পুঁজিবাজারের দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানি হিসেবে ওভার দ্য কাউন্টার মার্কেটে (ওটিসি) লেনদেন হওয়া ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বোর্ড পুনর্গঠনের খবরে তিন দিনেই ৭৮ লাখ শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে।
গত ১৩ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে কোম্পানিটিকে জেড ক্যাটাগরি থেকে ওটিসিতে স্থানান্তর করে। তারপর একের পর এক আসতে থাকে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির আদেশ।
এর মধ্যে ২৮ ফেব্রুয়ারি খবর আসে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পুরাতন বোর্ড বাতিল করে কোম্পানিটিতে সাত সদস্যের স্বতন্ত্র পরিচালকে দায়িত্ব দিয়েছে।
এর ফলে ২০১০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে আর থাকছেন না তাসবিরুল আলম চৌধুরী। তাকে সরিয়ে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কাজী ওয়াহিদুল আলমকে।
এভিয়েশন ব্যবসায় বিস্তর অভিজ্ঞতা আছে বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেয়া ওয়াহিদুলের। তিনি বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি পর্যটন ও এভিয়েশন বিষয়ক একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
নতুন পর্ষদের আরও আছেন এম সাদিকুল ইসলাম, মাসকুদুর রহমান সরকার, এটিএম নজরুল ইসলাম, প্রফেসর ড. বদরুজ্জামান ভূইয়া, মুহাম্মদ ইউনুস ও মুহাম্মদ শাহ নেওয়াজ।
বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তে পাঁচ বছর ধরে কার্যক্রম বন্ধ ইউনাইটেডে এয়ারওয়েজে বিনিয়োগ করা হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। বিনিয়োগ করা অর্থ আবার ফিরে পাবার প্রত্যাশা শুরু হয়।
এমন খবরের তিন দিন পরেই ওটিসি মার্কেটে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিক্রির আদেশ দেয়া ৭৮ লাখের বেশি শেয়ার বিক্রি হয়ে গেছে গত ৩ মার্চ।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, এদিন এক কোটি ৪৮ লাখ ১০ হাজার ৩৮০ টাকায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ৭৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০টি শেয়ার বিক্রি হয়েছে।
বর্তমানে এই কোম্পানির ১৭ হাজার ৬৮০টি শেয়ার বিক্রির অপেক্ষায় আছে, যা বিক্রির আদেশ দেয়া হয়েছে গত ৪ মার্চ।
গত সপ্তাহের রোববার বস্ত্র খাতের দুই বন্ধ প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ও ফ্যামিলি টেক্সের পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করা হয়েছে। যার প্রভাবে টানা তিন কার্যদিবস এই কোম্পানিগুলো উঠে এসেছিল দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায়। এর আগের বিএসইসি বস্ত্র খাতের আরেক কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলের বোর্ড পুনর্গঠন করেছে।
তহবিল সংকটের আশ্বাস বিএসইসির
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পুনরায় চালুর জন্য গঠন করা নতুন বোর্ড শুরুতেই তহবিল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএসইসির কাছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিএসইসির সহায়তা চেয়েছে নতুন পর্ষদ।
এর পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের দায়িত্বপ্রাপ্ত বোর্ডের প্রধান কাজী ওয়াহিদ উল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী সপ্তাহে নতুন বোর্ড নিয়ে বসব। তখন কোম্পানির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে ধারনা পাব। তবে আমাদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব থাকবে কোম্পানিটিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার। চেষ্টা থাকবে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সুরক্ষা দেয়ার।’
বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, কোম্পানিটির নতুন র্বোড আমাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা তাদের সব ধরনের আইন কানুন সম্পর্কে অবহিত করেছি। তাদের বক্তব্যও আমরা শোনেছি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা একটি কোম্পানি চালুর করতে কিছু সমস্যা থাকবেই। যে কোনো সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সব ধরনের সহযোগিতা তাদের করা হবে।
কোম্পানির আর্থিক অবস্থা
২০১০ সালে পুঁজিবাজার যখন চাঙা, তখন কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। শুরুর দিকে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। তবে ২০১৫ সালের পর খারাপ অবস্থায় যেতে থাকে কোম্পানিটি। এক পর্যায়ে উদ্যোক্তা পরিচালকরা তাদের হাতে থাকা প্রায় সব শেয়ার বিক্রি করে কোম্পানিটিই বন্ধ করে দেন।
৮২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির ৮২ কোটি শেয়ারের মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে আছে মাত্র আড়াই শতাংশ শেয়ার। অথচ বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে কথা উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের পর কোম্পানিটির আর কোনো আর্থিক বিবরণী তৈরি হয়নি। সেখানে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত কোম্পানিটির কোনো আয় নেই। তবে ২০১৬ সালের রেভিনিউ দেখানো হয়েছে ১১৯ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠানের কোনো সেল নেই ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। বর্তমানে ওটিসিতে কোম্পানিটি প্রতিটি শেয়ার লেনদেন হচ্ছে এক টাকা ৯০ পয়সায়।