চাল রপ্তানিতে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হয়েও এবার মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখছে ভিয়েতনাম। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত থেকে চাল আমদানি করতে যাচ্ছে তারা।
বাংলাদেশের মতো ভিয়েতনামেও তরতর করে বাড়ছে চালের দাম। গেল নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে দাম। ফলে চাল আমদানি করতেই হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম ধান-চালের আধার বলে খ্যাত দেশটিকে।আরও পড়ুন: শর্তে চাল আমদানির অনুমতি ১০ প্রতিষ্ঠানকে
ভিয়েতমানের এই চাল কেনার বিষয়টি এশিয়ায় এবার এই শস্য যোগানের সংকটকেই তুলে ধরছে। এর ফলে ২০২১ সালে চালের দাম আরও বাড়তে পারে। এতে বছরের পর বছর ধরে যেসব ক্রেতা থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে চাল কিনছে, তারা ভারতমুখী হতে পারে বলে জোর ধারণা।
রয়টার্সের এক বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৭০ হাজার টন ১০০ ভাগ খুদি চাল ভিয়েতনামে রপ্তানি করবে। প্রতি টন চালের দাম প্রায় ৩১০ ডলার।
এ বিষয়ে ভারতের চাল রপ্তানিকারকদের সমিতির সভাপতি বি ভি রাও বলেন, ‘প্রথমবারের মতো আমরা ভিয়েতনামে চাল রপ্তানি করছি। ভারতীয় চাল খুব আকর্ষণীয়। দামেও অনেক পার্থক্য। এসব কারণেই সেখানে চাল রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে।’
ভিয়েতনামে চালের দাম নয় বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকায় দেশটি থেকে চাল আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ফিলিপাইন।
মাত্র ৫ শতাংশ খুদযুক্ত ভিয়েতনামের চাল আন্তর্জাতিক বাজারে আরআই-ভিএনবিকেএন৫-পি১ নামে পরিচিত। এ মানের প্রতি টন চালের মূল্য ৫০০ ডলার থেকে ৫০৫ ডলার।
চালের জোগান কমে যাওয়ায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে। খাদ্য সংকটে পড়তে পারে আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চল। সেখানকার দেশগুলোতে জনসংখ্যা কিছুটা বাড়ায় বাড়ছে খাদ্যের চাহিদাও।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয় কমায় এবং সরবরাহ শেকল বিঘ্নিত হওয়ায় বাড়ছে ক্ষুধা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বৈশ্বিক মহামারির মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভিয়েতনাম ও অন্যান্য দেশগুলো চালের মজুত করছে।
ভিয়েতনাম গত বছর জানায়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা ২ লাখ ৭০ হাজার টন চাল মজুত করবে।
দেশটির ব্যবসায়ীরা কলছে, ২০১৬-২০১৭ সাল থেকেই সরকারি গুদামগুলোতে ভারতীয় চাল মজুত করা আছে। দামে সস্তা এসব চাল নিম্ন মানের।
হো চি মিন সিটির এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘এসব চালের মান খুব খারাপ, মানুষের সরাসরি খাওয়ার মতো নয়। এ চাল কেবল প্রাণীদের খাবার ও বিয়ার উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়।’
ভিয়েতনাম সরকারের পরিসংখ্যান দপ্তরের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে দেশটিতে ধান উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় এক দশমিক ৮৫ শতাংশ কমে হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ টন। এ ধান থেকে উৎপাদিত চালের পরিমাণ প্রায় ২ কোটি সাড়ে ১৩ লাখ টন।
২০২০ সালে এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, দেশটি থেকে চাল রপ্তানি কমতে পারে ৩৫ লাখ থেকে ৬১ লাখ টন।
চালের দাম উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে বাংলাদেশেও। গেল বছর দেশটির উত্তরাঞ্চলে তিন দফার বন্যার ফলে আউশ ও আমন ধানের আশানুরূপ উৎপাদন আসেনি। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে এরই মধ্যে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে নেপাল ও ভারতে। নেপালে উৎপাদন বাড়লেও নিজেদের চালের চাহিদা পুরোপুরি মিটবে না।
এশিয়া ও আফ্রিকান দেশগুলোতে চাহিদা বাড়ায় ভারতীয় চালের দাম বাড়ছে।আরও পড়ুন: নেপালে ধানের বাম্পার
বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল আমদানিকারক দেশ চীন। থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে চাল কিনে থাকে তারা। কিন্তু দেশগুলোতে চালের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডিসেম্বরে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে চাল আমদানি করে তারা।
ভারতীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেবে দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ২০২০ সালে ভারত এক কোটি ৪০ লাখ টন চাল রপ্তানি করেছে।