ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ পাল্টাতে পারে, এই ধরনের গুঞ্জনে উত্থান হয়েছে এই দুই খাতে।
পুঁজিবাজারের বাজার মূলধনের সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা এই খাতটির ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দাম বৃদ্ধি অবদান রেখেছে সূচক বাড়ায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চিত্রও একই। এই খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ২০টির।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি নির্দেশনা এই খাতের বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংক যতই মুনাফা করুক শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ আর প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে ১৫টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।
তাও এটা সবাই না। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ (১০০ শেয়ারে ৫টি) বোনাস দেয়া যাবে। কোনো কোনো ব্যাংক এর সঙ্গে ৫ শতাংশ নগদ (শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা) কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ বোনাস ও শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদ, কোনো কোনো ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা নগদ ও ৭.৫ শতাংশ বোনাস, কোনো কোনো ব্যাংক শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ ও ১০০ শেয়ারে ১০টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।
ব্যাংক খাতের ৩০টি কোম্পানির মধ্যে ১৫টির লেনদেন ও দরের চিত্র
এই নির্দেশনা আসার পর এই খাতের শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যে সম্প্রতি নির্দেশনা আসে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদে লভ্যাংশ হিসেবে দিতে পারবে। তবে যাদের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা কোনো লভ্যাংশই দিতে পারবে না।
এই আদেশ আসার পর দুই কার্যদিবসে পড়েছে এই খাতের শেয়ারের মূল্য।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মার্চেন্ট ব্যাংকাস অ্যাসোসিয়েশন- বিএমবিএসহ নানা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে এই নীতিমালা পাল্টাতে। বলা হয়েছে, তাদের আদেশের কারণে চাঙ্গা পুঁজিবাজারে পতন হচ্ছে।
বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধা না থাকে সে জন্যই চিঠি দেয়া হয়েছে।’
ব্যাংক খাতে ৩০টি কোম্পানির মধ্যে বাকি ১৫টির লেনদেন ও দরের চিত্র
এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দুই খাতেই বিনিয়োগকারীরা ফিরতে শুরু করেছেন। গত কয়েকদিনে হারানো মূল্য ফিরে পেতে শুরু করেছে শেয়ারগুলো।
এই দুই খাতের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। ফলত সূচকে যোগ হয়েছে ৮১ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর কমেছে মাত্র তিনটির আর অপরিবর্তিত ছিল তিনটির। বাকি সবগুলোর দর বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের ২৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর পাল্টায়নি মাত্র দুটির। আর কমেছে কেবল একটির।
উত্থান হয়েছে দুর্বল শেয়ারেরও
সম্প্রতি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি চারটি দুর্বল কোম্পানির পর্ষদ পুনঃগঠন করেছে। কোম্পানিগুলো কীভাবে চালু করা যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে পুনঃগঠিত বোর্ড।
এমন খবরে চাঙ্গা হয়েছে বন্ধ থাকা বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার দর। তবে বাজার মূলধনে এদের অবদান খুবই কম। এ কারণে এগুলোর মূল্যবৃদ্ধি সূচকে খুব একটা প্রভাব ফেলে না।
২৩ টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেন ও দরের চিত্র
তবে কোম্পানি চালু হবে, বা আদৌ হবে কি না, এ নিয়ে না ভেবেই বিনিয়োগকারীরা দাম বাড়িয়ে হলেও কিনছেন এসব কোম্পানির শেয়ার। ফলে সর্বাধিক দাম বাড়া কোম্পানির বেশিরভাগই জেড ক্যাটাগরির দুর্বল কোম্পানি।
দিন শেষে সবচেয়ে বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া ১৮টি কোম্পানির মধ্যে আটটি ছিল জেড ক্যাটাগরির। আর বেশিরভাগই ছিল বি ক্যাটাগরির, যারা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিয়েছে গত বছর।
সূচক বাড়ার দিন বেড়েছে লেনদেনও, যাতে স্পষ্ট হয় যে বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হচ্ছেন।
সূচক ও লেনদেন
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮১ দশমিক ৪৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০৮ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৬ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭৫ পয়েন্ট।
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৯টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ২৩৩টির, কমেছে ৪২টির ও পাল্টায়নি ৮৪টির।
মোট লেনদেন হয়েছে ৮৩৩ কোটি টাকা। আগের দিন সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৬১৮ কোটি টাকা। এ হিসেবে বেড়েছে ১৮৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩২৯ দশমিক ০৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ০১৬ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬৮টির, কমেছে ২৭টির ও পাল্টায়নি ৪৫টির।
লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ দশ কোম্পানির মধ্যে জেড ক্যাটাগরির কোম্পানি অন্তর্ভূক্ত না হওয়ায় মঙ্গলবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ কোম্পানি হিসেবে ছিল পেনিনসোলার চট্টগ্রাম লিমিটেড, যার দর বেড়েছে ১০ শতাংশ।
ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক খাতের লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। নতুন তালিকাভুক্ত ইজেনারেশন লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
এ তালিকায় ছিল আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, জাহিন টেক্সটাইল।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল পদ্মা লাইফ, যার শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ৭২ শতাংশ।
সোনালী আঁশের শেয়ার দর কমেছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এ তালিকায় আছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, শ্যামপুর সুগার, জিলবাংলা সুগার মিল।