পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেনের প্রত্যাশা করার পরদিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন আরও কমে গেল। লেনদেনের পাশাপাশি কমেছে বেশির ভাগ শেয়ারের দাম। প্রধান সূচকেও বড় পতন হয়েছে।
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারে ডিএসইসিতে লেনদেন হয়েছে ৮২৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ১১৮ কোটি টাকা কম।
এটি গত দেড় মাসের সর্বনিম্ন লেনদেন। এর আগে গত ৮ ডিসেম্বর লেনদেন হয়েছিল ৭১৯ কোটি টাকা।
অথচ শনিবার বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদন এক কর্মশালায় বলেছেন, তারা পুঁজিবাজারে দিনে তিন হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখতে চান।
গত ডিসেম্বরের শেষ দিন থেকে পুঁজিবাজারের লেনদেনে চাঙাভাব দেখা দেয়। ২১ ডিসেম্বর থেকে টানা এক মাস লেনদেন হয়েছে এক হাজার কোটি টাকার বেশি। পাঁচ দিন লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি। এক দিন হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০১০ সালের মহাধসের পর পুঁজিবাজারে এই চাঙাভাব এর আগে দেখা যায়নি। এতে এক দশক আগে পুঁজি হারানো বিনিয়োগকারীরা যখন তাদের পুঁজি ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা করছেন, তখন এক সপ্তাহ ধরে বাজার নিম্নমুখী। বেশির ভাগ শেয়ারদরের পাশাপাশি কমছে মূল্যসূচক, কমছে লেনদেনও।
টানা তিন কার্যদিবস এক হাজার কোটি টাকার নিচে লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
জানুয়ারির শেষ দিকে লেনদেন কিছুটা কমলেও বাজার বিশ্লেষকরা একে বলছেন মূল্য সংশোধন হিসেবে। তারা বলছেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে বাড়তে থাকা শেয়ারের দর কিছুটা কমবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে সেই সংশোধন সাত কার্যদিবসেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশাও আছে।
রোববার তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে। একইভাবে কমেছে ব্যাংকবহির্ভূত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের শেয়ারের দর।
রোববার বড় পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালোভাবে যাচ্ছে। সূচক ও লেনদেনে পতন হলে যেসব বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়, তাদের বাজার সম্পর্কে আরও জানা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘বিএসইসি বলেছে তিন হাজার কোটি টাকায় লেনদেন দেখতে চাই। তার মানে তারা বাজারকে আরও সুসংহত ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। এর জন্য সময় দিতে হবে।’
পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থার যেকোনো সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য। ইতিমধ্যে বিএসইসি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সুফল পেয়েছে বিনিয়োগকারীরা, যার পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ সময় ধরে পতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
‘বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, লেনদেন তিন হাজারে দেখতে চাই। এর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও নতুন বিনিয়োগ। এটি সম্ভব হলে ভবিষ্যতে লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকাই হবে।’
সূচক ও লেনদেন
সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৪ দশমিক ৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৬৪৯ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ১৫ দশমিক ০২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৬৫ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে ডিএস-৩০ সূচক ৩০ দশমিক ৮১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৬০ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৬ টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৬টির, কমেছে ২১০টির ও পাল্টায়নি ৯০টির।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ২০০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৩৭টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ১৪২টির ও পাল্টায়নি ৫১টির। মোট লেনদেন হয়েছে ৮২ কোটি টাকা।
দর বেড়েছে কমেছে
এদিন সবচেয়ে বেশি শেয়ারের দর বেড়েছে এম আই সিমেন্ট কোম্পানির, ৯.৯১ শতাংশ। বাংলাদেশ স্টিল রি-রোলিং মিল লিমিটেডের শেয়ারের দর বেড়েছে ৬.৮৮ শতাংশ। বিএসআরএম স্টিল লিমিটেডের শেয়ারের দর বেড়েছে ৬.৪১ শতাংশ। এ তালিকায় ছিল এসিআই ফর্মোলেশন, হু ওয়েল টেক্সটাইল, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস।
দর পতনের দিক দিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে প্রাইম লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও জিবিবি পাওয়ার। তাদের দর কমেছে ৭.৭৮ শতাংশ করে। সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লিমিটেডের শেয়ার দর কমেছে ৭.৬৯ শতাংশ।
এ তালিকায় ছিল সামিট পাওয়ার, ফিনিক্স ফিন্যান্স ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অ্যানার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, সাইফ পাওয়ার।
লেনদেনে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বেক্সিমকো ও রবি।
বেক্সিমকোর মোট এক কোটি ৭৬ লাখ ৫৯ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৫ কোটি ৮ লাখ টাকায়। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা রবির এক কোটি তিন লাখ ১০ হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫৫ কোটি টাকায়।
লংকাবাংলা ফিন্যান্সের এক কোটি তিন লাখ সাত হাজার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪১ কোটি টাকায়।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির দুই লাখ ৩৫ হাজারটি শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৭ কোটি ১১ লাখ ৭৭ হাজার টাকায়।
লেনদেনে শীর্ষ চার স্থানে থাকা কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে একমাত্র বেক্মিকোর শেয়ার দর। দাম বেড়েছে দুই টাকা ২০ পয়সা। রবির দাম কমেছে ৭৯ পয়সা, লঙ্কাবাংলার দাম কমেছে দুই টাকা ৫০ পয়সা। আর ব্রিটিশ আমেরিকান কোম্পানির দর কমেছে ৩৯ টাকা ৯০ পয়সা।