দশ কার্যদিবসের বেশি সময় ধরে বাজারে ধীরগতি ও পাঁচ কার্যদিবসে টানা পতন শেষে পরপর দুই দিন সূচক বাড়ল দেশের পুঁজিবাজারে।
সূচক বৃদ্ধির প্রথম দিন বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমলেও দ্বিতীয় দিন বেড়েছে বেশির ভাগ শেয়ারের দর।
তবে বিনিয়োগকারীরা যে এখনো সতর্ক, তা বোঝা যায় লেনদেনে। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৬৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট। গত দুই সপ্তাহে সূচকের এমন উত্থান দেখা যায়নি।
তবে সূচক বাড়লেও কমেছে লেনদেন। আগের দিন যেখানে লেনদেন ছিল ৭৯৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা, সেখানে লেনদেন হয়েছে ৭১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকার কিছু বেশি।
এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৮১ কোটি টাকা।
চলতি বছরের নভেম্বরের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বলতে গেলে টানা বেড়েছে পুঁজিবাজার। লেনদেন সাতশ কোটি থেকে উঠে আড়াই হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত।
পুঁজিবাজারে উত্থানের পর সাময়িক পতনও এক স্বাভাবিক ঘটনা, যেটি বাজার বিশ্লেষকরা বলে থাকেন বাজার সংশোধন।
কিন্তু উড়ন্ত বাজারে নতুন শেয়ার পাগলা ঘোড়ার মতো ছোটায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যারা মৌলভিত্তির বিবেচনা না করে বাজারের প্রবণতা দেখে শেয়ার কেনেন তারা রবি, এনার্জিপ্যাক, ডমিনোস স্টিল ও ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্সের শেয়ার উচ্চমূল্যে কিনে পড়েছেন ক্ষতির মুখে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক ৫ হাজার ৯০০ পয়েন্ট ছুঁইছুঁই অবস্থায় এই সংশোধন শুরু হয়। শুরুর দিকে সংশোধনের গতি কম থাকলেও শেষ দিকে বেশ বড় পতন হয়।
রবির শেয়ার ৭৭ টাকা থেকে নেমে আসে ৪৪ টাকা ৯০ পয়সা, এনার্জিপ্যাকের দাম ১০১ টাকা থেকে ৫৪ টাকা ৪০ পয়সা, ডোমিনোস স্টিল ৪৩ থেকে ২৪ টাকা ১০ পয়সা আর ক্রিস্টাল ইন্সুরেন্সের দর ৫৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে নেমে এসেছে ৩৮ টাকা ৭০ পয়সায়।
বিনিয়োগকারীরা এই নতুন শেয়ারগুলোতে লোকসান করার পর মঙ্গলবার তালিকাভুক্ত মীর আকতার হোসেন লিমিটেডের শেয়ারে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। তৃতীয় কার্যদিবস বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দরপতন হয়েছে এই কোম্পানির। প্রায় ১০ শতাংশ দর হারিয়েছে তারা।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সম্প্রতি পুঁজিবাজারের যে উত্থান, তা মূলত কয়েকটি কোম্পানিকে ঘিরে হয়েছে। সবগুলোর শেয়ারের দর অনেক বেশি বেড়েছিল। বিনিয়োগারীরা কিনেছেনও।
বেশি দরে যারা শেয়ার কিনেছেন, তারা বিক্রি না করে অল্প অল্প সমন্বয় করেছেন। ফলে লেনদেন ও সূচকে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি।
বাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজার মানেই শেয়ারের দরের উত্থানপতন। শেয়ারের দর বাড়বে-কমবে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। তবে কোনো শেয়ারের দর অতিমূল্যায়িত হচ্ছে কি না, সেটা যাচাই করে জানতে হবে বিনিয়োগকারীদের। তবেই বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত থাকবে।’
সূচক ও লেনদেন
বৃহস্পতিবার ৬৫ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বেড়ে সূচকের অবস্থান দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৬৪৭ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১০ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬১ পয়েন্টে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ বৃহস্পতিবার লেনদেনের চিত্র। টানা দ্বিতীয় দিন সূচক বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩৭ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৭৩ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৩টির, কমেছে ১০৬টির ও পাল্টায়নি ১১৬টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএ্সেপিআই ১৬৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৩৩১ পয়েন্টে। এদিন লেনদেন হওয়া ২৩৩টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১০১টির, কমেছে ৬৮টির ও পাল্টায়নি ৬৪টির। লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা।
সবচেয়ে বেশি আগ্রহ-অনাগ্রহ
গত কয়েক দিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার ১ কোটি ২ লাখ ৬৭ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৫ কোটি টাকায়।
দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড-বিএটিবিসি। যার ৪ লাখ ৮৯ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮২ কোটি টাকায়।
প্রতিষ্ঠানটি ১০ ফেব্রুয়ারি লভ্যাংশ ঘোষণা-সংক্রান্ত সভা করবে। বহুজাতিক এই কোম্পানি থেকে ভালো লভ্যাংশের আশায় নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে এই কোম্পানিতে।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা রবির এক কোটি ৩০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি টাকায়।
এছাড়া লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ১ কোটি ৩ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি টাকায়।
দর বৃদ্ধির দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল প্রাইম ইন্স্যুরেন্স, যার দর বেড়েছে ৮.৫৫ শতাংশ। প্রাইম ফিন্যান্সের দর বেড়েছে ৮.৩৩ শতাংশ। বিএটিবিসির দর বেড়েছে ৬.২৪ শতাংশ।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে থাকা মীর আকতার হোসাইন লিমিটেডের দর কমেছে ৯.৯৮ শতাংশ। এনার্জিপ্যাকের দর কমেছে ৮.১০ শতাংশ।
এম আই সিমেন্টের দর কমেছে ৫.২৩ শতাংশ।
এ তালিকায় ছিল মতিন স্পিনিং, রবি, ফ্যামিলি ট্যাক্স।