দুই দিন বড় ধসের পর উৎকণ্ঠা কাটিয়ে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো সূচক বাড়ল পুঁজিবাজারে। তবে দ্বিতীয় দিন কমে গেছে বেশির ভাগ শেয়ারের দর। লেনদেন কিছুটা বাড়লেও ডিসেম্বর-জানুয়ারির চিত্রের তুলনায় বেশ কম।
বড় বিনিয়োগকারীরা বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বেশ সতর্ক।
টানা মন্দাভাব কাটিয়ে রবির শেয়ারে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। বছরের ৫ হাজার কোটি টাকা রপ্তানের লক্ষ্য নিয়ে পিপিই পার্ক উদ্বোধনের খবরে কদর বেড়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের। দাম বেড়েছে বেক্সিমকো ফার্মারও।
তবে বড় মূলধনী কোম্পানির ব্যাংকের শেয়ারে গতি নেই, বিমার শেয়ারে মিশ্র প্রবণতা, জ্বালানি খাতেও নিম্নগতি, বিএসইসি চেয়ারম্যানের পরামর্শ মেনে মিউচ্যুয়াল ফান্ডেও খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ১০ পয়েন্ট বাড়লেও ৯৫টি কোম্পানির দাম বাড়ার বিপরীতে কমেছে ১৪৮টির দাম। দর পাল্টায়নি ১১১টির, যার বহুগুলোই ফ্লোর প্রাইসে লেনদেন হচ্ছে। অর্থাৎ এরে চেয়ে কমে বিক্রি হওয়া সম্ভব নয়।
চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে সূচক পড়ে ২৭০ পয়েন্ট। মঙ্গলবার ১২২ পয়েন্ট ফিরে পাওয়ার পর শেয়ার না কিনে বাজারের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করেছেন বহু বিনিয়োগকারী।
আগের দিনের তুলনায় লেনদেন ১০০ কোটি টাকার মতো বাড়লেও তা ৮০০ কোটি টাকারও নিচে। অথচ জানুয়ারিতে টানা ১০ দিন লেনদেন ছিল গড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। আর ডিসেম্বরের ২১ তারিখ থেকে প্রায় দেড় মাস লেনদেন হয়েছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এদিন নতুন শেয়ার তাওফিকা এগ্রোর (লাভেলো আইসক্রিম) লেনদেন শুরু হলেও সেভাবে বিক্রেতা ছিল না। প্রথম দিনে আইপিওর ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার যে সুযোগ, সেটা অবশ্য বেড়েছে। কিন্তু ১০ টাকা ফেসভ্যালুতে আসা শেয়ার ১৫ টাকায় বিক্রিতে রাজি ছিলেন না আইপিও পাওয়া বিনিয়োগকারীরা। দিনভর পাঁচ বারে লেনদেন হয়েছে কেবল ১৭ হাজার ৯০৮টি শেয়ারের।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র। সূচকের ওঠানামা শেষে সামান্য বাড়লেও কমেছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী নজরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, দুই দিন সূচকের বড় পতনের পর কিছুটা বেড়েছে। লেনদেনও বাড়ছে। এর আগে দুদিন যে হারে সূচকের পতন হয়েছিল তাতে শেয়ারের দর এখনও তলানিতেই আছে। বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনার চেয়ে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার পর্যবেক্ষণ করছেন। বিশেষ করে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর এখন কম আছে সেগুলোই কেনা হচ্ছে।
তিনি বলেন, দ্রুত সূচক বাড়ার চেয়ে অল্প অল্প করে বাড়লেও বাজার স্থিতিশীল থাকে।
সূচক ও লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক বুধবার ১০ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৫০৯ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৫ দশমিক ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৪৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১০১ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ৯৫টির, কমেছে ১৪৮টির ও দর পাল্টায়নি ১১১টির।
লেনদেন হয়েছে মোট ৭৮৬ কোটি টাকা। আগের দিন মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৬৮৩ কোটি টাকা। এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ১০৩ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৯৭৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৩৪ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৭২টির, কমেছে ১০৫টির, দর পাল্টায়নি ৫৭টির। লেনদেন হয়েছে মোট ৫৫ কোটি ২৩ লাখ টাকার।
আগ্রহ ও অনাগ্রহ কোম্পানি
লেনদেনে এগিয়ে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার ২ কোটি ৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৬২ কোটি টাকায়।
রবির ১ কোটি ৫৪ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৭২ কোটি টাকায়।
বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-বিএটিবিসির ৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৭ লাখ টাকায়।
এ তালিকায় ছিল বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, মীর আকতার হোসাইন লিমিটেড।
নতুন শেয়ার তওফিকা এগ্রোর ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির হিসাব বাদ দিলে বাকি শেয়ারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে জেড ক্যাটাগরির লোকসানি কোম্পানি গোল্ডেনসনের শেয়ার। দর বেড়েছে ৯.৩৭ শতাংশ।
শাইনপুকুর সিরামিকের ৮.১০ শতাংশ এবং বেক্সিমকো লিমিটেডের ৬.৫৫ শতাংশ দর বেড়েছে। এ তালিকায় আরও ছিল রবি, অগ্নি সিস্টেমস।
দর পতনের দিন দিয়ে শীর্ষে ছিল প্রাইম ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর কমেছে ৫ দশমিক ০৮ শতাংশ। ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্সের ৪ দশমিক ০৪ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে।
এছাড়া বিডি ল্যাম্পের ৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, জিএসপি ইস্পাতের ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ারের দর কমেছে।