পুঁজিবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা বাড়াতে এক্সপোজার লিমিট গণনার হিসাব নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক আলোচনায় এই বিষয়টি জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
সোমবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ে এই সভা হয়।
বিএসইসি চেয়ারম্যান ব্যাংকগুলোকে বর্তমান সীমায় সর্বোচ্চ বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ দিলে ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এক্সপোজার নীতিমালার কারণে এটি কঠিন।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নে আর্থিক খাতের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী বিনিয়োগ সীমা নির্ধারণ করা উচিত।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার পর সংস্থাটি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে আসছে। সম্প্রতি বিএসইসি চেয়ারম্যান দুবাইয়ে রোড শো করে এসেছেন। তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কম এবং এটাকে বাজারের স্থিতিশীলতার একটি অন্তরায় হিসেবে দেখা হয়।
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা শেয়ার দর হঠাৎ পড়ে গেলেই বিক্রি করে দেন বা তহবিলের অভাবে মূল্য সমন্বয় করতে পারেন না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের তহবিল বড় থাকায় এই মূল্য সমন্বয় খুব একটা সমস্যা হয় না।
তবে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যাংকের বিনিয়োগ বেঁধে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে শেয়ারের দাম বাড়লে বাজারমূল্যের হিসাবে নির্ধারিত হয় এক্সপোজার লিমিট। ফলে তখন ব্যাংকগুলোতে শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়।
আবার কেনার পর শেয়ারের দাম কমে গেলে তখন আবার হিসাব হয় ক্রয় মূল্যে। ফলে বাড়তি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হয় না।
ধরা যাক, কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগের সীমা ১০০ টাকা। ব্যাংক ৮০ টাকায় শেয়ার কিনেছে। কিন্তু দাম বেড়ে সে শেয়ারের দাম হয়ে গেল ১১০ টাকা। তখন ব্যাংককে ১০ টাকার শেয়ার বিক্রি করে দিতে হয়।
আবার উল্টোটা হলে অর্থাৎ ৮০ টাকার শেয়ারের দাম কমে ৬০ টাকা হয়ে গেলে তখন ৪০ কিন্তু ৪০ টাকায় আরও বেশি শেয়ার কিনে সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না। তখন কেনা যাবে ২০ টাকার শেয়ার।
এই এক্সপোজারের হিসাব গণনার নীতি পাল্টাতে গত কয়েক বছর ধরেই পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক রাজি হচ্ছে না।
বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যানকে ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বিনিয়োগের পরিমাণ সীমার কাছাকাছি থাকায় নতুন বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে গেছে।
বিদ্যমান বিধিমালা অনুসারে, একটি ব্যাংক তার রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে।
তখন যেসব ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার কম বিনিয়োগ আছে তাদের বিনিয়োগের আহবান জানান বিএসইসি চেয়ারম্যান।
সংস্থার কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে ২২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা- সিএফও সঙ্গে সভা আয়োজন করা হয়।
সভায় সৌজন্য স্বাক্ষাতে যোগ দেন বিএসইসি চেয়ারম্যান।
বৈঠকের বিষয়ে কমিশনার সামসুদ্দিন বলেন, ‘সভায় পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আছে কি না সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে যখন উত্থান ও পতন হয় তখন তাদেরও কিছু দায়িত্ব থাকে। সে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেগুলোর সমাধানে আমরাও কাজ করব। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনরের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে।’