বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কী মধু চিনির শেয়ারে

  •    
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ০৮:৪৭

এক প্রান্তিকেই জিলবাংলায় ১০ টাকার শেয়ারে ১৯ টাকা লোকসান, আর শ্যামপুরে লোকসান ২৫ টাকা। দুই কোম্পানির শেয়ার প্রতি দায় যথাক্রমে ৭০১ ও ৯৩৯ টাকা। কিন্তু শেয়ার দর আকাশচুম্বী। এর কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পান না কোম্পানির কর্মকর্তারাই।

পুঁজিবাজারে বড় ধরনের লোকসানে থাকা দুটি সরকারি চিনি কোম্পানির শেয়ার দর প্রায়শই বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। কখনও লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানিটি অদূর ভবিষ্যতে মুনাফায় ফিরবে, এমন ইঙ্গিতও নেই। তার পরেও আকাশচুম্বি দর নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়।

কোম্পানি দুটির নাম জিলবাংলা ও শ্যামপুর সুগার। শেয়ার দর এতই বেশি যে বিশ্বাস হচ্ছে না কোম্পানি দুটির সচিবের।

এর মধ্যে জিলবাংলার ১০ টাকার শেয়ার দর এখন ১৪৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর শ্যামপুর সুগারের দাম ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা।

কোম্পানি দুটির আর্থিক হিসাব বিবেচনায় আনলে এই দাম অবিশ্বাস্য ঠেকে। কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, এই দাম অতিরিক্ত, পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলছেন, এটা স্পষ্টত কারসাজি।

বছরের প্রথম প্রান্তিকে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জিলবাংলা সুগার ১০ টাকার শেয়ারে লোকসান দিয়েছে ১৯ টাকা ৩৬ পয়সা।

১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি কখনও মুনাফা দিতে পারেনি। ধারাবাহিক লোকসানে থাকা কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদ তো নেইই, উল্টো দায় আছে ৭০১ টাকা ৪৬ পয়সা।

এখন যে দর সেটিও এর সর্বোচ্চ নয়। গত সেপ্টেম্বর ২২৪ টাকা ৯০ পয়সা দাম উঠেছিল।

কোম্পানি সচিব লাইলা আক্তার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। যোগাযোগ করতে হবে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে।’

মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফ আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শেয়ারের দাম অনেক বেশি। এ জন্য প্রায় ডিএসই থেকে আমাদের তলব করা হয়। আমরা বলি, এতে আমাদের কোনো হাত নেই। এটা কিছু ব্রোকারের কারসাজি।’

তিনি বলেন, ‘জিল বাংলা সুগার মিলের বর্তমানে ব্যাংক ঋণ ২০২ কোটি টাকা, এর বিপরীতে ৩২ কোটি টাকা সুদ প্রদান করতে হয়। আমাদের যে চিনি তৈরি করা হয় তার প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ পরে সুদ সহ ১৭৯ টাকা আর সুদ বাদে ১১৬ টাকা। কিন্ত আমাদের তা বিক্রি করতে হয় ৬০ টাকায়।’

মিলে বর্তমানে ৩৪ কার্যদিবস ধরে আখ মাড়াই চলছে। কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদ পরিশোধ, পুরাতন যন্ত্রপাতি দিয়ে চিনি তৈরি করে লাভ হবে কি না সন্দেহ।

তবে এই মিলে প্রচুর চিটাগুড় তৈরি হয়, যা দিয়ে চিনির পাশাপাশি পণ্যের বৈচিত্র্য আনা গেলে হয়তো লোকসান কমানো সম্ভব হবে, তবে লাভে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় এই কর্মকর্তার।

অন্যদিকে ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত শ্যামপুর সুগারে উৎপাদন বর্তমানে বন্ধ। সরকার এই কারখানাটি আধুনিকায়ন করতে যাচ্ছে।

এই কোম্পানিটি চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিতে লোকসান দিয়েছে ২৫ টাকা ১৫ পয়সা। শেয়ার প্রতি দায় ৯৩৯ টাকা ৩৭ পয়সা।

গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর এই কোম্পানির শেয়ার দর উঠেছিল ৮১ টাকায়।

খাদ্য ও আনুষাঙ্গিক খাতের এই কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সরকারের হাতে। দশমিক ৬৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে প্রতিষ্ঠানের ৪৮ দশমিক ৩১ শতাংশ শেয়ার।

শ্যামপুর সুগার মিলে চলছে সংস্কার কাজ। এখন আখ মাড়াই বন্ধ। তবুও কমছে না শেয়ারের দাম। ছবি: সংগৃহীত

কোম্পানির সচিব ফাতেমা আক্তার শেখা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মিলের সম্পর্কে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না। তবে বর্তমানে মিলে আখ মাড়াই হচ্ছে না, তা অন্য মিলে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে কোন মিলে স্থানান্তর করা হয়েছে তাও জানি না। সেটা মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলতে পারবেন।’

যোগাযোগ করা হলে শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিলীপ কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে মিলের উৎপাদন কার্যক্রম চলছে না। আমাদের এখানে যে আখ মাড়াই হতো তা জয়পুরহাট চিনি কলে পাঠানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মিলের সব কিছুই পুরাতন। বর্তমানে মিলের ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৫০২ কোটি টাকা, সুদ দিতে হচ্ছে ২৯ কোটি টাকা। মিলের লোকসানের পরিমাণ ৩৩ কোটি টাকা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের বছর শেষে কিছুই দেয়া হয় না। লোকসানী কোম্পানি কীভাবে লভ্যাংশ দেবে?- উল্টো প্রশ্ন করেন তিনি।

লোকসানের বোঝা কমাতে গেল ডিসেম্বরে সরকারি ছয় চিনিকল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি)। এর একটি শ্যামপুর সুগার মিল।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেড ক্যাটাগরির কোম্পানির মধ্যে জিল বাংলা নিয়ে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয়ে থাকে। এর শেয়ারের দামও অন্য যে কোনো ভালো কোম্পানির শেয়ারের তুলনায় বেশি। এটা কীভাবে সম্ভব? কোম্পানির কিছু নেই তারপরও শেয়ারের দাম বাড়ে। এখানে আরো নজরদারির প্রয়োজন।’

‘পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ কারখানা, লভ্যাংশ না দেয়া তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো আলাদা মার্কেটে নিয়ে যাওয়া উচিত।’

পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এত দাম কেন জানি না। তবে সরকারি কোম্পানি হওয়ায় মূলত জিলবাংলা সুগার মিলের শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি। একই সঙ্গে আছে শ্যামপুর সুগার মিল।’

এ বিভাগের আরো খবর