বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুঁজিবাজারে উচ্ছ্বাস থেকে হতাশা

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৮:০৩

২১ ডিসেম্বরের পর পুঁজিবাজারে আসতে থাকে শ শ কোটি টাকা। লেনদেন প্রথমে ছাড়ায় এক হাজার কোটি, পরে ছাড়ায় দুই হাজার কোটি। সেটি কমতে কমতে এখন ছয় শ কোটির ঘরে।

এক মাসের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে পুঁজিবাজার নিয়ে উচ্চাশা। মুনাফা করা নয়, এখন বিনিয়োগকারীরা পোর্টফোলিও কত কমে, সেটির হিসাব রাখতে ব্যস্ত।

ছয় হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি সূচক নিয়ে এখন কোনো আলোচনা নেই। দূর স্বপ্নে রূপ নিয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন।

গত বছরের শেষে, আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ২১ ডিসেম্বরের পর পুঁজিবাজারে আসতে থাকে শ শ কোটি টাকা।

লেনদেন প্রথমে ছাড়ায় এক হাজার কোটি, এরপর দেড় হাজার কোটি, পরে দুই হাজার কোটি, একদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি এবং একদিন ছাড়ায় আড়াই হাজার কোটি।

মাঝে ১০ দিন গড়ে লেনদেন হয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

২০১০ সালে মহাধসের পর বাজারে বিনিয়োগকারীদের এত বেশি সক্রিয়তা দেখা যায়নি। আশা করা হচ্ছিল, আবার সুদিন আসছে বিনিয়োগকারীদের।

কিন্তু জানুয়ারি শেষ সপ্তাহ থেকে উল্টো স্রোত। মার্জিন ঋণের সুদহার ১২ শতাংশ নির্দিষ্ট করা নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সিদ্ধান্তের পর থেকেই ধীরে ধীরে শুরু হয় মন্দাভাব।

শেয়ারের মূল্য যেমন কমতে থাকে, তেমনি শেয়ারের হাতবদলও কমে যায়। আড়াই হাজার কোটি টাকা থেকে লেনদেন এখন নেমেছে ছয় শ কোটির ঘরে।

বৃহস্পতিবার লেনদেন নেমেছে ৬৯৪ কোটি টাকায়। লেনদেনের চেয়ে বেশি নেমেছে বিনিয়োগকারীদের আশার পারদ। এখন হতাশ সিংহভাগ।

পুঁজিবাজার এমনই এক জায়গা, সেখানে সুখবর যেমন সবাইকে সংক্রমিত করে, তেমনি নেতিবাচক তথ্যও আতঙ্কিত করে সিংহভাগকে।

উঠতি বাজারে যেমন আরও বেশি দাম বাড়বে ভেবে শেয়ার ধরে রাখেন বিনিয়োগকারীরা, তেমনি পড়ন্ত বাজারে আরও কমবে ভেবে বিক্রি করেন তারা। আর এই প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় আতঙ্ক।

তবে এবার পড়তি বাজারে শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রাখার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে, যে কারণে বিক্রির পরিমাণ বেশ কম।

বাজারে কেন এই চিত্র, সেটি নিয়ে ধারণা নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের বা বাজার বিশ্লেষকদের। তবে কিছু ধারণা করে থাকেন তারা।

একটি মত হচ্ছে, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকরীদের ডে ট্রেডিং আর সাধারণ বিনিয়োগকারীরা গুজবে শেয়ার কিনে লোকসানের কারণে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না এখন।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যখন দেখে শেয়ার বিনিয়োগ করার পর লাভ পাওয়া যাচ্ছে তখন তারা আবার নতুন বিনিয়োগ করে। খুব কমসংখ্যক বিনিয়োগকারী আছে যারা নতুন বিনিয়োগ করে মূল্য সমন্বয় করে।

আর বিনিয়োগকারীরা বলছেন, শেয়ার কিনে লোকসান হওয়ার কয়েক দিন অপেক্ষায় থাকার পর দর আরও কমলে কিছু সমন্বয় করা হয়। কিন্তু পতন যদি দীর্ঘ হয় তাহলে আর সমন্বয় করা হয় না। অপেক্ষা করতে হয় দাম কখন বাড়বে।

চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি আড়াই হাজার কোটি টাকার লেনদেন দেখেছিল বিনিয়োগকারীরা। আর ১৪ জানুয়ারি সূচক উঠেছিল ৫ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে।

কীভাবে বাড়ল লেনদেন

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের-বিএসইসি। বেশ কিছু নীতি পরিবর্তন ও নতুন ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

এতে গত বছরের ডিসেম্বর থেকেই বাজার ঊর্ধ্বমুখী রূপ নেয়। নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় হওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আসেন।

এ সময়ে বিএসইসি ঘোষণা করা হয় আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে আইপিও শেয়ার। তবে শর্ত দেয়া হয়, পুঁজিবাজারে ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।

এমন সিদ্ধান্তের পর আইপিওর জন্য যেসব বিও হিসাব ছিল সেগুলোতে নতুন বিনিয়োগ হয়েছে।

এ সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল বহুজাতিক মোবাইল ফোন কোম্পানির রবি আজিয়াটা লিমিটেড। প্রায় এক যুগ পর পুঁজিবাজারে টেলিকম খাতের রবি তালিকাভুক্ত হচ্ছে তা নিয়ে উচ্ছ্বাসের শেষ ছিল না বিনিয়োগাকারীদের।

রবি লেনদেন শুরু করে ২৪ ডিসেম্বর, সেদিন পুঁজিবাজারে লেনদনে হয় ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। যদিও সেদিন রবির শেয়ার লেনদেন হয়নি। কিন্তু শেয়ার কেনার জন্য এক কোটির বেশি অর্ডার ছিল ১৫ টাকায়।

এর মধ্যে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বাংলাদেশ আসছে বেক্সিমকো গ্রুপের মাধ্যমে। করোনার সময়ে পার্সোনাল প্রোটেকশন–পিপি, মাস্ক রপ্তানি করে বড় অঙ্কের আয় যোগ হয় বেক্সিমকো লিমিটেডে। বছর শেষে ভালো লভ্যাংশের প্রত্যাশায় বেক্সিমকোতে বাড়তে থাকে বিনিয়োগ।

রবির শেয়ার যখন দর বেড়ে ৬৩ টাকায় তখন এক দিনেই লেনদেন হয় সাড়ে ছয় কোটির বেশি শেয়ার। তারপর যখন রবির শেয়ার দর ৭৭ টাকা তখনও লেনদেন হয় দেড় কোটির বেশি শেয়ার।

এ সময়ে আরও এনার্জিপ্যাক পাওয়ার, মীর আকতার হোসাইন, তওফিকা ফুডস অ্যান্ড অ্যাগ্রো লিমিটেড। সবগুলোতেই উচ্চদরে বিনিয়োগ করে এখন লোকসানে বিনিয়োগাকরীরা।

লেনদেনে উত্থানপতন

গত ২১ ডিসেম্বর লেনদেন হয় ১ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। পরের দিন হাজার কোটির নিচে নেমে গেলেও ২৩ ডিসেম্বর আবার ছাড়ায় ১ হাজার কোটি টাকা।

এরপর ২৪ ডিসেম্বর ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা, সরকারি দুই দিন ছুটির পর ২৭ ডিসেম্বর ১ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা, ২৮ ডিসেম্বর ১ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা, ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা, ৩০ ডিসেম্বর লেনদেন হয় ১ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা হয় লেনদেন।

নতুন বছরে নতুন প্রত্যাশায় শুরু হয় ২০২১ সালের প্রথম লেনদেন ৩ জানুয়ারি। সেদিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা। ৪ জানুয়ারি ২০১০ সালের পর প্রথম ২ হাজার কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করে ডিএসই। এদিন লেনদেন হয় ২ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ৫ জানুয়ারি লেনদেন হয় সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। তারপর বহুবার দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন হলেও আড়াই হাজার কোটি টাকার ঘরে পৌঁছাতে পারেনি।

২৭ জানুয়ারির পর থেকে এক হাজার কোটি টাকার ঘর থেকে নেমে আসে ডিএসইর লেনদেন। এদিন লেনদেন হয় ৯০৫ কোটি টাকা। এরপর থেকে কমছে আর কমছে।

এরপর ১২ জানুয়ারি লেনদেন নেমে আসে সর্বনিম্ন ৬৮৩ কোটি টাকায়। পরে আবার বাড়লেও বৃহস্পতিবার আবার নেমে আসে ৬৯৪ কোটি টাকায়।

কী বলছেন বিনিয়োগাকরীরা

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আনম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, পুঁজিবাজারে যখন এক হাজার কোটি টাকা লেনদেন শুরু হয়েছিল তখন বিনিয়োগাকারীরা প্রচুর নতুন শেয়ার কিনেছে। সেখানে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও ছিল। লেনদেন যখন বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা বা তার বেশি হলো তখন বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে গেল।’

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে এমন অবস্থায় সাধারণ বিনিয়োগাকারীরাও এসেছেন। কিন্তু এখন খোঁজ নিলে দেখা যাবে সিংহভাগ সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ আটকে আছে।’

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিএসইসি যেসব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সবগুলোই পুঁজিবাজারে বিনিযোগ বাড়ানোর জন্য। কিন্তু কারসাজিকারীরা সেব সিদ্ধান্তকে পুঁজি করে মুনাফা নিয়ে যাচ্ছে।

‘নতুন কোম্পানির শেয়ার তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তারা কারসাজি করে। দাম বাড়লে তারা বিক্রি করে সাধারণ বিনিয়োগাকরীরা লাভের আশায় সেগুলো কেনে। কিন্তু তারা লাভ পান না।

‘দাম কমতে কমতে যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অস্থির হয়ে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন তখন বড় বিনিয়োগকারীরা কেনেন। এই হচ্ছে পুঁজিবাজারের অবস্থা।’

তিনি বলেন, ‘এ থেকে উত্তোরণের জন্য নতুন বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই সচেতন ও কোম্পানি সম্পর্কে জেনে বিনিয়োগ করা উচিত।’

এ বিভাগের আরো খবর