন আরও বলেছে, বিদেশফেরত প্রবাসীদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে ২০ ভাগ বেড়েছে। প্রথম ধাপের গবেষণায় এই হার ছিল ৫০ শতাংশ, দ্বিতীয় ধাপে যা দাঁড়ায় প্রায় ৭১ শতাংশে।
বিদেশফেরত প্রবাসীদের চ্যালেঞ্জগুলো হলো চাকরি খুঁজে পেতে সমস্যা (৪৭ শতাংশ), অর্থনেতিক সমস্যা (২৯ শতাংশ) এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা (২১ শতাংশ)।
দ্বিতীয় ধাপের জারিপে দেখা যায়, উত্তরদাতাদের বেকরত্বের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৪ শতাংশ, যা আগের ধাপে ছিল ৭৪ শতাংশ। মূলত লকডাউন তুলে দেয়া, সাধারণ কর্মকাণ্ড উন্মুক্ত হওয়া এবং অন্যান্য বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় বেকারত্বের হার কমেছে। তারপরও গবেষণায় অংশ নেয়া উত্তরদাতাদের মধ্যে বেকারত্ব বেশি ছিল।
প্রথম ধাপের প্রতিবেদনে যেখানে বিদেশফরত প্রবাসীদের ৭০ শতাংশ তিন বেলা খেতে পারতেন, দ্বিতীয় ধাপে তা ১৮ শতাংশ বেড়ে ৮৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর অভ্যন্তরীণ প্রবাসীদের এই হার ৪৩ শতাংশ বেড়ে ৯২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
করোনার কারণে সৃষ্ট সমস্যা মোকাবিলায় সরকারি সহায্যের জন্য আবেদন করতে চেয়েছেন ৬০ শতাংশ। আর অভ্যন্তরীণ প্রবাসীদের এই হার ৩৯ শতাংশ।
অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় প্রবাসীরা বলেছেন, টাকা ধার করা, খরচ কমানো, এবং অর্থ সহয়তার উপর তারা নির্ভশীল ছিলেন অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধান ও ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে।
অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবিলায় টাকা ধার করা বা অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছেন এমন প্রবাসী ৫০ শতাংশ (আন্তর্জাতিক প্রবাসী) এবং ৭১ শতাংশ (অভ্যন্তরীণ প্রবাসী)।
বিদেশফেরত অর্ধেকেরও বেশি প্রবাসীরা বলেছেন, তাদের প্রত্যেকের এক লাখ টাকার উপরে ঋণ আছে, আর ২৮ শতাংশের ঋণ আছে দুই লাখ টাকার উপরে। ৫৮ শতাংশ আন্তর্জাতিক ও ৫৩ শতাংশ অভ্যন্তরীণ প্রবাসী বলেছেন, তাদের ঋণের পরিমাণ ২০২০ সালের জুনের চেয়ে সেপ্টেম্বর মাসে বেড়েছে।
আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘আমরা একটি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রবাসী ও তাদের পরিবার কীভাবে বেকারত্ব ও লকডাউন মোকাবিলা করেছেন এবং তাদের অভিবাসন ইচ্ছা কী, তা বুঝতে নিবিড় কার্যক্রম, গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। যা এই এই পরিস্থিতি থেকে উন্নত ও দ্রুত পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করবে।’
এই তথ্য প্রবাসী কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ভবিষ্যতে আমাদের সহায়তা প্রদান প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে এবং করোনাভাইরাসের মতো কোনো প্রাদুর্ভাব থেকে অভিাবসীদের সুরক্ষা দিতে সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
এ ছাড়া আরও ভালো অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ও ফিরে আসা প্রবাসীদের টেকসই পুনঃরেকত্রীকরণে আইওএম সরকারকে সহযোগিতা করবে বলেও জানান তিনি।