করোনাকালে ব্যবসায় অভাবনীয় প্রবৃদ্ধি বেক্সিমকো গ্রুপে। বিপুল পরিমাণ পণ্য রপ্তানির কারণে বেড়েছে বেক্সিমকো লিমিডেটের আয়।
ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরামের লোকাল এজেন্ট হিসেবে তিন কোটি টিকায় এক ডলার করে কমিশন পাবে বেক্সিমকো ফার্মা। ফলে বাড়বে তাদের আয়।
এই দুই কারণে কোম্পানি দুটি গত এক মাস ধরেই বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের তুঙ্গে।
গ্রুপের আরেক কোম্পানি শাইনপুকুর লিমিটেডও কয়েক বছরের খরা কাটিয়ে ব্যবসায় বেশ ভালো করছে। এই কোম্পানির প্রতিও আগ্রহ বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষ করে বেক্সিমকো ও বেক্সিমকো ফার্মা গত এক মাস ধরেই লেনদেনের শীর্ষ তিনটি কোম্পানিতে থাকছে।
তবে সোমবার যে চিত্র দেখা গেল, তা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। পুঁজিবাজারে এদিন যত লেনদেন হয়েছে, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশই এই দুটি কোম্পানির।
সপ্তাহের দ্বিতীয় কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্চে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৫৮৫ কোটি ২২ লাখ টাকা।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া বেক্সিমকো লিমিডেটের লেনদেন হয়েছে ৩৩০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার লেনদেন হয়েছে ১৫২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
আর শাইনপুকুরের লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
অর্থাৎ বেক্সিমকো গ্রুপের তিন কোম্পানির লেনদেন দাঁড়িয়েছে ৪৯৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অর্থায় প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, শতকরা হিসাবে ৩১ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এর আগে পুঁজিবাজারে কোনো একদিন কোনো একক গ্রুপের শেয়ারে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, তা বলতে পারছেন না পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিন বেক্সিমকো লিমিটেড তাদের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর সময়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এই সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে প্রায় আট গুণ।
২০১৯ সালের এই সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের আয় ছিল শেয়ার প্রতি ২৩ পয়সা। সেখানে এবার আয় হয়েছে এক টাকা ৭৮ পয়সা।
২০১০ সালে পুঁজিবাজারে বিপর্যয়ের পর থেকে বেক্সিমকোর আয়ে এমন উল্লম্ফন এর আগে দেখা যায়নি।
আগামী কোম্পানিটি আরও ভালো লভ্যাংশ দেবে এমন মনস্তান্তিক ধারনা থেকে লেনদেনের শীর্ষে ছিল এ কোম্পানিটি। আগ্রহ বেড়েছে বিনিয়োগকারীদের।
ভারত থেকে করোনার টিকা আনার দায়িত্ব পাওয়ার পর ক্রমাগত বাড়ছে বেক্সিমকো গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ারের দাম।
বেক্সিমকো ফার্মার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি গত ডিসেম্বর থেকেই। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে সরকার যে তিন কোটি টিকা কিনতে যাচ্ছে, সেই প্রতিষ্ঠানের লোকাল এজেন্ট বেক্সিমকো গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠান।
প্রতি টিকার জন্য এক ডলার করে কমিশন পাবে বেক্সিমকো ফার্মা। যদিও রোববার প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, তাদের কিছু মুনাফা হতে পারে, তবে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, তাতে ঝুঁকিও প্রবল।
তিনি বলেন, এই অর্থের বিনিময়ে যে শর্ত দেয়া হয়েছে, আগে জানলে এই কাজ নিতেন না।
এ ছাড়াও বেক্সিমকো ফার্মা সম্প্রতি আরেক চমক দেখিয়েছে। ফ্রান্সভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি সানোফি এভেনটিজ বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ শেয়ার কিনে নিয়েছে বেক্সিমকো ফার্মা। এতে খরচ হবে বাংলাদেশি টাকায় চারশ কোটি টাকা। প্রতিটি শেয়ারের দাম হয়েছে দুই হাজার ৪৭ টাকা।
বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতি বিনিয়োগকারীদের এই আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রোকারেজ হাউজ মালিকের সংগঠন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেন অনেকটা বিনিয়োগকারীদের আবেগের ওপর নির্ভর করে। যখন যে কোম্পানির শেয়ার বেশি বাই-সেল হয় বিনিয়োগকারীরা সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে। কোনো ঝুঁকি বিবেচনা করে না।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে যারা ডে-ট্রেডিং করে তারা এক ধরনের চিন্তা করে, আবার যারা লংকাবাংলায় বিনিয়োগ করছে তাদের চিন্তা ভিন্ন। তবে এখানে দেখতে হবে লেনদেনের ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স মানা হচ্ছে কি না।’