টানা চাঙ্গাভাব শেষে পুঁজিবাজারে হঠাৎ স্থবিরতা। টানা ১০ কার্যদিবস গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা লেনদেন দেখলেও চলতি সপ্তাহে ধারাবাহিকভাবেই কমছে লেনদেন।
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ২১৩ কোটি টাকা, যা গত ২২ ডিসেম্বরের পর সবচেয়ে কম।
বুধবারের তুলনায় লেনদেন কমেছে ২০৩ কোটি টাকা বা প্রায় ১৫ শতাংশ।
২২ ডিসেম্বর লেনদেন ছিল ৯৭৫ কোটি টাকা। এরপর দুই হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে পাঁচ দিন। গত সপ্তাহে টানা তিনদিন লেনদেন হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি।
গত চার কার্যদিবস ধরেই পুঁজিবাজারে লেনদেন কমার এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ও লেনদেনের অবস্থান
লেনদেনের এমন ধীরগতি সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুঁজিবাজার ভালো হচ্ছে এটা পুরানো খবর। এখন দেখতে হবে এই ভালো কতটা দীর্ঘমেয়াদী হয়, যা নির্ভর করবে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিভিন্ন পদক্ষেপের উপর।’
তিনি বলেন, ‘লেনদেন বাড়বে কমবে এটা পুঁজিবাজারের নিয়মিত ঘটনা। এর মধ্যেও পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকাদের আস্থা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যক্তিকেন্দ্রীক কারসাজিকারীদেরও শাস্তির আওতায় আনছে, এটা পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও বাড়াবে।’
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেশ কিছু সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজার গত ডিসেম্বর থেকেই চাঙ্গা। এই সময়ে বাজারে সূচক বেড়েছে এক হাজার আটশ পয়েন্টের বেশি।
লেনদেনে ধীরগতি দেখা গেলেও বাজারে সূচকের পতন হয়নি। বরং আগের দিনের তুলনায় আট পয়েন্ট বেড়ে এখন সূচকের অবস্থান পাঁচ হাজার ৩৬ পয়েন্ট।
গত প্রায় এক মাস ধরে আগ্রহের তুঙ্গে থাকা রবি ও বেক্সিমকোর শেয়ার এদিনও লেনদেন হয়েছে সর্বাধিক পরিমাণে।
এর মধ্যে রবির দাম এক টাকা ৪০ পয়সা কমলেও বেক্সিমকোর দাম বেড়েছে ৬০ পয়সা।
খাতওয়ারী হিসাবে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি কমেছে বিমা খাতে। এই খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে ৪২টি।
বাজার মূলধনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ব্যাংক খাতে বিনিয়োগকারীরা যে ফিরতে শুরু করেছে, সেটি দেখা গেছে বৃহস্পতিবারও। তালিকাভুক্ত ৩০টি কোম্পানির মধ্যে দর হারিয়েছে দুটি কোম্পানি, অপরিবর্তিত ছয়টি, বাকি ২২টিরই দর বেড়েছে, যদিও দর বৃদ্ধির হার খুবই কম।
পরিসংখ্যানে লেনদেন
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসইর তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বৃহস্পতিবার দাম বেড়েছে ১৩২টির, কমেছে ১৪৩টির। আর পাল্টায়নি ৮৫টির।
ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৮ দশমিক ৬১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৮৩৬ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ৪ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৪ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক দশমিক ৯৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২০৮ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২১ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া ২৫৬টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৯টির, কমেছে ১১২টির ও দর পাল্টায়নি ৫৫টির। লেনদেন হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
দর বেড়েছে কমেছে
বরাবরের মতো লেনদেনের শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর রবি। এদিন কোম্পানিটির দুই কোটি ৪২ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকায়।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার এক কোটি ৪০ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১৮ কোটি টাকায়।
বেক্সিমকো ফার্মার ৪১ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি টাকায়। তারপরই উঠে এসেছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের কোম্পানি যথাক্রমে সামিট পাওয়ার ও জিবিবি পাওয়ার।
দর বাড়ার তালিকায় শীর্ষে থাকা এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ দর বেড়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল সিএপিএম আইবিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড, যার দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।
ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ারের দর ৯ দশমিক ১৪ শতাংশ বেড়ে ছিল তৃতীয় স্থান। এছাড়া জিবিবি পাওয়ার, বিডি ফিন্যান্স ছিল তালিকায়।
দরপতনে শীর্ষ ২০ কোম্পানির সবগুলোই বিমা খাতের। সবচেয়ে বেশি কমেছে ইস্টার্ন, প্যারামাউন্ট, ঢাকা, পিপলস, মার্কেন্টাইল, নর্দার্ন, সিটি, গ্লোবাল, সিটি ও সোনারবাংলা ইনস্যুরেন্সের দর।