পুঁজিবাজারে গত দুই দিনের যে দরপতন, তার কোনো যৌক্তির কারণ খুঁজে পাচ্ছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
টানা দুই দিন বড় দরপতনের প্রথম দিন সারভেইল্যান্স টিমের পর দ্বিতীয় দিন বিএসইসি বৈঠক করল ব্রোকারেজ হাউজ মালিকদের সংগঠন ব্রোকারেজ এসোসিয়েশন-ডিবিএর সঙ্গে।
সোমবার দীর্ঘ বৈঠকের পর বিএসইসি ও ডিবিএর পক্ষ থেকে আতঙ্কিত হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দেয়া হয়।
ডিবিএর বৈঠক শেষে কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ডিবিএর সাথে যে বৈঠক হয়েছে সেখানে আলোচনায় পতনের কোনো মৌলিক কারণ পাওয়া যায়নি। ডিবিএ দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রথমত. সাধারণ বিনিয়োগকারীরা না জেনে না বুঝে শেয়ার বিক্রি করছে।
তিনি বলেন, একজন বিক্রি শুরু করলেই অন্যজন যেন বিক্রি না করে এবং নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী শেয়ার ক্রয় বা বিক্রয় করে সেই বিষয়ে ডিলার, ব্রোকারেজ হাউজ ও বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করলে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটিও ব্যাখ্যা করেন বিএসইসি কমিশনার। বলেন, বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার থাকে লাখ লাখ। তারা একটি অংশ বিক্রি করলে তাদের পাশাপাশি ছোট বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করছে। যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পুঁজিবাজারে কারসাজি ধরতে বিএসইসি যে সারভেইল্যান্স টিম গঠন করেছে, তার সার্ভিল্যান্স সিস্টেমে বেশ কিছু বিষয় ধরা পড়েছে জানিয়ে শামসুদ্দিন বলেন, যেসব বিষয় ধরা পড়েছে, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
তবে কোন বিষয়গুলো ধরা পড়েছে, সে বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি বিএসইসি।
আগের দিন সারভেইল্যান্স টিমের সঙ্গে বৈঠকে ১১টি হাউজ থেকে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রয়ের চাপের কথা জানায় বিএসইসি। জানানো হয়, এসব হাউজে নজরদারি করা হবে।
পুঁজিবাজারে পরপর দুই দিন বড় দরপতনের পর দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিতে
এ বিষয়ে কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন বলেন, ‘বাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। উত্থান ও পতনের বিষয়ে কমিশনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তবে উত্থান-পতন আইনকানুন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, কোনো ধরনের কারসাজি রয়েছে কি না সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা কমিশনের দায়িত্ব। সেটা আমরা করে যাব।’
মার্জিন ঋণের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়ারও তাগিদ দিয়েছে বিএসইসি। সংস্থাটির কমিশনার বলেন, যাকে ঋণ দেয়া হচ্ছে তিনি তা পরিশোধ করতে পারবেন কি না সেটি আগে যাচাই করা উচিত। তিনি ঋণ নিয়ে কী শেয়ার কিনবেন সেটাও নজরদারি করা উচিত।
দ্বিতীয় দিন দরপতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের দিনের একটি সার্কুলার নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। ওই সার্কুলারে বলা হয়, ভালো মুনাফা করা ব্যাংকগুলো ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস দিতে পারবে। আর যেগুলো মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে খুব ভালো অবস্থানে নেই, সেগুলো পাঁচ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দিতে পারবে।
এই সার্কুলারের পর দিন তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে দর হারিয়েছে ২৩টি। যদিও বেশির ভাগই দর হারিয়েছে পয়সার হিসাবে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেছেন, তিনি মনে করেন এই সার্কুলারের সঙ্গে বাজারে পতনের কোনো সম্পর্ক নেই।
বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে তা খুবই পুঁজিবাজারবান্ধব।
ডিবিএ কী বলছে
বিএসইসি যাদের সঙ্গে বসেছিল, সেই সংগঠন ডিবিএর সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন আলোচনার বিষয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারের সার্বিক বিষয়ে আলোচনার জন্য আমাদের ডাকা হয়েছিল। আমরা আমাদের কথা জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজারের যে মন্দা তার পেছনে কী কারণ তা অনুসন্ধানে সার্ভিল্যান্স সিন্টেম জোরদার করার কথা বলা হয়েছে।
রোববার ১৪২ পয়েন্টের পর সোমবার ডিএসইতে সূচকের পতন হয়েছে ১২৮ পয়েন্ট
বর্তমান কমিশনের ওপর আস্থা রেখেই বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে এসেছে উল্লেখ করে শরিফ বলেন, এখন তাদেরই এই আস্থা ধরে রাখার বিষয়।
এ জন্য ডিবিএ প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা করবে বলেও জানান শরিফ আনোয়ার হোসেন।
বাজারে হঠাৎ ধস
দুই মাস চাঙাভাবের পর বাজারে কিছুটা পতন স্বাভাবিক বিষয়, যা পুঁজিবাজারে পরিচিত মূল্য সংশোধন হিসেবে। টানা পাঁচ দিন দরপতন শেষে গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে যখন বাজার ঘুরে দাঁড়ায়, তখন আশান্বিত হন বিনিয়োগকারীরা।
কিন্তু চলতি সপ্তাহের দুই দিনে ২৭০ পয়েন্ট দরপতনের কারণ খুঁজতে হয়রান সবাই। রোববার ১৪২ পয়েন্ট পতনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিক্রয়ের চাপে বিএসইসি ১১ হাউজের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পেয়েছিল। বলা হয়েছিল, সোমবার থেকে আরও বেশি নজরদারি করা হবে।
কিন্তু কাজে আসেনি কিছুই। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পড়ে ১২৮ পয়েন্ট। দাম বাড়ে মাত্র ২৩টির। পতন হয় ২৩৬টির।