দেশের পুঁজিবাজারে টানা দুই দিন যে দরপতন দেখল, তা কোনোভাবেই স্বাভাবিক মনে করছেন না বাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ। তিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির জোরাল পদক্ষেপ চেয়েছেন।
আগের দিন ১৪২ পয়েন্টর পর এবার সূচক পড়ে ১২৮ পয়েন্ট। দর হারায় দুইশটিরও বেশি শেয়ার। বিনিয়োগকারীরা যে আতঙ্কিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় মূল্য হারানোর শতকরা হারে। আরও বেশি পড়তে পারে, এমন আশঙ্কায় লোকসানেই শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন তারা।
দুই দিনে ২৭০ পয়েন্ট পতনের প্রতিক্রিয়ায় আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আজ যে পতন হয়েছে তা স্বাভাবিক পতন নয়। রোববার বিএসইসির নজরদারির প্রেক্ষিতে ধারণা করা হয়েছিল, আজ বাজার কিছুটা ভালো হবে। কিন্ত তা হয়নি। ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে আরও জোরাল ভূমিকা পালন করতে হবে।’
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিএসইসির নেতৃত্বে রদবদল আসার পর এক গুচ্ছ সিদ্ধান্ত এসেছে যাকে স্বাগত জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চাঙ্গা হতে থাকে বাজার। বাড়তে থাকে সূচক, লেনদেন।
সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
এক দশক আগে মহা ধসে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা যখন আশান্বিত হয়ে উঠেছেন, তখনই ছন্দপতন। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ ধরে প্রতি দিনই অল্প করে যখন সূচক পড়ছিল, তখনও এ নিয়ে খুব একটা উদ্বেগের কথা বলেনি কেউ। কারণ, এক হাজার আটশ পয়েন্ট উত্থানের পর মূল্য সংশোধনের যে প্রক্রিয়া, সেটিকে স্বাভাবিক হিসেবেই দেখা হচ্ছিল।
গত সপ্তাহের শেষ দুই কার্যদিবসে সূচকে ৮০ পয়েন্টের বেশি যোগ হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা আশান্বিত হয়ে উঠে। তবে রোববার ১৪২ পয়েন্ট পতন জাগায় বিস্ময়।
সেদিন বিএসইসি জরুরি বৈঠকে বসে। এই পতন কারসাজি- ধারণা তৈরি হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থারই।
ডেকে আনা হয় সারভেইল্যান্স টিমকে। জানা যায়, ১১টি ব্রোকারেজ হাউজ থেকে অস্বাভাবিক বিক্রয় চাপ এসেছে। সিদ্ধান্ত হয়, সোমবার থেকে আরও বেশি নজরদারি হবে।
এর মধ্যে রাতে আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আসে সার্কুলার। ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ বিতরণের নীতিমালা জারি হয় এতে। বলা হয়, সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া হবে। আর যেগুলোর স্বাস্থ্য খারাপ, তারা মুনাফা দিতে পারবে পাঁচ শতাংশ হারে।
পরদিন ব্যাংক খাতের ৩০টি শেয়ারের মধ্যে দর হারিয়েছে ২৩টি। যদিও বেশিরভাগই দর হারিয়েছে পয়সার হিসাবে।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
তবে আবু আহমেদ মনে করেন না, এ কারণেই এই পতন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের জন্য ৩০ শতাংশ বোনাস ঠিকই আছে। খুব কম ব্যাংকই ৩০ শতাংশ বোনাস দিচ্ছে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং সেক্টরের সুরক্ষার জন্য করেছে। আমার মনে হয় না এ সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে।’
দর ধরে রাখতে পারেনি বিমা খাতও যা আগের দিনের বড় পতনেও ছিল অক্ষত। এই খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪১টি। কেবল দর পতন হয়নি। চার টাকার বেশি দর হরিয়েছে একটি কোম্পানি। দুই থেকে তিন টাকার মধ্যে দর পড়েছে বেশ কতগুলো।
মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টির মধ্যে দর বেড়েছে কেবল একটি, দর ধরে রাখতে পেরেছে সাতটি। বাকি সবগুলোই কমেছে।
ওষুধ খাতের ৩১টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ১৭টি। যার মধ্যে একটি হারিয়েছে ১০০ টাকার বেশি।
সেই তুলনায় গত কয়েক মাস ধরে তলানিতে থাকা টেক্সটাইল খাতের ওপর দিয়ে ঝড় গেছে কম। এই খাতের ৫৬টি কোম্পানির মধ্যে দর কমেছে ১৯টির।
৪০ টাকার নিচে নেমেছে রবির শেয়ার যা কিছুদিন আগে ৭০ টাকার বেশিতে লেনদেন হচ্ছিল।
বেক্মিকো, বেক্মিমকো ফার্মার পতন হয়েছে আবার। তবে দুই দিন সর্বোচ্চ পতনের পর দর ধরে রেখেছে নতুন তালিকাভুক্ত মীর আকতার।