টানা পাঁচ কার্যদিবস ধরে কমছে পুঁজিবাজারের প্রধান সূচক, আর ছয় কার্যদিবসের মধ্যে এক দিন বাদে পাঁচ দিনই কমেছে লেনদেন। হঠাৎ পুঁজিবাজারের এমন আচরণে অনেকটাই আতঙ্কিত সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।
এ সময়ে কমেছে লেনেদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর।
বিনিয়োগকারীদের বক্তব্য, বিএসইসি বাজার উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নিলেও প্রকৃত পক্ষে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজারে যথাযথভাবে শেয়ার কেনা বেচা করছেন না। ফলে বাজারের তারল্য সমস্যা দেখা দিয়েছে।
গত পাঁচ কার্যদিবসে পুঁজিবাজারের সার্বিক লেনদেন হাজার কোটি টাকা থেকে নেমে এসেছে সাতশ কোটি টাকায়।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে বাড়তে থাকে পুঁজিবাজারের লেনদেন। ডিসেম্বরের শেষ দিকে লেনদেন উঠে আসে হাজার কোটি টাকায়। আর ২০১০ সালের মহাধসের পর প্রথমবারের মতো গত মাসে লেনদেন পৌঁছায় আড়াই হাজার কোটি টাকায়। আর সূচক পৌঁছে প্রায় ছয় হাজার পয়েন্টের কাছে।
পুঁজিবাজারের এমন উত্থানে নতুন করে আশান্বিত হয় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিএসইসির নানা উদ্যোগে বিনিয়োগ বাড়তে থাকে পুঁজিবাজারে। কিন্তু হঠাৎ গত ২৬ জানুয়ারি থেকে কমতে থাকে সূচক ও লেনদেন।
নতুন কোম্পানি রবি তালিকাভুক্ত হওয়ার পর সেখানেও আগ্রহ তৈরি হয় বিনিয়োগকারীদের। একের পর এক নতুন আইপিও আবেদন আর তালিকাভুক্তির মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সম্ভাবনাকে অনেকটা আতঙ্কের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে ক্রমাগত সূচক ও লেনদেনের পতন।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, যেহেতু ক্রমাগত শেয়ারের দর কমেছে আর লেনদেনও কমে আসছে সেহেতু নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।
তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখনও ভালো আছে। কারণ গত ছয় মাস আগেও পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়েছে তিনশ থেকে চারশ কোটি টাকা। এখন সেটি সাতশ কোটি টাকায় আছে। একই সঙ্গে সূচকও সাড়ে পাঁচ হাজারে পয়েন্ট ধরে রেখেছে। ফলে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত না হয়ে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে সেগুলোতে বিনিয়োগের চিন্তা করা উচিত।
এদিকে মঙ্গলবার পুঁজিবাজারে প্রথম লেনদেন শুরু করেছে বুকি বিল্ডিং পদ্ধতিতে তালিকাভুক্ত হওয়া মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড। কোম্পানির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫৪ টাকা ধরে আইপিও আবেদন গ্রহণ করে।
প্রথম দিনের লেনদেনে কোম্পানিটির শেয়ার দর ৫০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ টাকা। লেনদেন শুরুর ত্রিশ মিনিটে মাত্র ৩২০টি শেয়ার লেনদেন হয়। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৭৩০টি শেয়ার।
নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রে লেনদেনের প্রথম দুদিন শেয়ারের দর বাড়বে ৫০ শতাংশ। তারপর স্বাভাবিক নিয়মে ১০ শতাংশ করে দর বাড়বে।
গত কয়েক দিন ধরে পুঁজিবাজারে ভাটার টানে হতাশা বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের। ছবি: নিউজবাংলা
কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ১২৫ কোটি টাকা সংগ্রহে দুই কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৪৭টি শেয়ার ইস্যু করেছে। এর মধ্যে এক কোটি তিন লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৭টি শেয়ার আইপিও মাধ্যমে ইস্যু করা হয়েছে। বাকি এক কোটি তিন লাখ ৮৫ হাজার ৮০০টি শেয়ার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যোগ্য বা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের।
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী আজমল হোসেন স্বপন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আইপিও বা প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের কারণে নতুন বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এটা ঠিক না। কারণ, যারা আইপিও আবেদন করেন তাদের বিনিয়োগ আলাদা। আর যারা ডে ট্রেডিং করেন তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত আলাদা।
তিনি বলেন, মূলত যখন শেয়ারের দর বেড়েছিল তখন সাধারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক সব শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে মুনাফা উত্তলন করেছে। পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় না করায় দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর কমেছে লেনদেন।
সূচক ও লেনদেন
মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩৫ দশমিক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৫৬৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ ভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস আট দশমিক ০৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪৬ পয়েন্টে। বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৬ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১০৯ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৫টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯০টির, কমেছে ১৪৭টির ও পাল্টায়নি ১১৮টির। এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৭০২ কোটি টাকা। আগের দিনের তুলনায় লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি টাকা। সোমবার লেনদেন হয়েছিল ৭১৮ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে- সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯৯ দশমিক শূণ্য ৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ১৯৭ পয়েন্টে। লেনদেন হওয়া ২৪০টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৭১টির, কমেছে ১০৫টির ও পাল্টায়নি ৬৪টির। এদিন লেনদেন হয়েছে ১০০ কোটি টাকা।
দর বেড়েছে কমেছে
মঙ্গলবার সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া দর বৃদ্ধির তালিকায় থাকা জি কিউ বলপেনের শেয়ারের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ন্যাশনাল ফিড মিলের শেয়ারের দর বেড়েছে ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। ওয়াল্টন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিস লিমেটেডের দর বেড়েছে চার দশমিক ৪৭ শতাংশ।
সোমাবর দর বাড়ার তালিকায় শীর্ষে থাকা বিমা খাতের মঙ্গলবার দর পতন হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দর পতন হওয়া তালিকায় শীর্ষে ছিল ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, যার দর কমেছে ৬.৯০ শতাংশ। এ ছাড়া প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের দর কমেছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, সাভার রিফ্র্যাক্টরিজ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে ৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ ছাড়া এ তালিকায় ছিল এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, শ্যামপুর সুগার, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, নর্দান ইন্স্যুরেন্স ও এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্স।
লেনদেনের দিক দিয়ে বরাবরের মতো শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার এক কোটি ৫৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২৮ কোটি টাকায়। বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের তিন লাখ ২০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি টাকায়। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মার ২৬ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৬ লাখ টাকা। রবির ৮৭ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি টাকায়।