টানা পাঁচ কার্যদিবস পর উত্থানে ফিরল পুঁজিবাজার। লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমলেও লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে।
এমন উত্থানে পতনের হারিয়ে যাওয়া দর কিছুটা ফিরে পেলেও এখনও বহু শেয়ারে বড় অংকের লোকসানে বিনিয়োগকারীরা।
সোমবার লেনদেনের শুরুর দিন সূচক কমেছিল ৯০ দশমিক ৭৭ পয়ন্টে। মঙ্গলবারও সূচক কমেছে ৬৭ দশমিক ৫ পয়েন্ট। এটা শুধু চলতি সপ্তাহের হিসাবে। আগের সপ্তাহের শেষের তিন কার্যদিবস টানা সূচক ও লেনদেন কমেছে পুঁজিবাজারে।
বুধবার ডিএসইর সূচক বেড়েছে ৬৭ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। আর লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা।
টানা পতনের মুখে প্রশ্ন উঠে পুঁজিবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকসহ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকারীদের অবস্থান নিয়ে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেছেন, পতনের পুঁজিবাজারে উত্থানে দায়িত্ব থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের উপর। অথচ তারাই পুঁজিবাজারে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
এ বিষয়ে বাজারবিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পতনের পর এমন উত্থান স্বাভাবিক। তবে তা কতদিন স্থায়ী হয় সেটাই দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এ উত্থান স্থায়ী হওয়া নিয়ে সংশয়ের কারণ হচ্ছে, পুঁজিবাজারে যেসব প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কার্যকর থাকার কথা তারা সেভাবে নেই। ফলে পুঁজিবাজারের উত্থান স্থায়ী হচ্ছে না।’
গত পাঁচ কার্যদিবস পতনের পর কিছুটা সূচক ফিরে পেয়েছে পুঁজিবাজার
ডিএসই ব্রোকার হাউজগুলোর সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ এসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের পতনের সময়ে সাধারণ বিনিয়োগাকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কিন্ত এখানে একপক্ষ কিনবে, আরেক পক্ষ বিক্রি করবে, এভাবে লেনদেন চলে। কিন্ত একপক্ষ বিক্রি করে আরেক পক্ষ যদি না কেনে তাহলে লেনদেন হবে না।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের দর পতনের মধ্যেই মুনাফা থাকে। আর আমরা দর কমে গেলে শেয়ার কেনা বন্ধ করে দেই।’
উত্থানেও বড় লোকসান বহু শেয়ারে
১৫ ফেব্রুয়ারি রবির শেয়ার প্রতি দর ছিল ৪৬ টাকা। পাঁচ কার্যদিবস টানা দর পতনে নেমেছে ৩৬ টাকা ৮০ পয়সায়। বুধবার সেই শেয়ারের দর বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা ২০ পয়সা। একদিন আগে যারা রবির শেয়ার কিনেছে তারা ৩৯ টাকা ৩০ পয়সায় শেয়ার পেয়েছে। ফলে পুঁজিবাজারের এমন উত্থানেও রবিতে শেয়ার প্রতি লোকসান এখন এক টাকা ১০ পয়সা।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেট বাংলাদেশ-বিএটিবিসি শেয়ার প্রতি দর ছিল ১ হাজার ৬২৫ টাকা। বুধবার শেয়ার প্রতি দর কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৫২২ টাকা। এক সপ্তাহের আগের তুলনায় এখনও এই শেয়ারে লোকসান ১০৩ টাকা।
বেক্সিমকোফার্মার শেয়ার দরও টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে কমেছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি শেয়ার প্রতি দর ছল ১৯৪ টাকা ৫০ পয়সা। বুধবার দর বেড়ে হয়েছে ১৮০ টাকা ২০ পয়সা। মানে এখনও লোকসানে ১৪ টাকা ৩০ পয়সা।
১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ক্রমাগত কমছে লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার দর। সেদিন শেয়ার প্রতি দর ছিল ৩৯ টাকা ১০ পয়সা। বুধবার শেয়ার দর বেড়ে হয়েছে ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা। ফলে সূচকের উত্থান হলেও বিনিয়োগকারীরা লোকসানে ৪ টাকা ৭০ পয়সা।
স্কয়ার ফার্মার শেয়ার দরও ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কমছে। ২২৬ টাকা ৬০ পয়সা। বুধবার দর বেড়ে হয়েছে ২১৪ টাকা ১০ পয়সা। ফলে এমন উত্থানেও বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি লোকসান ১২ টাকা ৫০ পয়সা।
মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের শেয়ার দর ১৭ ফেব্রুয়ারি ৮৪ টাকা ১০ পয়সা থেকে ক্রমাগতভাবে কমে হয় ৭৪ টাকা ৩০ পয়সা। বুধবার দর বেড়েছে হয়েছে ৭৮ টাকা। এ সময় পর্যন্ত যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার ধরে রেখেছেন তার শেয়ার প্রতি লোকসান এখনও ৯ টাকা ৮০ পয়সা।
বিনিয়োগকারী আসলাম ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পাঁচ দিনের সূচক ও লেনদেনের পতনের সিংহভাগ বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন কিংবা নতুন বিনিয়োগ করেনি। ফলে যারাই বিনিয়োগ করেছে বা শেয়ার ধরে রেখেন তার খুব কোম্পানিতে মুনাফা পেয়েছেন।’
কেমন ছিল ব্ল চিপ কোম্পানির লেনদেন
পুঁজিবাজারে বাছাই করা ৩০টি সবচেয়ে ভালো কোম্পানির মধ্যে দুটির দর কমেছে, চারটির দর পাল্টায়নি। বাকি ২৪টি শেয়ারের দর বেড়েছে।
দিন শেষে ডিএস-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩৮ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৬ পয়েন্টে।
এই সূচকে অন্তর্ভূক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে বিকন ফার্মার, ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। কোম্পানিটির ১৮ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ২৭ লাখ টাকায়।
বিএসআরএম লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এদিন কোম্পানিটির এক লাখ ১৭ হাজার ১৮৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭৫ লাখ টাকায়।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। এদিন কোম্পানির শেয়ার ৩৪ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৬ টাকা ৪০ পয়সা।
জিএসপি ইস্পাতের শেয়ার ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ দর বেড়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার দর বেড়েছে ১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
তিন কোম্পানির লেনদেনে অবদান ৩৮ শতাংশ
লেনদেনে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে এগিয়ে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেড বুধবারও ছিল শীর্ষে। লেনদেন এককভাবে এই কোম্পানির ২৩ শতাংশ অবদান ছিল। বাকি দুটি কোম্পানির মধ্যে রবি ও বেট বাংলাদেশ-বিএটিবিসির অবদান ছিল ১৫ শতাংশ।
বুধবার বেক্সিমকো লিমিটেডের এক কোটি ৪৬ লাখ ৪৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৪ কোটি ১২ লাখ টাকায়।
রবির এক কোটি ১৭ লাখ ৫৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি টাকায়।
বেট বাংলাদেশ-বিএটিবিসি’র ২ লাখ ২৬ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়।
বেক্সিমকোফার্মার ১৩ লাখ ৬৫ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি টাকায়।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ৬২ লাখ ৪৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৫১ লাখ টাকায়।
খাতভিত্তিক লেনদেন
বুধবার লেনদেনে প্রায় সব খাতের কোম্পানির শেয়ারের দর তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে বিমা খাতের শেয়ারের দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
ব্যাংক খাতে তালিকাভুক্ত ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর বেড়েছে ১২টির। আর দর কমেছে পাঁচটির। পাল্টায়নি ১৩টির।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ২১ কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৫টির, দর কমেছে দুটির। দর পাল্টায়নি চারটির।
প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত ৪২টি কোম্পানির মধ্যে দর পাল্টায়নি ১৮টির, দর বেড়েছে ২২টির। বাকি দুটির দর কমেছে।
ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির। পাল্টায়নি চারটির। দর কমেছে তিনটির।
বিমা খাতে তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে ৪৬টির। দর পাল্টায়নি দুটির, কমেছে একটির।
সূচক ও লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৬৭ দশমিক ৯২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৮৫ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৩ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৪৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৯০টির, কমেছে ৩৫ টির ও পাল্টায়নি ১১৮টির দর।
লেনদেন হয়েছে ৫৩০ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫৯১ কোটি টাকা। এ হিসেবে একদিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৬১ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে- সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২০৭ দশমিক ০২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫৯০ পয়েন্টে।
লেনদনে হওয়া ২১৬টি কোম্পানির ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১১২টির, কমেছে ৪৮টির ও পাল্টায়নি ৫৬টির। লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি টাকা।
আগ্রহ ও অনাগ্রহের কোম্পানি
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে বুধবার শীর্ষে ছিল দ্বিতীয় দিনের লেনদেনে থাকা ই জেনারেশন লিমিটেড। দ্বিতীয় দিনেও কোম্পানিটির দিনের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ দর বেড়েছে ১৫ টাকা শেয়ার হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা। বৃহস্পতিবার থেকে কোম্পানিটির স্বাভাবিক ১০ শতাংশ করে শেয়ার দর বাড়তে বা কমতে পারবে।
দর বৃদ্ধির দ্বিতীয় স্থানে ছিল বিকনফার্মা, যার শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ। রবির শেয়ার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। জেএমআই সিরিঞ্জের শেয়ার দর বেড়েছে ৭.৮২ শতাংশ।
অপরদিকে এদিন দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল এনসিসি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর কমেছে ৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
জিলবাংলা সুগারের দাম কমেছে ৪.২৮ শতাংশ। ইউনিলিভারের ৩.২৮ শতাংশ, ফার্স্ট ফিন্যান্স ইনভেস্টমেন্টের দর কমেছে ২.৫৬ শতাংশ।