ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী। এখানকার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে নানা রঙের ফুল যেমন আকৃষ্ট করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটক-দর্শনার্থীদের, তেমনি এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তিও গড়ে উঠেছে এর ওপর।
তবে গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ফুলের মাঠ লন্ডভন্ড হওয়া এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে লাভের মুখ দেখেননি এই অঞ্চলের ফুলচাষিরা। পয়লা ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে ফুল কেনাবেচায় অবশেষে হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।
দেশে ফুল কেনাবেচার সবচেয়ে জমজমাট সময় পয়লা ফাল্গুন থেকে পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত। ফাল্গুনকে কেন্দ্র করে গদখালী ফুল মার্কেটেও শুরু হয়েছে বেচাকেনার ধুম।
দেশের সর্ববৃহৎ এই পাইকারি বাজারে রংভেদে ১০০ গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। শ হিসাবে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। রজনীগন্ধা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং জারভেরা ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গাঁদাফুল এক হাজারের আঁটি ৩৫০ টাকায়, জিপসি ৩০টির আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ চন্দ্রমল্লিকা ২০০ টাকায় ও কামিনীপাতা ৩০টির আঁটি ৫০ টাকায় হচ্ছে বিক্রি।
ফাল্গুনের উৎসব ঘিরে শনিবার ও রোববার দাম আরও বাড়বে বলে জানান ফুলচাষিরা।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবদুর রহিম নিউজবাংলাকে জানান, পয়লা ফাল্গুন থেকে পয়লা বৈশাখ পর্যন্ত তাদের লক্ষ্য থাকে ৮০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির। আর সারা বছর এখান থেকে ফুল বিক্রি হয় প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার।
তিনি জানান, শুক্রবার প্রায় দেড় কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শনিবার ও রোববার দুই কোটির বেশি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আশা করছেন।
আবদুর রহিম বলেন, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলচাষ হয়। এর মধ্যে দেড় হাজার হেক্টর জমিই যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার চার ইউনিয়ন গদখালী, নাভারণ, পানিসারা ও নির্বাসখোলা ইউনিয়নে। নাভারন ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে।
গদখালীর ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বাজারে ফুলের দাম অনেক ভালো। চাষিরা বেশ খুশি। কারণ চাহিদার চেয়ে ফুলচাষ কম হয়েছে।
‘আমার তিন বিঘে জমিতে চন্দ্রমল্লিকা চাষ করছিলাম। এই মৌসুমে এক লাখ টাকা লাভের আশা করতেছি।’
আলমগীর হোসেন নামের আরেকজন বলেন, ‘আমি এবার দুই বিঘে জমিতে গ্লাডিওলাস করছি। আমার ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা লাভ হবে। বাজারের অবস্থা ভালো।
‘প্রতিদিন এক হাজার ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফুলের মান ভালো হওয়াতে প্রতি ১০০ গ্লাডিওলাস ১২০০ টাকা বিক্রি করছি।’