পুঁজিবাজার বিষয়ক একটি পোর্টালে বিমা খাত নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশের পর এই খাতের শেয়ার নিয়ে হুলস্থুল। এক দিনে দাম যত বাড়া সম্ভব, অধিকাংশ শেয়ারের দামই বাড়ল তত টুকুই। তবে টিকল না ঊর্ধ্বগতি, পরের দিনেই বেশিরভাগ শেয়ারের দরপতন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে করল সতর্ক। বলল, জেনে বুঝে শেয়ার কেনা উচিত।
সোমবার প্রকাশিক সংবাদে বলা হয়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানির মূলধনের ৬০ শতাংশ পরিচালকদের সংরক্ষণ করতে হবে এক মাসের মধ্যে। আর সাধারণ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ৪০ কোটি আর জীবন বিমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন হতে হবে ৩০ কোটি।
এটি নতুন কোনো নির্দেশনা নয়। তবে বিমা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি এক চিঠিতে এক মাসের মধ্যে দুই শর্ত পূরণের নির্দেশ দিয়েছে।
এই খবরে মঙ্গলবার বাজারে তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশের মতো বেড়ে যায়। এক দিনে এর চেয়ে বেশি শেয়ারদর বাড়া সম্ভব নয়। তবে বুধবার দর হারায় ৩১টি কোম্পানি। দর ধরে রাখে পাঁচটি।
আগের দিন বিমা খাতের প্রায় সব শেয়ারের দর ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও বুধবার দাম পড়ে যায় বেশিরভাগ কোম্পানির
এদিন রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকায় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ-ডিএসই ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন ডিএসই চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘বিমা সম্পর্কে আইডিআরএ যে নির্দেশনা দিয়েছে তার ব্যাখ্যা ওই সংস্থা দিতে পারবে। তবে বিনিয়োগকারীদের সব কিছুর ব্যাখ্যা জেনে শেয়ার কেনা উচিত।’
ডিএসইর সাবেক চেয়ারম্যান রকিবুর রহমান বিনিয়োগ শিক্ষার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা না জেনে, না বুঝে পুঁজিবাজারে আসবেন না। আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে কেউ দায়িত্ব নেবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভয় হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ৯০ শতাংশ শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে, যেখানে উন্নত দেশের কোম্পানির শেয়ারের সিংহভাগ থাকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে।’
এই মত বিনিময়ে উঠে আসে ডিএসই সফটওয়্যার জটিলতা প্রসঙ্গ। শেয়ার লেনদেন বেড়ে গেলে সফটওয়্যার চাপ নিতে পারছে না।
এ বিষয়ে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, ‘ডিএসইর কোনো ডিজাস্টার রিকভারি সাইট নেই। সফটওয়্যারের যে সমস্যা সেটা আমাদের সামনে এসেছে মাস তিনেক আগে। এর প্রেক্ষিতে নিকুঞ্জে কার্যক্রম চলছে। আগামী জুনের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’
বুধবার বিমা খাতের শেয়ারের লেনদেনের চিত্র (প্রথম তালিকা উপরে)
তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য প্রযুক্তিতে এখনও কিছুটা পিছিয়ে আছি সত্য। তবে চীনের সঙ্গে আমরা প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ করছি।
‘বর্তমানে ডিএসই নাসডাকের (যুক্তরাষ্ট্রের স্টক এক্সচেঞ্জ) সঙ্গে সফটওয়্যারের চুক্তি রয়েছে। এ চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালে। তারপর আমরা চীনের থেকে নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসব, তখন আর এ সমস্যা হবে না।’
ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আগে শেয়ারের অর্ডার আসতো মার্কেট লট হিসাবে। এখন একটি হিসেবে আসে। ফলে দিনে প্রচুর অর্ডার আসে। প্রযুক্তি খাতের সমস্যার জন্য এটি একটি বড় কারণ।
‘আর চাইলেই একটি সফটওয়্যার থেকে আরেকটি সফটওয়্যারে যাওয়া যায় না। তবে আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা আরও ভালো সেবা দিতে পারব।’
সাম্প্রতিক উত্থান নিয়ে আশাবাদ
সংস্থাটির চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সহায়তা, বিএসইসির সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের কারণে সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে, যা পুঁজিবাজারে সুবাতাস নিয়ে এসেছে।’
শিগগির ডিএসই ভবন একটি অর্থনৈতিক হাবে পরিণত হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
উধ্বর্মুখি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের কোনো ঝুঁকি আছে কি না- এমন প্রশ্নে ডিএসই পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে।’
ডিএসই আরেক পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে আমরা বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোন নিয়ে পুঁজিবাজারে না আসতে বলেছিলাম। কিন্ত তখন তা মানা হয়নি। তবে সে সময়ের তুলনায় এখন পুঁজিবাজার অনেক শক্তিশালী।’
তিনি বলেন, লেনদেনযোগ্য শেয়ার সবচেয়ে বেশি ব্যাংকের। প্রায় ৭০ শতাংশ ব্যাংকের শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হাতে। এক সময় ব্যাংকগুলো বেশি বেশি বোনাস দিয়ে পরিচালকরা টাকা নিয়ে যেত। এখন তারা ১০ টাকার শেয়ার কেনেন না। তাই এ খাতে সুশাসন খুবই জরুরি।’
এ সময় ডিএসই পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান সহ প্রতিষ্ঠানটির স্বাধীন পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এক্সচেঞ্জ ও কমিশনের মধ্যে সম্পর্ক এখন খুবই ভালো। ৯৬ আর দেখতে হবে না।’