শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ার (স্টক ডিভিডেন্ট) না দিয়ে নগদ (ক্যাশ ডিভিডেন্ড) পেতে আগ্রহী বিনিয়োগককারীরা। কোম্পানিগুলো দিচ্ছেও তাই।
করোনা মহামারিতে পুঁজিবাজারে বন্ধ থাকায় বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা পোষাতে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলেছেন বাজার সংশ্লিষ্টরাও।
কোম্পানিগুলোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নভেম্বরের ২৯ থেকে ডিসেম্বরের ২০ পর্যন্ত রেকর্ড ডেট শেষ হওয়া ৩৪টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র একটি তাদের বিনিয়োগকারীদের স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে।
২৮টি কোম্পানি তাদের বিনিয়োগাকারীদের নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এর মধ্যে ৯টি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে। পাঁচটি কোম্পানি কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।
কোম্পানি থেকে অর্থবছর শেষে বিনিয়োগকারীদের যখন শেয়ারের বিপরীতে শেয়ার দেয়া হয় তখন সেটাকে বলা হয় স্টক ডিভিডেন্ড। আর শেয়ারের বিপরীতে যখন নগদ অর্থ দেয়া হয় সেটাকে বলা হয় ক্যাশ ডিভিডেন্ড।
লভ্যাংশ প্রাপ্তির জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের পোর্টফোলিওতে উক্ত কোম্পানির শেয়ার থাকতে হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে সে তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সেটাকেই রেকর্ড ডেট বলা হয়। বিনিয়োগকারী রেকর্ড ডেটের একদিন আগেও যদি সেই কোম্পানির শেয়ার কিনে তাহলেও তিনি লভ্যাংশ পাবেন।
গত নভেম্বরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক হিসাব নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা শিথিল করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
তখন জানানো হয়, অন্যান্য সিকিউরিটিজ আইন মেনে কোম্পানিগুলো তাদের সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুঞ্জীভূত মুনাফা থাকলে তা হতে অন্তর্বর্তীকালীন নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা এবং বিতরণ করতে পারবে।
এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রান্তিক আর্থিক হিসাব বিবরণী নিরীক্ষার বাধ্যবাধকতা নেই। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাসে (এক প্রান্তিক) হিসাবে আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করতে হয়। এ ছাড়া ছয় মাস ও নয় মাসের হিসাবও প্রকাশ করতে হয়।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারী মোজাম্মেল হক নিউজবাংলাকে বলেন, জুন মাসে যেসব কোম্পানির অর্থবছর শেষ হয়েছে তারাই লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কোম্পানিগুলো নগদ লভ্যাংশ দিচ্ছে।।
তিনি বলেন, করোনার সময় পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা এখন নগদ লভ্যাংশের কারণে পূরণ হচ্ছে।
তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, উল্লেখিত সময়ে সবচেয়ে বেশি নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্টিবিউশন, ১৪৫ শতাংশ। পাশাপাশি ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছেন। রেকর্ড ডেটের আগে যাদের পোর্টফোলিওতে এই কোম্পানির শেয়ার আছে সেসব বিনিয়োগকারীরা শেয়ার প্রতি পাবেন সাড়ে ১৪ টাকা। প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে পাবেন ১০টি শেয়ার।
ওষুধ ও রসায়ন খাতের এসিআই লিমিটেডের রেকর্ড ডেট শেষ হয়েছে গেল ১ ডিসেম্বর। এই কোম্পানিও তাদের বিনিয়োগকারীদের জন্য ৮০ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, করোনার সময় পুঁজিবাজার বন্ধ থাকায় লেনদেন হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এখন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উচিত হবে প্রয়োজনে তাদের উদ্যোক্তা পরিচালকদের লভ্যাংশ না নিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মুনাফা নগদ আকারে বণ্টন করে দেয়া।
তিনি বলেন, স্টক লভ্যাংশ দিলে মূলত কোম্পানির পরিচালকরাই বেশি উপকৃত হয়। নির্দিষ্ট সময় পর তা বিক্রি করে তারাই মুনাফা নিয়ে নেন। করোনার কারণে কোম্পানিগুলোর উচিত বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করা।
এ সময়ে শুধু নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে এস্কয়্যার নিট, ফার্মা এইড, ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, জিবিবি পাওয়ার, মালেক স্পিনিং, এমআই সিমেন্ট, আরএসআরএম স্টিল, সোনালী আশঁ, হাক্কানী পাল্প, এসিআই ফরমুলেশন, সিলকো ফার্মাসিউটিক্যাল, সিলভা ফার্মা, ফার্মাসিউটিক্যাল, প্রাইম টেক্স, এএমসিএল (প্রাণ), বসুন্ধরা পেপার মিল, সিনো বাংলা, ড্যাফোডিল কম্পিউটার, ওরিয়ান ফার্মা।
নগদ ও স্টক উভয় লভ্যাংশ ঘোষণা করা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- ডমিনেজ স্টিল বিল্ডিং সিস্টেমস, আরডিফুড, ফরচুন, এসএসস্টিল, আনোয়ার গ্যালবানাইজিং, শাইনপুকুর সিরামিক লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
শুধু স্টক ডিভিডেন্ড দিয়েছে ড্রাগন সোয়েটার অ্যান্ড স্পিনিং।
লভ্যাংশ দিতে না পারা কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ (বিডি) সার্ভিস , শমরিতা, ফ্যামিলি ট্যাক্স, সমতা লেদার কমপ্লেক্স ও ইস্টার্ন ক্যাবল।