এক মাসেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকার কম লেনদেন হলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে।
লেনদেন কমলেও বন্ধ হয়েছে দরপতন। ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেশির ভাগ শেয়ার।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, টানা এক মাস উত্থানের পর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস থেকে শেয়ারের যে মূল্যপতন, সেটি যে দর সংশোধন ছিল, বুধবারের লেনদেনে সেটিই স্পষ্ট হলো।
দিনভর ওঠানামার মধ্য দিয়ে শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে সূচকে ১৯ পয়েন্ট যোগ হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লেনদেন।
এদিন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৫টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ১০১টির দর।
আগের দিন দাম বেড়েছিল ২৭টির, কমেছিল ২৫৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৭৫টির। সেদিন দুই বছরের মধ্যে মূল সূচকের সর্বোচ্চ পতন দেখে পুঁজিবাজার। এক দিনেই সূচক কমে ৯৪ পয়েন্ট।
সূচক বাড়লেও লেনদেন কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। গত ২২ ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো হাজার কোটি টাকার নিচে নামল লেনদেন।
এদিন কেনাবেচা হয়েছে ৯০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার। এর আগে হাজার কোটির নিচে শেষবার লেনদেন হয়েছে গত ২২ ডিসেম্বর। তবে সেদিনও লেনদেন আজকের চেয়ে বেশি ছিল; কেনাবেচা হয় ৯৭৫ কোটি ৫১ লাখ টাকার।
বলতে গেলে গত ১৪ জানুয়ারি থেকেই বাজার নিম্নমুখী। মাঝে এক দুই দিন সূচক বাড়লেও সামগ্রিকভাবে সংশোধন হয়েছে বাজার।
বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, সংশোধন দীর্ঘ হওয়ার আগেই আইসিবির বিলিয়ন ডলার বন্ড ছাড়ার খবর নতুন আস্থা যুক্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।
আগের দিন সিদ্ধান্ত হয়, পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে এক বিলিয়ন ডলার বা প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বন্ড ছাড়বে রাষ্ট্রীয় আর্থিক ও বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ-আইসিবি। যাতে বিনিয়োগ করবে সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক।
এর প্রভাবে বুধবার দর বৃদ্ধির শীর্ষ দশ কোম্পানির তালিকায় উঠে আসে আইসিবি।
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শেষে চিত্র
তারল্য সরবরাহে বন্ডটি দ্রুত ইস্যু করতে আগ্রহী নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। আইসিবিকে শক্তিশালী করতে এর আগে কমিশনের চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১০ হাজার টাকার তহবিল চেয়েছিলেন। সেটি কিছুটা সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আইসিবির বন্ডটি পুঁজিবাজারে তারল্য সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে বিএসইসি।
ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকলে সূচকের উত্থান পতনে ও বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রমাগত শেয়ারের দর বাড়ার কারণে অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষা করেন লাভের পরিমাণ বাড়াতে। কিন্তু যখন দেখে শেয়ার বিক্রি চাপ বাড়ছে তখন তারাও শেয়ার বিক্রি করে দেন। এতে বড় পতন হয়, যা সাময়িক।’
আইসিবি বড় অংকের বন্ড ইস্যু পুঁজিবাজারের জন্য খুবই ভালো খবর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পুঁজিবাজারের প্রতি নতুন আস্থা তৈরি করেছে।’
আগ্রহের শীর্ষে আবার বেক্সিমকো
গত এক মাস ধরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেড একদিন পর আবার ফিরে পেয়েছে লেনদেনের শীর্ষ অবস্থান।
প্রতিষ্ঠানটির এক কোটি ৬৫ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৩২ কোটি টাকায়।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল রবি, যার এক কোটি ২৭ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি টাকায়।
তৃতীয় অবস্থানে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেডের তিন লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৪৮ কোটি টাকায়।
সবচেয়ে বেশি লেনদেনের তালিকায় ছিল বেক্সিমকো ফার্মা, লংকাবাংলা ফিন্যান্স, এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন।
খাতভিত্তিক লেনদেনে মিশ্রাবস্থা ছিল ব্যাংকের শেয়ারে। তবে দর পতনের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি কমেছে বিমা খাতের শেয়ারের। এদিন তালিকাভুক্ত ৪৯টি বিমা কোম্পানির মধ্যে দর বেড়েছে মাত্র ১২টির।
আগের দিন দাম কমলেও বুধবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার। ছবি: নিউজবাংলা
সূচক ও লেনদেন
বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে-ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭১৪ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস দশমিক ৪০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৭৯ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১৫ দশমিক ৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৭৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ৩৫৪টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১২৮টির, কমেছে ১২৫টির ও পাল্টায়নি ১০১টির।
আগের দিনের তুলনায় ২২০ কোটি টাকা কমে লেনদেন হয়েছে ৯০৫ কোটি টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১২৫ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৫৬ দশমিক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৮৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৪২টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৩টির, কমেছে ৯৫টির ও পাল্টায়নি ৫৪টির। লেনদেন হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা।
দর বেড়েছে কমেছে
বুধবার নতুন করে দর বৃদ্ধির তালিকায় উঠে এসেছে বিকনফার্মা। এদিন কোম্পানিটির শেয়অরের দর বেড়েছে ১০ শতাংশ।
ইস্টল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে ৮.২১ শতাংশ, ম্যাকসন স্পিনিংয়ের দর বেড়েছে ৭.৯২ শতাংশ। আইসিবির শেয়ারের দর বেড়েছে ৭.৮৮ শতাংশ।
দর পতনের দিক দিয়ে শীর্ষে ছিল এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশনের, যার দর কমেছে ৮.৩৯ শতাংশ।
মেঘনা প্যাটের দর কমেছে ৮.১০ শতাংশ। তাল্লু স্পিনিংয়ের দর কমেছে ৬.৫২ শতাংশ।