সিমেন্ট তৈরির জন্য ভারত থেকে আমদানি করা চুনাপাথর খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে বহুজাতিক সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান লাফার্জ-হোলসিম লিমিটেডের বিরুদ্ধে। উৎপাদনশীল খাতের জন্য আমদানি করা কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করা অবৈধ বলে জানিয়েছেন সিলেটের আমদানিকারকরা।
তবে লাফার্জ কর্তৃপক্ষের দাবি, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই চুনাপাথর বিক্রি করছে লাফার্জ। এ ব্যাপারে কোনো আইনি বাধা নেই।
সুনামগঞ্জের ছাতকে প্রতিষ্ঠিত লাফার্জ সুরমা লিমিটেড ২০০৬ সাল থেকে উৎপাদন শুরু করে। ২০১৫ সালে সুইজারল্যান্ডের হোলসিম সিমেন্টের সাথে একীভূত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয় লাফার্জ-হোলসিম লিমিটেড।
নিজস্ব কনভেয়র বেল্টের মাধ্যমে ভারতের মেঘালয় থেকে চুনাপাথর নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। আমদানি করা চুনাপাথর নিজেদের কারখানার ভেতরে টুকরো (ক্রাশিং) করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে খোলা বাজারে বিক্রি শুরু করে লাফার্জ। এরপর থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
খোলাবাজারে লাফার্জের চুনাপাথর বিক্রি বেআইনি দাবি করে তা বন্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে চুনাপাথর আমদানি ও ব্যবসার সাথে জড়িত ৩০টি ব্যবসায়ী সংগঠন।
এই ৩০ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত মোর্চা ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষে মঙ্গলবার সিলেটে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, লাফার্জ হোলসিম রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে চুনাপাথরের খোলাবাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর ফলে চুনাপাথর ব্যবসায়ী-শ্রমিকেরা তাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। আগামী ৮ মার্চের মধ্যে এ কার্যক্রম বন্ধ না করলে পরদিন ৯ মার্চ থেকে লাফার্জ-হোলসিম সিমেন্ট বর্জনসহ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করার হুমকি দিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শ্রমিকেরা।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও আমদানিকারক আহমদ শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী বলেন, সুনামগঞ্জের ছাতক, চেলা, ইছামতি, বড়ছড়া, বাগালি ও সিলেটের ভোলাগঞ্জ, তামাবিল শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি করে ক্রাশিং পদ্ধতিতে ছোট করে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা যুগ যুগ ধরে খোলাবাজারে তা বিক্রি করে আসছেন। বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটে ৫ শতাধিক ক্রাশার মেশিন এবং লক্ষাধিক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক এ ব্যবসার সাথে জড়িত। লাফার্জের কারণে এই ব্যবসায়ীরা ৫শ’ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
শাখাওয়াত সেলিম চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সালে একবার লাফার্জ খোলাবাজারে চুনাপাথর বিক্রির উদ্যোগ নেয়। তখন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রতিবাদ জানালে লাফার্জের তৎকালীন প্ল্যান্ট ম্যানেজার চেং জু সং চুনাপাথর বিক্রি বা বিতরণের কোনো পরিকল্পনা লাফার্জের নেই বলে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন।
তিনি বলেন, লাফার্জের চুনাপাথর বিক্রির বিষয়টি লিখিতভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট, সুনামগঞ্জ চেম্বার প্রেসিডেন্ট ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এবং ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীসহ স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
এই সংগঠনের সদস্য সচিব মো. আবুল হাসান বলেন, লাফার্জ কোনো ট্রেডিং কোম্পানি নয়। এটি একটি উৎপাদনশীল কারখানা। সিমেন্ট উৎপাদনের জন্য এই কারখানার অনুমোদন ও জায়গা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে। এখন তারা ট্রেডিং শুরু করতে পারে না।
তিনি বলেন, প্রতিদিন তারা লক্ষাধিক ঘণফুট পাথর খোলা বাজারে বিক্রি করে। তারা কনভেয়র বেল্টের মাধ্যমে চুনাপাথর আমদানি করে। ফলে প্রচুর পাথর আমদানি করতে পারে। এই পরিমাণ চুনাপাথর আমদানি করা একজন আমদানিকারকের পক্ষে এক মাসেও সম্ভব হয় না।
এ ব্যাপারে লাফার্জ হোলসিম লিমিডেটের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা চুনাপাথর বিক্রির কথা স্বীকার করে বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়েই খোলাবাজারে চুনপাথর বিক্রি করা হচ্ছে।
তবে কর্মকর্তাদের কেউ নাম প্রকাশ করতে চাননি।
লাফার্জ-হোলসিমের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশে যে পরিমাণ চুনপাথরের চাহিদা রয়েছে, তার এক থেকে দুই শতাংশ বিক্রি করছে লাফার্জ। ফলে এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
লাফার্জ-হোলসিম লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলামের সাথে মঙ্গলবার দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি লিখিত আকারে প্রশ্ন পাঠাতে বলেন। ই-মেইলে প্রশ্ন পাঠানো হলেও রাত ৯টা পর্যন্ত তিনি কোনো জবাব দেননি।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সভাপতি লিয়াকত আলী, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ফজলু মিয়া চৌধুরী, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি অদুদ আলম, কোম্পানীগঞ্জ পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল, ব্যবসায়ী শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. আবুল হাসান, ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু, ছাতক লাইমস্টোন ইম্পোর্টার্স ও এন্ড সাপ্লায়ার্স গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক অরুণ দাস, ছাতক পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামছু মিয়া প্রমুখ।