পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রকৌশল খাতের কোম্পানি মীর আকতার হোসেনের শেয়ারের দর বাড়াতে সারসাজির প্রমাণ হাতেনাতে পেয়ে দুটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মীর আকতারের লেনদেন শুরু হয়েছে কেবল গত মঙ্গলবার। বিএসইসির নীতিমালা অনুযায়ী লেনদেনের প্রথম দুই দিন ৫০ শতাংশ দাম বাড়ার সুযোগ আছে।
এই শেয়ারটি বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে ৬০ টাকা করে আইপিওতে এসেছে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারটি পেয়েছেন আরও ১০ শতাংশ কমে ৫৪ টাকা করে।
প্রথম দিন শেয়ারটি ৮১ টাকা পর্যন্ত বাড়ার সুযোগ ছিল। হয়েছেও তা। তবে এই দরে বিক্রি হয়েছে কমই। এদিন হাতবদল হয় কেবল ৩২০টি শেয়ার।
নীতিমালা অনুযায়ী দ্বিতীয় দিনে আরও ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১২১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দাম বাড়ার সুযোগ ছিল।
কিন্তু লেনদেন শুরুর আগেই এই সর্বোচ্চ দরে ক্রয়াদেশ দেয়া হয় আইডিএলসি সিকিউরিটিজের দুটি বিও অ্যাকাউন্ট থেকে।
বিএসইসি মনে করছে, লেনদেন শুরুর আগেই ৪০ টাকা বেশি দরে শেয়ার কেনার এই অর্ডার কারসাজি করতেই দেয়া হয়।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, বিষয়টি জানতে পেরে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সারভিল্যান্স টিম সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়। ব্রোকারেজ হাউসটিকে সতর্ক করা হয়। পরে ওই ক্রয়াদেশ দুটি তুলে নেয়া হয়।
বিএসইসি এতে সন্তুষ্ট না হয়ে সেই দুটি বিও হিসাব জব্দ করে বিষয়টি তদন্তের জন্য অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
এই দুটি বিও হিসাব থেকে লেনদেন শুরুর আগেই ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ক্রয়াদেশ দেওয়া হলেও সারা দিনে দাম ওঠেনি এত। দিনভর ৯৫ থেকে সর্বোচ্চ ১১৭ টাকায় লেনদেন হয়েছে শেয়ারটি।
১২১ টাকা ৫০ পয়সায় লেনদেন শুরু হলে পরিস্থিতি অন্য রকম হয়ে যেতে পারত বলে মনে করছে বিএসইসি।
তৃতীয় কার্যদিবসে এসে মীর আকতারের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।
নতুন কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন শুরুর তৃতীয় কার্যদিবসে এসে ১০ শতাংশ বাড়া বা কমার যে সার্কিট ব্রেকার থাকে, সেটা কার্যকর হয়।
পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সমিতি মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বিএসইসির এই পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারকে গতিশীল করতে একদিকে যেমন সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পুঁজিবাজারের প্রতি আস্থা রাখতে হবে, তেমনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাকেও সে আস্থা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হয়।’
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার নিয়ে বর্তমান কমিশন অনেক আন্তরিক। সার্ভিল্যান্সে আগেও পুঁজিবাজারের কারসাজি ধরা পড়ত। এখনো পড়ছে। পার্থক্য হচ্ছে আগে বিনিয়োগকারীরা এ সম্পর্কে কিছু জানতে পারত না, এখন জানানো হয়। ফলে পুঁজিবাজার নিয়ে যারা কারসাজি করতে চায়, তারা সতর্ক হচ্ছে।’
এর আগে রবির শেয়ারে কারসাজির একটি চেষ্টাও ধরে বিএসইসি। সংস্থাটির মুখপাত্র রেজাউল করিম জানান, রবির শেয়ার নিয়ে যখন হুলুস্থুল সে সময় একটি বিও হিসাব থেকে পাঁচ লাখ শেয়ার সর্বোচ্চ দামে কেনার আদেশ দেয়া হয় লেনদেন চালুর আগেই।
সেটিও নজরে পড়ে সার্ভেইল্যান্স টিমের। তবে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই সেই ক্রয়াদেশ তুলে দেয়া হয়।